Posts

Showing posts from November, 2009

কয়েকছত্র প্রান্তিকপত্র

০ প্রান্তিক নিয়ে এতো লেখা হয়! ঘুরে ফিরে এই জায়গাটার কথা আসে। আসে স্বপনের চায়ের দোকানের কথা। সুনামগঞ্জের উদার হাওর আমার জীবনে যেমন জড়িয়ে আছে জননীর ওমের মতো, প্রান্তিকও বুঝি তেমনটাই! বালক বয়েসে মেলায় যেতাম। কৈশোরে গেলাম নাটকের ঘরে। স্কুলঘরের মতো টিনের চালের ঘরটা কোন ফাঁকে এমন মায়ায় জড়ালো? কোন ফাঁকে মিশে গেলো এমন জীবনের গল্পে? সেভাবে আমার সাথে প্রান্তিকের সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিলো না। নিতান্তই এক কর্মী হিসাবে আমি সেখানে ছিলাম। কোনো গরম গরম ভাবনা ছিলো না মাথায়। দেশ সমাজ পাল্টে দেয়ার ধারণা নিয়ে সেখানে যাইনি। মঞ্চে উঠে কাঁপিয়ে দেবো, ফাটিয়ে দেবো তেমনটাও মাথায় ছিলো না। সম্ভবত জেনেটিক কারণে গিয়েছিলাম সেখানে! (এই জিন জিনিসটা কি???) বাপ এইসব করতেন বলে শুনেছি। ভাই আমার ঠিক আগে আগে সেখানে গিয়েছে। এই জিন ভূত ছাড়া আর কি ছিলো তবে? সম্ভবত আড্ডা। সম্ভবত মানুষের টান। প্রান্তিকের ভাঙা টিনের চালের নিচে এ নাটক করছে, তো ও করছে আবৃত্তি, আরেকজন হয়তো গান তুলছে গলায়... কী সরগরম সেখানে। তুমি যাও, মিশে যাও। মিশে যাও আনন্দ নগরে। রাস্তার একদিকে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল, আরেকদিকে প্রান্তিক। প্রথম-প্

বড় লোভ হে ...

বাবার সাথে উপজেলা সদরে ঘোরার কালে আমি নিতান্তই বালক ছিলাম। থানার ভেতরে ছিলো সেসব বাড়ি। সফেদ পাঞ্জাবী পরা পোষ্টমাস্টার বাবার ছেলে আমি অনেকবার থানার বাবুদের বাড়ির রঙিন উৎসব দেখেছি। দাদা কিংবা মা বলেছে, এবার নভেম্বরে আমাদের বাড়িতেও এমন উৎসব হবে। আমি খুশি হয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই কোন না কোন ঝামেলায় ভেসে গেছে সেইসব নভেম্বর। পরের নভেম্বরের জন্যে আবার আমি মন বেঁধেছি। মফস্বলি মধ্যবিত্তদের অনেক স্বপ্ন থাকে, তারচেয়ে বেশি থাকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। প্রাপ্তিযোগের চে বেশি হয় অপ্রাপ্তির ফিরিস্থি। নিতান্তই স্মৃতিভুক এক মানুষ। ভেতরে ভেতরে পুষে রাখি এক প্রত্ন মন। কবেকার কোন বেলাদি, প্রতিভোরে আমারে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিরাতে মহাদেব এসে স্বপনে গল্প বলে। নলজুর নদীর জন্যে তার মন কেমন করে, আমারেও সে সেই বেদনায় ভাসায়, আমি নলজুর থেকে পাল তুলে পাড়ি দেই কালনীর ঢেউয়ে। নলুয়ার হাওয়ের প্রবল আফাল উঠে আমার বুকে... হাতের তালুর মতই পরিচিত আমার শহর সিলেট। এই শহর আমারে আগলে রাখে, এই শহর আমারে পোড়ায়, এই শহর আমারে অশ্লিল করে। তবু এই শহরেরই পথে পথে আমি ঘুরি, এই শহরের সব মোড়ে, সব সড়কে ছড়িয়ে আছে আমার তরু

সপ্তাহান্তের কোমল ক্লাসরুম

তুমি রুটিন বেঁধে দিয়েছো। স্কুলের ধর্ম শিক্ষা ক্লাশের মতো। সপ্তাহের ঠিক একটা দিন, আমরা একটা ক্লাশে ইচ্ছেমতো হৈ হৈ করতে পারতাম, নিজেদের মতো গল্প হতো। তুমিও ঠিক সপ্তাহান্তের এক কোমল ক্লাশরুম, যেমন ইচ্ছে তেমন। এইসব নিয়ম, কথার মারপ্যাঁচে ফেলে গিলিয়ে দেয়া সময় আমারে বিষণ্ণ করে, এ বিরহ বড়ো বেশি বুকে বাজে আমাকে উদভ্রান্ত করে। মগ্ন কিশোরের মতো আমি রুটিনের দিকে তাকিয়ে থাকি, হিসেব করি, আয়ুষ্কাল গুনি, দেখি মাঝখানের ঘন্টাগুলো জীবন থেকে উধাও হয়ে যায় তুমি কথা বল্লেই মনে হয় বেঁচে আছি, নিরবতায় নেমে আসে মৃত্যুর শীতলতা।

ভ্রমণ (আনন্দময়) হয়েছে (শেষ)

Image
১০. সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয় হয় এমন একটা সময়ে পৌঁছে গেলাম হিরণ পয়েন্টে। বিখ্যাত স্পট। বনবিভাগের বিশাল অফিস সেখানে। আছে নৌ-বাহিনী আর মংলা বন্দরের দুটো আস্তানা। আগেরবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা সুন্দরবন নিয়ে কি একটা প্রজেক্ট আর রামসার এরিয়া ঘোষণার জন্যে সেখানে গিয়েছিলেন। বিশাল একটা ফলক লটকে আছে সেখানে। আছে এই এলাকার একমাত্র মিঠাপনির পুকুর। জেটিতে বোট বেঁধে আমাদেরকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। যথেষ্ঠ মানুষের আনাগোনা সেখানে। তবু হরিণ দেখতে পেলাম। ঘুরছে রাতের আলোতে। শুনলাম বাঘও আছে আশেপাশে। বনকর্তা জানালেন একাধিক বাঘ নাকি সেখানে আছে। প্রচুর খাবার পাওয়া যায় বলেই হয়তো এটা ঘটেছে। কারণ এর আগে শুনেছি একটা নির্দিষ্ট এলাকায় কয়েকটা বাঘ সাধারণত থাকে না। খাবার পানির পুকুর পাড়ে বসে আছি। শান বাঁধানো ঘাট। বনবিভাগের এক অফিসার গল্প করছেন। নানান কিসিমের গল্প। এইবার আর মুস্তাফিজ ভাইকে বলতে হলো না। আমি নিজেই বুঝে গেলাম, চাপা... সবটা না হলেও অনেকটাই চাপা। (জেনারেল স্যার, আমি কি কিছু শিখলাম? ) টানা চারদিন কি দুদিনও আমি মাছ খেয়েছি কোন জনমে, এটা কেউ বল্লে, আমার মা বলবেন, আপনে ভুল করতেছেন। সে

ভ্রমণ (আনন্দময়) হয়েছে

Image
১. আমাদের শহরে, নিজেদের লোক যারা আছে, এরা কথায় কথায় এই দেশ সেই দেশ মারে। আমরা দু ভাই। দাদাভাই দেশ শেষ করেছে তাও দেড় যুগ আগে। এখন ইউরোপ শেষ করার ধান্দায় আছে। আর আমার পাসপোর্টই নেই। বালক বেলায় আমি অবাক হয়ে দেখতাম, দাদা ক'দিন পর পর এখানে যাচ্ছে, সেখানে যাচ্ছে। গাট্টি-বোচকা নিয়ে চলে যাচ্ছে জঙ্গলে থাকবে বলে। আমি লোভাতুর হয়েছি। কিন্তু কি এক মায়ার টানে ঘর ছাড়িনি। শহর ছাড়িনি। অথচ বছর দশেক আগেই আমার হয়ে গেছে স্লিপিং ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগসহ ভ্রমণের নানান জিনিসপাতি। দাদাভাই সেসব দেদারছে ব্যবহার করেছে। একবার হলো কি, সিলেট স্টেশনে এসে ঢাকার ট্রেন থামলো। আমি, দাদাভাই, আরিফ ভাই , রনি ভাই আর রাজু নামলাম ট্রেন থেকে। স্টেশনে নেমে দেখি বিরাট আয়োজন নিয়ে তাদের বন্ধুরা দাঁড়িয়ে। তাবু, লেপ-তোষক, ডেগ-ডেকচি। তারা ক্যাম্প করতে যাচ্ছে লাউয়াছড়া বা আরো কোন নির্জন জঙ্গলে। আমার বানর টুপি, মাফলার, স্লিপিং ব্যাগ মুহুর্তের মাঝে তিন বন্ধু ভাগ করে নিলো। তখনতো মোবাইল ছিলো না। দাদাভাই স্টেশন থেকে ফোন করলো বাসায়। জিজ্ঞেস করলো আমি বাসায় পৌঁছেছি কী না। আম্মা না বলাতে, বল্লেন, পৌঁছে যাবো। রাজু আর আমি এক