Posts

Showing posts from 2009

কয়েক টুকরো দিন যাপন আর একটা আলোচনা

Image
ছোট শহরে থাকলে অনেক কিছুতেই সরাসরি অংশ গ্রহনের সুযোগ মিলে বা অনেক কিছুতেই জড়িয়ে পড়তে হয়। বুঝতে শেখার পর থেকে শহীদ মিনারে যাই। একটু বড়ো হয়ে রাতের প্রথম প্রহরে যেতে শুরু করেছি। তারপর কোন ফাঁকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সহায়তাকারী হয়ে গেলাম। হিসাব করলে দেখি সেও ১২ বছরের অধিক। গ্রুপের কাজ থাকে। সেসব নিয়ে বিস্তর দৌঁড়ঝাপ দিতে হয়। তাই কয়েকদিন ধরে সেভাবে নেটেই বসা হয় না। রাতে কিছু সময়ের জন্যে বসে শুধু চোখ বুলিয়ে যাওয়া। অনেক বিষয় আসে, সেসব নিয়ে পড়তে বা বলতে চাই, কিন্তু সময়ের কারণে তা কুলায় না। গত চার/ পাঁচদিনে সচলে এমন কয়েকটি বিষয় এসেছে, তা নিয়ে কথা বলার ছিলো। কিন্তু বলতে পারিনি। ষষ্ঠ পাণ্ডব লিখেছেন, ব্লগে বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা বা কারো কারো মতে লাফালাফি করা বিষয়ে। ব্লগ জীবনের শুরু থেকে এ বিষয়ে নসিহত পেয়ে আসছি। বন্ধুদেরকে, কমরেডদেরকে পেতে দেখেছি, আরো দেখবো, আরো উপদেশ পাবো সেটাই বলে রাখি। আমি মনে করি কান বন্ধ রেখে, নিজের কাজ করে যেতে হবে। মানে ব্লগে লাফাতে হবে। চিকা মারতে হবে, সময়মতো গদাম লাথিও মারতে হবে। শিকার করতে হবে। এবার আবা

কয়েকছত্র প্রান্তিকপত্র

০ প্রান্তিক নিয়ে এতো লেখা হয়! ঘুরে ফিরে এই জায়গাটার কথা আসে। আসে স্বপনের চায়ের দোকানের কথা। সুনামগঞ্জের উদার হাওর আমার জীবনে যেমন জড়িয়ে আছে জননীর ওমের মতো, প্রান্তিকও বুঝি তেমনটাই! বালক বয়েসে মেলায় যেতাম। কৈশোরে গেলাম নাটকের ঘরে। স্কুলঘরের মতো টিনের চালের ঘরটা কোন ফাঁকে এমন মায়ায় জড়ালো? কোন ফাঁকে মিশে গেলো এমন জীবনের গল্পে? সেভাবে আমার সাথে প্রান্তিকের সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিলো না। নিতান্তই এক কর্মী হিসাবে আমি সেখানে ছিলাম। কোনো গরম গরম ভাবনা ছিলো না মাথায়। দেশ সমাজ পাল্টে দেয়ার ধারণা নিয়ে সেখানে যাইনি। মঞ্চে উঠে কাঁপিয়ে দেবো, ফাটিয়ে দেবো তেমনটাও মাথায় ছিলো না। সম্ভবত জেনেটিক কারণে গিয়েছিলাম সেখানে! (এই জিন জিনিসটা কি???) বাপ এইসব করতেন বলে শুনেছি। ভাই আমার ঠিক আগে আগে সেখানে গিয়েছে। এই জিন ভূত ছাড়া আর কি ছিলো তবে? সম্ভবত আড্ডা। সম্ভবত মানুষের টান। প্রান্তিকের ভাঙা টিনের চালের নিচে এ নাটক করছে, তো ও করছে আবৃত্তি, আরেকজন হয়তো গান তুলছে গলায়... কী সরগরম সেখানে। তুমি যাও, মিশে যাও। মিশে যাও আনন্দ নগরে। রাস্তার একদিকে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল, আরেকদিকে প্রান্তিক। প্রথম-প্

বড় লোভ হে ...

বাবার সাথে উপজেলা সদরে ঘোরার কালে আমি নিতান্তই বালক ছিলাম। থানার ভেতরে ছিলো সেসব বাড়ি। সফেদ পাঞ্জাবী পরা পোষ্টমাস্টার বাবার ছেলে আমি অনেকবার থানার বাবুদের বাড়ির রঙিন উৎসব দেখেছি। দাদা কিংবা মা বলেছে, এবার নভেম্বরে আমাদের বাড়িতেও এমন উৎসব হবে। আমি খুশি হয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই কোন না কোন ঝামেলায় ভেসে গেছে সেইসব নভেম্বর। পরের নভেম্বরের জন্যে আবার আমি মন বেঁধেছি। মফস্বলি মধ্যবিত্তদের অনেক স্বপ্ন থাকে, তারচেয়ে বেশি থাকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। প্রাপ্তিযোগের চে বেশি হয় অপ্রাপ্তির ফিরিস্থি। নিতান্তই স্মৃতিভুক এক মানুষ। ভেতরে ভেতরে পুষে রাখি এক প্রত্ন মন। কবেকার কোন বেলাদি, প্রতিভোরে আমারে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। প্রতিরাতে মহাদেব এসে স্বপনে গল্প বলে। নলজুর নদীর জন্যে তার মন কেমন করে, আমারেও সে সেই বেদনায় ভাসায়, আমি নলজুর থেকে পাল তুলে পাড়ি দেই কালনীর ঢেউয়ে। নলুয়ার হাওয়ের প্রবল আফাল উঠে আমার বুকে... হাতের তালুর মতই পরিচিত আমার শহর সিলেট। এই শহর আমারে আগলে রাখে, এই শহর আমারে পোড়ায়, এই শহর আমারে অশ্লিল করে। তবু এই শহরেরই পথে পথে আমি ঘুরি, এই শহরের সব মোড়ে, সব সড়কে ছড়িয়ে আছে আমার তরু

সপ্তাহান্তের কোমল ক্লাসরুম

তুমি রুটিন বেঁধে দিয়েছো। স্কুলের ধর্ম শিক্ষা ক্লাশের মতো। সপ্তাহের ঠিক একটা দিন, আমরা একটা ক্লাশে ইচ্ছেমতো হৈ হৈ করতে পারতাম, নিজেদের মতো গল্প হতো। তুমিও ঠিক সপ্তাহান্তের এক কোমল ক্লাশরুম, যেমন ইচ্ছে তেমন। এইসব নিয়ম, কথার মারপ্যাঁচে ফেলে গিলিয়ে দেয়া সময় আমারে বিষণ্ণ করে, এ বিরহ বড়ো বেশি বুকে বাজে আমাকে উদভ্রান্ত করে। মগ্ন কিশোরের মতো আমি রুটিনের দিকে তাকিয়ে থাকি, হিসেব করি, আয়ুষ্কাল গুনি, দেখি মাঝখানের ঘন্টাগুলো জীবন থেকে উধাও হয়ে যায় তুমি কথা বল্লেই মনে হয় বেঁচে আছি, নিরবতায় নেমে আসে মৃত্যুর শীতলতা।

ভ্রমণ (আনন্দময়) হয়েছে (শেষ)

Image
১০. সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয় হয় এমন একটা সময়ে পৌঁছে গেলাম হিরণ পয়েন্টে। বিখ্যাত স্পট। বনবিভাগের বিশাল অফিস সেখানে। আছে নৌ-বাহিনী আর মংলা বন্দরের দুটো আস্তানা। আগেরবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা সুন্দরবন নিয়ে কি একটা প্রজেক্ট আর রামসার এরিয়া ঘোষণার জন্যে সেখানে গিয়েছিলেন। বিশাল একটা ফলক লটকে আছে সেখানে। আছে এই এলাকার একমাত্র মিঠাপনির পুকুর। জেটিতে বোট বেঁধে আমাদেরকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। যথেষ্ঠ মানুষের আনাগোনা সেখানে। তবু হরিণ দেখতে পেলাম। ঘুরছে রাতের আলোতে। শুনলাম বাঘও আছে আশেপাশে। বনকর্তা জানালেন একাধিক বাঘ নাকি সেখানে আছে। প্রচুর খাবার পাওয়া যায় বলেই হয়তো এটা ঘটেছে। কারণ এর আগে শুনেছি একটা নির্দিষ্ট এলাকায় কয়েকটা বাঘ সাধারণত থাকে না। খাবার পানির পুকুর পাড়ে বসে আছি। শান বাঁধানো ঘাট। বনবিভাগের এক অফিসার গল্প করছেন। নানান কিসিমের গল্প। এইবার আর মুস্তাফিজ ভাইকে বলতে হলো না। আমি নিজেই বুঝে গেলাম, চাপা... সবটা না হলেও অনেকটাই চাপা। (জেনারেল স্যার, আমি কি কিছু শিখলাম? ) টানা চারদিন কি দুদিনও আমি মাছ খেয়েছি কোন জনমে, এটা কেউ বল্লে, আমার মা বলবেন, আপনে ভুল করতেছেন। সে

ভ্রমণ (আনন্দময়) হয়েছে

Image
১. আমাদের শহরে, নিজেদের লোক যারা আছে, এরা কথায় কথায় এই দেশ সেই দেশ মারে। আমরা দু ভাই। দাদাভাই দেশ শেষ করেছে তাও দেড় যুগ আগে। এখন ইউরোপ শেষ করার ধান্দায় আছে। আর আমার পাসপোর্টই নেই। বালক বেলায় আমি অবাক হয়ে দেখতাম, দাদা ক'দিন পর পর এখানে যাচ্ছে, সেখানে যাচ্ছে। গাট্টি-বোচকা নিয়ে চলে যাচ্ছে জঙ্গলে থাকবে বলে। আমি লোভাতুর হয়েছি। কিন্তু কি এক মায়ার টানে ঘর ছাড়িনি। শহর ছাড়িনি। অথচ বছর দশেক আগেই আমার হয়ে গেছে স্লিপিং ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগসহ ভ্রমণের নানান জিনিসপাতি। দাদাভাই সেসব দেদারছে ব্যবহার করেছে। একবার হলো কি, সিলেট স্টেশনে এসে ঢাকার ট্রেন থামলো। আমি, দাদাভাই, আরিফ ভাই , রনি ভাই আর রাজু নামলাম ট্রেন থেকে। স্টেশনে নেমে দেখি বিরাট আয়োজন নিয়ে তাদের বন্ধুরা দাঁড়িয়ে। তাবু, লেপ-তোষক, ডেগ-ডেকচি। তারা ক্যাম্প করতে যাচ্ছে লাউয়াছড়া বা আরো কোন নির্জন জঙ্গলে। আমার বানর টুপি, মাফলার, স্লিপিং ব্যাগ মুহুর্তের মাঝে তিন বন্ধু ভাগ করে নিলো। তখনতো মোবাইল ছিলো না। দাদাভাই স্টেশন থেকে ফোন করলো বাসায়। জিজ্ঞেস করলো আমি বাসায় পৌঁছেছি কী না। আম্মা না বলাতে, বল্লেন, পৌঁছে যাবো। রাজু আর আমি এক

অবাক হওয়া রাত এবং অক্ষমতার গল্প

অবাক করা সব কাণ্ড ঘটতে থাকে। অন্তত আমি অবাক হই। রাত দুইটা খুব বেশি রাত নয় আমার জন্যে। গত দশ বছর ধরে এই সময়টার ধারে কাছে বাড়ি ফিরি। আজও ফিরেছিলাম। দরজা খুলে দিলো বউ। প্রথম অবাক করা ঘটনা হলো এটা। আমাকে কেউ দরজা খুলে দেয় না। একটা চাবি আছে আমার। সেটা দিয়ে সদর দরজা খুলি। আর ভেতর বাড়িতে তালা টালা দেয়ার নিয়ম নেই আমাদের। আজ সেই নিয়মের ব্যত্যয় হলো। আমাদের কোনো কথা হলো না, সাধারণত হয়ও না। আমি বউকে পাশ কাটিয়ে শোবার ঘরে চলে এলাম। বিছানায় আমার পাঁচ বছর বয়েসি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে। আমার কাঁধে একটা ব্যাগ থাকে সবসময়। এখন এই ব্যাগের কোনো দরকার নেই। তবু থাকে। অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। মান্নাদা একবার বলেছিলো, এই ব্যাগ ছাড়া নাকি আমি অসম্পূর্ণ। আমারো তাই মনে হয়। দরজার ফাঁকে একটা তাক আছে। সেখানে ব্যাগ রেখে লুঙ্গিটা খুঁজি, সেটা নেই। লুঙ্গি খুঁজবো বলে ঘুরে দাড়িয়ে আমাকে দ্বিতীয় দফায় অবাক হতে হয়। বউ লুঙ্গি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণত আমি অবাক হই না। আমার সে ক্ষমতা লোপ পেয়েছে অনেক আগে। তবু আজ বার বার অবাক হতে হয় আমাকে। গরম পড়েছে খুব। শরীর চ্যাটচ্যাটে হয়ে থাকে সবসময়। গোসল করতে হয় বাইরে থেক

পাতা ঝরার আগের গল্প

জন্মের সময় ধুন্দুমার বাঁধিয়ে দিয়েছিলাম। মাকে নিয়ে জমে মানুষে টানাটানি। জম আর মায়ের মাঝখানে দাড়ালেন দুদু মই। নানা বাড়ির বুনিয়াদী ধাই। টেনে হিচড়ে বের করে নিয়ে আসা হল আমাকে। সাথে বেরিয়ে এল আরও কি সব যন্ত্রপাতি। মানুষ বানাবার কলঘরটা সেই থেকে নষ্ট। আমি বেড়ে উঠলাম অসুস্থ এক পরিবেশে। আম্মা কোন দিন আমারে শখ মিটায়া কোলে নিতে পারে নাই। বুঝতে শিখার পর থেকে আমি মা'র আশে পাশে ঘুরাফেরা করতাম। তার ঘ্রাণ নিতাম, কোলে চেপে বসতে চাইতাম। নেহার ফুপু আমাকে আগলে আগলে রাখতো। তাকে ফাঁকি দিতে পারলে মাঝে সাঝে মায়ের কোলে উঠা যেত। কিন্তু একটু লাফালাফি করে ফেল্লেই মা গলা ছাড়তো, ও নেহার কই গেলি, ময়না বাবুরে নিয়া যা। মায়ের যেদিন শরীর বেশি খারাপ থকতো সেদিন খুব নিষ্ঠুরের মত বলতেন, নে'তো এই পান্ডারে। আমার জীবনটা নষ্ট করেও তার শখ মেটে নাই। এখন দরদ উঠা পেটে চাপ দেয় আবার। আমি মন খারাপ করে নেহার ফুপুর সাথে চলে যেতাম। পুকুর পাড় নয়ত পেয়ারা গাছের তলায় নিয়ে নেহার ফুপু আমারে মন ভুলানো কথা বলত। আমি সেইসব কথা শুনতে শুনতে কোন ফাঁকে মায়ের দেয়া কষ্টের কথা ভুলে যেতাম! আমরা দু'ভাই বাজারের গলিতে গলি

মিহিদানা

১. বোধের জ্বালামুখে কড়িকাঠের আদর দিতে নেই অগ্নুৎসব শুরু হয় তাতে, অভিমানে গলে যেও না। এইসব ভড়ং তোমাকে বিভ্রান্ত করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ২. কারো কারো মন খারাপেরও অধিকার নেই, কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাসের জন্যেও কাঙাল থাকে। ৩. আধার হলেই আদরে ধরে, নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে হয়...

বন্ধ্যাসময় ১

আঙুলের টোকায় জেগে ওঠা অক্ষর আর শব্দে পরিণত হয় না। সকলি তবে গরলে ভেসেছে। আলবাব মৃত আজ, কবিতা কিংবা সংসার সবখানে বেজেছে ছুটির ঘন্টা, অকপট বাক্যবন্ধুরা পালিয়েছে, মদেমত্ত হয়ে তুলেছে সুর মৃদঙ্গে, আমি সকল সুর হতে বিচ্ছিন্ন আজ, মৃত মাছের মতো আকাশ দেখি...

উপসংহার

একজন বল্লেন সকল দায় তোমার, একজন কথা বলা বন্ধ করে দিলেন, বাজারে ছড়ালেন নানান বদনাম। অন্য আরেকজন বল্লেন, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না, অথর্বরা কিছুই করতে পারে না জীবনে। আমি দেখলাম, জানলাম, ব্যবহার শেষে মানুষ ময়লার ঝুড়িতে ফেলে ন্যাপকিন, অবহেলায়। তারচে বেশি ঘৃনা নিয়ে মানুষ, মানুষকে ছুড়ে ফেলে প্রয়োজন শেষে।

খসড়া দিনলিপি

এই রাত, তার নগ্নতা। রতি ও শীৎকারে ভরপুর শহর, এই শহরে আমি ভালো থাকি না। তাহারা দয়ার্দ্র হয় না। মানবিক বেহিসাব নাই তাহাদের। লীলাবতীরা নগ্ন রাতের মতোই। যেন বা আমি খুব বেশি দাবী করি। যেন বা আমি আশ্রয় খুজি রোজ রোজ, তারা পাত্তা দেয় না। তারা বেজায় সাবধানী... ২. একটা নদী আছে, জলে ধারণ করে নীলাকাশ আমি বেদনায় নীল মানুষ এক। নারী তুমি কি নদী হবে? এইসব নীল বেদনা ও ব্যাকুলতায় আমার কেন তোমাকেই মনে পড়ে...

সকলি তবে অনুযোগে ভরপুর হে জননী আমার ...

মা ভেবেছিলেন সেবার তার মেয়ে হবে। জামা বানানো হয়েছিলো, সবাইকে তিনি আগাম বলে রেখেছিলেন তার মেয়ের কথা। কিন্তু সেই শীতে তার মেয়ে হয়নি। ধুন্দুমার বাঁধিয়ে, জীবন ও মৃত্যুর মাঝে তিনি এক ছেলেকে জন্ম দিয়েছিলেন। তার শারীরিক সকল সক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলো সেই শিশু। সেই থেকে সন্তান জন্মের ক্ষত ধারণ করতে হচ্ছে তাকে। সেই ধুন্দুমার লাগিয়ে, মাকে জন্মের মতো অসুখি করে পৃথিবীতে আসা শিশুটাই আমি। গতকালকে হিসাব করে দেখি আবজাব নানান বিষয় নিয়া আমি লিখছি। তালছাড়া সব বিষয়। পত্রিকায় চাকরির জামানায় সম্পাদকীয় লেখার কাজ করছি যখন, তখনকার হিসাব ধরলে মাথা আউলে যায়। সেইসব সময়ে একবার মাত্র আমি মাকে নিয়ে লিখেছিলাম, মাত্র একবার, তাও ছদ্মনামে। পত্রিকার পাতায় নানান কিসিমের ফিচার ছাপাতে হয়, সেইরকম এক ফিলার ফিচার ছিলো সেটা। স্মৃতি ঘেটে দেখি সেই ফিচারে, সেই পাঁচশ শব্দে আমি আমার নিজের মায়ের কথা লিখিনি। একটা শব্দও সেখানে ছিলো না আমার মাকে নিয়ে। আমি মূলত মা দিবসের কিতাবি সওয়াল জওয়াবই বিবৃত করেছিলাম সেই লেখায়। মা'কে নিয়ে আমি লিখিনি কেনো? প্রশ্নটা মাথায় ঘুরে, ঘুরতেই থাকে। উত্তর খুঁজে পাই না। মায়ের সাথে কি আমার সম্পর্ক খারাপ? মাকে কি

এই ুত...নিগুলা বাচ্চাদের পড়াতে আসে কেনো?

বাবাইর স্কুল ছুটির দশ মিনিট পর আমি গেটের ভেতর যাই। এর আগে গেলে সে রাগ করে, কারণ আমি গেলে তার খেলা হয় না। আজও সেইমতোই গেলাম। ছোট্ট কঙক্রিটের উঠোনে তারে খুজি। দৌড়াদৌড়িতে নাই। চোখ মেলে মেলে ধরি শেষে। এককোনায় দাড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে যাই। অন্যদিন আমাকে দেখেই ছোট্ট শরীরটা উড়িয়ে নিয়ে আসে। লাফ দিয়ে কোলে চড়ে। বাবা বলে চিৎকার করে। আজ সেসব কেছুই নাই! আমি বুঝি কিছু একটা হয়েছে। হাটুমুড়ে বসি সামনে, কি বাবা কি হয়েছে? সে মাথা নাড়ে, কিছু হয়নি তার। বলি বন্ধুরা মেরেছে? ক্যাপ নিয়ে গেছে? সেটাও নয়। তার পাশ থেকে একজন বলে, ‌মিস তারে পানিশমেন্ট দিয়েছে'। আমি বলি কি করেছো বাবা তুমি? বাবাই আমার বুকে ঢুকে গেছে ততক্ষণে। সেই একজনই বলে, বোর্ড এর লেখা মুছে দিয়েছিলো... আমার মাথাটা চিড়িক দিয়ে উঠে। বলি কি করেছেন মিস? এবার আর বাবাইকে প্রশ্ন করি না, করি সেইজনকেই। বলে কান ধরে উঠবস করিয়েছে। এটাও সে বলতে পারে না। জিনিসটা সে বুঝেই না। দেখিয়ে দেয় কিভাবে শাস্তিটা দেয়া হয়েছে। সিলেট শহরটা কাপে কিনা জানি না। আমি কেপে উঠি... বাবাইকে বুকে ধরে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে হাটা দিলে, বাবাই কাকুতি করে বলে, বাবা ওইদিকে না। বাসায় চলো, আমি

লীলাবতীকাব্য

বৃষ্টির মতো বিনাশী বালিকা আজ ছুটি নিয়েছে। আজ রোদের দিন আজ কৃষ্ণচুড়া আগুন ঢেলেছে এই পথে, প্রান্তরে, কংক্রিটের উঠোনে। আজ জারুল মেলেছে পেখম গ্রামময় প্রান্তরে। মন ভার করেছিলো, ...ইশ্বর, তুমি ছিলে বলে লাল হলো কৃষ্ণচুড়া, জারুল মমতায় মেলেছে চোখ, সে হেসেছে কৃষ্ণ হে, কোথায় তুমি? বাঁশি কি তৈরি? লীলাবতী চোখ তুলেছে...

পুরনো গল্প ০৩

মা গুনে গুনে টাকা দিতো। ডানোর কৌটো থেকে বের হতো সেই টাকা। সাত টাকার ডাল, এক টাকার কাচা মরিচ... এভাবে টাকার অংক ধরে ধরে বাজারে পাঠাতো আমাকে। ততদিনে আমি জেনে গেছি, এভাবে হিসেব করেই বাজারে যেতে হয় আমাদের। এভাবে হিসাব করে বাজার করা যায় না তবু সেটা মেনে নিতে হবে। এও জেনেছি, সাত টাকায় এক পোয়া ডাল আর তেরো টাকায় আধা সের, এক টাকা বাচানোর এই হিসাবে আমরা যেতে পারবো না। আমাদেরকে রোজ আট আনা বেশি দিয়েই ডাল কিনতে হবে। বাবা মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় বারান্দায় এসে দাড়াতো। সে বৃষ্টিই হোক আর শীত। বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি বাবা বারন্দায়, সন্ধার আলো আলো অন্ধকারে বাবা আমার দিকে স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি সেটা দেখি, আবার নাও দেখি। কথা বলতো না। শুধু একবার, রাতে, মাঝরাত হবে হয়তো। কি একটা বই খুজতে বাবার ঘরে গেলে বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কিরে টুটুল তুই রোজ রোজ সাত টাকার ডাল কিনিস কেনো? আমি অবাক হয়ে বলি, তুমি জানলে কিভাবে? বাবা একটু থেমে আবার বলে তেরো টাকা দিলেতো আধাসের ডাল পাওয়া যায়। রোজ রোজ আট আনা বেশি দিস কেনো? আমার মাথায় ঢং ঢং করে হাতুড়ির বাড়ি পড়ে। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে তাকানো চোখটায় পুরনো সেই শূন

আলবাব'র সময় ০৫

একেকটা রাত মৃত্যুর মতো দীর্ঘ হয়ে আসে... মানুষ মূলত মিথ্যুক জেনেও ভালোবাসা বিলায় প্রকৃতি। এইসব প্রেম ও অপ্রেমে, করুণা ও কার্পণ্যে ভেজার সময় কোথায় বলো? প্রতারিত আলবাব অভিমান ভুলেছে, বিশ্বাস হারিয়েছে মানুষে সরল রেখার জীবন, এইবার তবে ছুটি নাও

পুরনো গল্প ২

বাবার একটা আলাদা রুম ছিলো। দাদাজান যখন বাড়ি বানান, বাবা তখন যুবক। ছেলের জন্যে আলাদা একটা রুম বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘর ঠাসা ছিলো নানান রকমের বই এ। বাবা সেই ঘরে ডুব দিলেন। বড়দা এক রাতে ট্রেন ধরার জন্যে যখন বাড়ি ছাড়ছিলো, তার আগে বাবার সাথে দেখা করার জন্যে গেলো সেই রুমে। বাবার সাথে কি কথা হয়েছিলো বড়দার সেটা আমরা জানি না। এই কথা শুধু মনে আছে, বড়দা বেরিয়ে এসে আর দাড়ায়নি। হন হন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমি পেছন পেছন সাইকেল নিয়ে বেরুলাম। দাদা সেটা চালিয়ে স্টেশনে গেলো। রাস্তায় কোন কথা হয়নি দু’ভাইয়ে। স্টেশনে ঢুকার মুখে, আমার হাতে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে বল্লো, একটা পেডলক কিনিস সাইকেলের জন্যে। তারপর দু কদম এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে বল্লো, 'টুটুল, বাবাকে দেখে রাখিস সোনাভাই। বাবা খুব কষ্টে থাকেরে...' দাদার চোখে টলটল করছিলো পানি, সাইকেল চালাতে চালাতে মুছে ফেলছিলো যা, এইবার আর সেটা করলো না। টপ টপ করে গাল বেয়ে নেমে আসে ... সাইকেলের প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে অবাক হই, সেই প্রথমবার আমি রাত দশটায় একা বাড়ি ফিরি। সেইদিন থেকে আমি বড়ো হতে শুরু করলাম।