Posts

Showing posts from 2011

অপার্থিব জানালার খোঁজে

তখন আমাদের কেরানির জীবন। বাবা পোস্টমাস্টার। কিন্তু আদতে সেটা কেরানিরই চাকরী। ভাই ঢাকায় একটা হাউজিং কোম্পানিতে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ। আজকাল সব অফিসে সবাই এক্সিকিউটিভ হয়। গালভরা নাম সব। আদতে সবাই কেরানি। আমি নতুন চাকরীতে। পত্রিকার ডেস্কে বসি, তাও এক ধরনের কেরানিরই কাজ। বাপ ছেলে তিনজন যখন কেরানিরই চাকরী করি তখন সেটারে কেরনির জীবন বলাটাই উচিত। আব্বা শহর থেকে ১৫/১৬ কি. মি. দুরের একটা ছোট্ট পোস্ট অফিসে কাজ করেন তখন। চাকরীর শেষ ১৫ টা বছর তিনি শহরেই ছিলেন বেশিরভাগ সময়। মাঝখানে কিছুদিন বাইরের ছোট ছোট দুটি অফিসে কিছুদিন ছিলেন। বড় অফিসে যেতে চাইতেন না। কাজের চাপে হাপিয়ে উঠতেন। শহরের সবচে কাছের দুই ছোট অফিসে তাই থাকা। ছোট্ট একটা বাজারের অফিস। টিনশেড একটা বাড়ি। সাকুল্যে তিন জন স্টাফ সেখানে। অফিসের সামনের দিকটায় পাকা সড়ক। আর পেছনে রেল লাইন। সিলেটে আসা কিংবা সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো যখন ঝম ঝম শব্দে পাড়ি দিতো সেই বাজার, পুরনো বাড়িটা তখন যেনো কেঁপে উঠতো। আব্বা অফিস ছাড়া কিছু বুঝতেন না। ঝড়-বাদল, হরতাল কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারতো না। চাকরী জীবনের বেশিরভাগ সময় বাড়ি আর অ

গল্প সংক্রান্ত অভিমান

বাবা অসম্ভব মজা করে কথা বলে। যে শুনে সেই হাসে। হাসতে হাসতে পেট ফুলে যায়। আমাদের বাড়িতে যেই আসে সেই বলে, বাবার মতো মজার মানুষ কোনদিন সে দেখেনি। বাবা এতো চমৎকার সব কৌতুক জানে, মুখ এমন ভেংচি কাটতে পারে, না দেখলে না শুনলে কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না কিংবা বুঝতে পারবে না। বাবার অনেক রাগ, সেটা কিন্তু কেউ তেমনভাবে বুঝে না। আমরা বুঝি, বড় চাচা বুঝে। আমার এখন বাইশ বছর বয়েস, বন্ধু ছাড়ারই সাহস নেই, কিন্তু বাবা সেই বাইশ বছর বয়েসে ঘর ছেড়েছে, আর যায়নি। চাচার সাথে কক্ষনো কথা বলেনি। চাচা প্রতি বছর রুটিন করে দু'বার আমাদের দেখতে আসে, কান্নাকাটি করে, বাবা সেটা আমলেও নেয়না। বাবা আর কোনদিন বাড়ি যাবে না। কী তীব্র অভিমান! ছোটবেলা থেকে সবাই বলে আমি নাকি বাবার মতো। আসলেও তাই। বাবা মাত্র সাড়ে পাঁচ ফুটি একটা মানুষ। আমিও তাই। বাবা দেখতে মোটামতো, আমিও তাই। তবে লোকজন এসব কারনে আমাদের বাপ বেটার মিল খুজে না। তারা আমার মজা করে কথা বলার ক্ষমতাটার কথা বলে। আমি এটা ঠিক জানি না, বুঝি না বা সচেতনভাবেও করি না। এম্নিতেই আমার কথা কিরকম মজা মজা হয়ে যায়। এক দিক দিয়ে আমি বাবার চে এগিয়ে। শরীর দুলিয়ে, গল

শূন্যতার ঈদ যাপন

চাঁদের খবর নিতে হয় না। চাঁদ এসে নিজেই ঢুকে পড়ে মোবাইলে, ফেসবুকে, ই-মেইলে। ঈদ আসছে টের পাই তাই চাঁদ ওঠার অনেক আগে। তখনও রাস্তায়। আকাশটা যথেষ্ট ফরসা, তবু আজান শোনা যায়। ফোনে মেসেজ টোন শুনি, রিং টোন নেই। এই যে ইফতার হলো, রাস্তায় পড়ে আছি, তবু ফোনটা বাজে না। বাজবে না। আর বাজবে না। কখনই বাজবে না। সে তুমি রাত তিনটাতেই বাড়ি আসো, ইফতার পেরিয়ে যাক, তবু ফোন বাজবে না সেই পুরনো নাম্বার থেকে। এই হলো নিয়ম, এভাবেই সব পাল্টে যায়। কনফু একটা এস এম এস দিলো। ইংরেজী দুইটা অক্ষর সেখানে। ই এবং এম। ইহজনমে এমন কিপ্টামি সমৃদ্ধ শুভেচ্ছা আমি পাইনি। এটা শুভ বার্তার মাঝ প্রহরের কথা। তার আগে প্রথম এস এম এস টা আসলো রুমনের কাছ থেকে। আমরা এক সাথে এক অফিসে কাজ করতাম। আমাদের চে অনেক নিচের সারিতে ছিলো তার অবস্থান। সেই অফিসে আমার খুব কাছের লোকজন ছিলো। তারা আর এখন খোঁজ নেয় না। আমিও নেই না। শুধু রুমন নিয়ম করে আমাকে দেখতে আসে খুপড়িতে। এস এম এস পাঠায়। ভালোবাসা বড় বিচিত্র জিনিস। সিলেট শহরটা অলস। সন্ধ্যাতেই ঘুম জড়ো করে চোখে আর এগারোটা বাজার আগেই সব সুনশান করে দেয়। ব্যতিক্রম শুধু ঈদের সময়। রোজার শেষ দ

সন্তাপ ০১

সকাল সকালেই আসে রোজ, ঠিকমতো ঘড়িটা ঘুরছে পুরনো নিয়মে, এই মেঘ এই রোদ, এই ঝরে বৃষ্টি, সকলই নিয়মবদ্ধ এই ভুলে যাওয়া, এই দৈনন্দিনতা সেও নিয়ম, ব্যত্যয় ঘটে না কখনো, সবাই মানিয়ে নেয়, মেনে নিতে হয়... আমি বুঝিনা, আমি আসলেই বুঝি না শুধু রোজনামচার খাতা হাতড়ালে দেখি বিস্তর সাদা পাতা, বিরাট শূন্যতা

পুলিশ কি করলো? তারে বরখাস্ত করে কেনো?

পুলিশ তাদের গাড়ি থেকে একটা কিশোর অথবা তরুণকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, চিৎকার করে বল্ল এরে মেরে পিটাও, এ হলো ডাকাত। বীর বাংগালের সকল বীরত্ব জেগে উঠলো, সে পিটাতে শুরু করলো, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো, পেটাতে পেটাতে যখন বুঝলো কাজ শেষ, তখন ক্ষান্ত দিলো। পুলিশ সেই লাশ উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো। কি অসাধারণ দৃশ্য। টিভিতে এটি দেখানো হয়েছে, পত্রিকার অনলাই এডিশনে ভিডিও ক্লিপটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এবং এজন্য দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এক দারোগা আর দুই সিপাহীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাশাল্লাহ।

সন্তাপ

২/৭/১১ জীবন ছড়িয়ে আছে তোমার এখানে সেখানে জন্মমাত্রই পিতৃহীন, তারপর জননীও দিয়েছেন পাড়ি অন্যভূবণে মামা, চাচা, ভাই, কোথায় না আশ্রয় খুঁজেছ তুমি! তোমার স্মৃতিগুলো মুড়কির মতো ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। আর আজ সকল দুঃখবোধ জড়ো হলো এই একাকী বাড়িতে… পিতা আমার, চিরকালিন শিশু আমার এইবার তবে বিদায়, অথবা চীর বসবাস আমার বুকে, নিভৃতে… ২. তেষট্টি বছরের পিতৃশোক! কতটা ভার বুকে নিয়ে তুমি কাটালে জীবন তোমার? আব্বাগো, এতো দীর্ঘ দম আমার নাই। অত লম্বা সময় আমি কষ্ট পোষতে পারবো না আমারও চাই দীর্ঘ যতিচিণ্হ ৯/৭/১১ প্রথম ঘন্টায় হিসেবে মিলেছে গত ঘন্টার কণ্ঠস্বর দ্বিতীয় দিনে বলেছি গতকাল, এভাবে প্রতিদিন পূর্ববর্তি দিনকে টেনে এনে বলেছি আব্বা… অষ্টম দিবসে এসে আর গত বলতে পারি না বলতে হয় গত বৃহস্পতির আগের বৃহস্পতিবার! হায়, এত দ্রুত তুমি দুরে সরে যাও হায়, এত দ্রুত তুমি স্মৃতি হও! কল লিস্ট থেকে তোমর নামটা উধাও শেষবার দেখেছি ১৩৪ টা মিস্ড কল ৩২ টা কল আর ডায়াল লিস্টে কিছুই নেই! হু, কিছুই নেই, আমি তোমাকে ফোন করিনি ইদানিংকালে, কোনদিনই না মনে হয়, ঘন্টায় ঘন্টায় উল

আমাদের গল্প আর এ সংক্রান্ত বিষণ্নতা

মা শৈশবে খুব দুরন্ত ছিল। তার দুরন্তপনার নানান গল্প ছড়িয়ে আছে গ্রামে। নানিজীর মুখে সেসব শুনেছি আমরা। গ্রামের বড়রা গল্প করতো, মা নিজেও বলে। অন্যদের মুখে শোনার চেয়ে মায়ের নিজের বলাটা শুনতে বেশি ভালো লাগে। তার গল্প বলার এমন চমৎকার ভঙ্গি, এমন জমিয়ে গল্প করে, আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার শৈশব গিলতে থাকি। দম ফাটানো হাসি, রুমাঞ্চ কিংবা কান্নার গল্পগুলো। মা খুব বুদ্ধিমান, কোন গল্পটা শুনলে আমাদের মন খারাপ হয়, কোনটা শুনলে মজা পাই এটা বুঝতে পারে। তাই মজাদার সব গল্পই আমাদের বলে। আমার মা খুব মেধাবী। তার সাথে যারা পড়তো, এই এত্তোবছর পরেও আমাদেরকে দেখলে সেই কবেকার স্কুলের গল্প বলে। মায়ের অসম্ভব মেধার বয়ান শুনি তাদের কাছে। তখনকার বিজাতীয় জাতীয় সংগীত গ্রামের কোন শিশুই ভালো করে শিখতে পারতো না। মা নাকি সেটা মুখস্ত করে ফেলেছিলো। রোজ সকালে পতাকার সামনে দাড়িয়ে সেই গান গাইতো মা, আর তাতে গলা মেলাতো স্কুলের অন্যরা। নানাবাড়ি আয়তনে বিশাল। বাড়ির এ মাথা থেকে ও মাথা দেখা যায় না। ইচ্ছে করলে নানাজান একটা স্টেডিয়াম বানাতে পারবে। সেই বাড়িতে, মা-মামারা যখন ছোট তখন অনেক গরু ছিলো। হাস-মুরগ ভর্তি