Posts

Showing posts from 2021

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০১

মোবারক তখনও কারিম হয়ে উঠেনি। আলগা আভিজাত্যের রামাদ্বানের সাথেও পরিচয় হয়নি তখন। তখন রোজা আসতো। আসতো প্রবলভাবে। নানাবাড়ির টিলা থেকে আমরা দৌড়ে নেমে যেতাম বাঘা হাওরে, পেন্সিলের টানের মতো একটা চাঁদ দেখলাম কী দেখলামনা, উল্লাসের তাতে উনিশবিশ হতোনা। এই একই ভূমিকায় অভিনয় করেছি কখনো নলুয়ার হাওরের পারে, কখনও রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অথবা কালনী নদীর পারে। আমার শৈশব ছিলো উল্লাসে ভরপুর। শহর সিলেটে তখনও অনেক দোকানের সামনে ছিলো কাঠের দরোজা! একটা একটা করে কাঠের তক্তা খুলে রাখলে আম্মার তেরছা করে লেখা লিস্টি ধরে ডাল তেল ছোলা আর কালিজিরা চালের খুশবো নিয়ে রোজা আসার জানান দিতো তখন। আর নানাবাড়িতে ছিলো বাইংগন বিচি চাউল। উপজেলা সদরের দিনগুলোতে বাজারের খবর আসলে রাখা হতোনা। তাজপুরে বাড়িতে মাইক লাগাতেন ঢাকা টেইলার্সের মালিক। মাঝরাতে শুরু হতো 'সেহরি সুবুর, ওঠো ওঠো, ফতার সময় ওই গেছে' বলে হুলস্থূল। সুহুর পার্টি করা এই সময় বুঝবেনা লতা দিয়ে ফতা খাবার সেইসব সময়ের মায়া। আম্মার পাশে বসে একটার পর একটা পিয়াজু খেতাম। মনোয়ারা মনজিলের খালাম্মা বিকালে মাঠা বানানোর জন্য আসতেন। সময় হবার আগেই আম্মা সবকিছু প্রস্তুত

আমাকে আগলে রাখো, রাখো তুমি মায়ায়...

Image
তখন ঘুরতাম। অনেক ঘুরতাম। ঠিক ঠিকানা ছিলোনা এবং সেসব কোন দ্রষ্টব্য স্থানও ছিলোনা। আমারই মতো অনুল্লেখ্য কোন গ্রাম-বাজার কিংবা প্রান্তর। এই ছবিটা ছাতকের। নদী পেরিয়ে আমরা হেঁটেছিলাম। কয়েক মাইল। সাথে আমার এক বন্ধু ছিলেন। প্রণবেশ উনার নাম। আমরা এমন হারিয়ে যাওয়া হাঁটা অনেকবারই হেঁটেছি। একটা ভুল হলো, সাথে আরো দুজন ছিলেন। দুজনেই প্রণবেশের বন্ধু। সেদিনই পরিচয়। আর কোনদিন দেখা হয়নি, সম্ভবত আর হবেওনা। একজন আজাদ, অন্যজনের নামটা আজ আর মনে নেই! অসাধারণ একটা হাঁটাপথ ছিলো সেটা। ছবিতে ধারণ করার মতো নয়। গোপাট, *গোল, ধানি জমিন, টিলার পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ, স্বচ্ছ জলের ছড়া। এ হলো সেইসব গ্রামেদের একটি যেখানে এখনও মানুষ অপরিচিত কাউকে পেলে হেসে কথা কয়। যেকোন বাড়ীর উঠোনে দাঁড়ালে তেষ্টার জল মেলে। যেখানে শিশুরা পরম বিস্ময়ে, অসঙ্কোচে মানুষের দিকে তাকাতে পারে। আমার মনে আছে, মাটির উঁচু ঢিবির ওপর একটা বাড়িতে গেলাম আমরা। পাহাড়ের ঢল থেকে বাঁচতে এখানে বাড়ি গুলো এমন উঁচুতে তৈরি হয়। মৃদুভাষী এক শিশু সবুজাভ কাচের গ্লাসে করে পানি এনে দিলো। চকচকে সেই গ্লাস থেকে তখনও ফোটা ফোটা পানি ঝরছে। অতিথিকে দেওয়ার আগে সেটা ধোয়া হয়েছে। আ

পদ্য

সফল পুষ্পের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। অনেকের মাঝে হারিয়ে যাই। আগুনে ঝাপ আমাদেরও দেওয়া হয়। আমরাও সাতরাই উত্তাল নদী। আয়োজন শেষ হলে, উচ্ছন্নে যাওয়া মঞ্চে শেষ মানুষটা হই আমি, তুমি, সে... নাম পড়া শেষ হলে কান পাতি, চোখ রাখি 'প্রমূখ' শব্দটায়। বড় প্রিয় একটা শব্দ। নজমুল আলবাবরা ওখানে লুকিয়ে থাকে।

প্রিয় ময়না ভাই

Image
যে শহর ছিলো হাতের তালুর মতো পরিচিত। যে শহরে অনাত্মীয় ছিলোনা কেউ। সেই শহর আর আগের মতো নেই। তারপরও শহরটায়, ছায়া প্রচ্ছায়ায় কিছু মানুষ আছেন, ছিলেন। ময়নাভাই আছেন থেকে ছিলেন হয়ে গেলেন! আমাদের ছোট্ট শহরের উজ্জ্বলতম বাতিঘর নিভে গেলো অবেলায়। অবিরাম আলোর জোনাক ছড়ানো মানুষটি চলে গেলেন। ময়নাভাই, যার অপার্থিব আস্তিন ধরে ঝুলে থাকতো আলো প্রত্যাশি কিশোর তরুণ। সেই আস্তিন গুটিয়ে চলে যাবার আগে তিনি মুঠো মুঠো স্মৃতি ছড়িয়ে গেলেন। ময়নাভাইয়ের সাথে পরিচয়ের কোন আনুষ্ঠানিক স্মৃতি কী আমাদের কারো আছে? সুরমার সাথে শহর সিলেটের যে সরল সম্পর্ক, ময়না ভাইর সাথেতো আমাদের তেমন সম্পর্কই ছিলো। কখন, কেমনভাবে আমরা তার সাথে জুড়ে গেলাম আর কখন কেমনভাবে তিনি আমাদেরকে চিনে নিলেন তার কোন নির্দিষ্ট দিন তারিখতো নাই। ময়নাভাই অনেক কথা বলতেন। প্রতিটি কথা ছিলো প্রয়োজনীয়। তিনি যতো কথা বলতেন তারচে বেশি কথা থেকে গেছে না বলা, কারণ আমরা সেই কথাগুলো বলাতে পারিনি। মহীরুহের ছায়ায় লতাগুল্মের মতো ভীড় করা সব মানুষ আমরা। আমাদের ওতো জানার সময় কোথায়? তাই ময়নাভাই তার জ্ঞান বৃক্ষ নিয়ে চির প্রস্তানে চলে গেলেন। মুক্তোদানার মতো কোমলসব স্মৃতি, দুপুরের রোদ

পথে পথে পড়লাম ছড়াইয়া...

Image
ছুটিবারের লক্ষ্যহীন ঘুরাঘুরিতে মাঝে মাঝে অচেনা সড়কে ঢুকে পড়া যায়। ছুটতে ছুটতে এ পথ থেকে সে পথ ঘুরে আবার চেনা সড়কে ফিরে আসা। গ্রামে বিচ্ছিন্ন কচুরিপানার মতো একেকটা বাড়ি, মনেহয় ভাসছে যেনোবা। কিন্তু না, এরা স্থির। একা, নির্জন। বিন্যস্থ এই দেশে সবকিছুতেই নাম্বার সাটা আছে। কিন্তু অবাক করা একেকটা বাড়ি, এদের কোন নাম্বার নেই! বরং নাম আছে। আমাদের যেমন উত্তরের বাড়ি, কিংবা নয়া বাড়ি থাকে প্রতিটা গ্রামে, তেমন করে এদেরও আছে। মেনর হাউজ, উডভিল কটেজ, ব্রুম ক্রফট, বেলস এনড... বাহারি সব নাম। বেশিরভাগই কৃষকদের বাড়িঘর এসব। বাড়ির সামনে মাঝে মাঝে হাতে লেখা এক টুকরো কাগজ কিংবা বোর্ডের দেখা মেলে। কেউ লেটুস বিক্রি করেন। কেউ লিখে রেখেছেন ডিমের জন্য বড় ঘন্টায় টোকা দাও। কেউ টমেটো, মুলোটা, লাউটা বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন। পাশে ছোট একটা বাক্স নয়তো বাটি রাখা। নিজ দায়িত্বে টাকা রেখে জিনিস নিয়ে যাও। এটাই ব্যবস্থা। "শেয়াল বনের" ছবির মতো এক বাড়ির সামনে খুব কারুকাজ করা একটা বোর্ড লাগানো ছিলো। ওতে লেখা, 'বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়'। পাশেই কার্ড বোর্ড কেটে মোমবাতি বানিয়ে লিখে রাখা হয়েছে, হাতে বানানো মোমবাতি বিক

পদ্য

ফুলঝুরি কেনার সরব বিকেল মিলিয়ে গিয়েছে বাতাসে। আকাশে লেপ্টে থাকা মেঘ চলে গেছে কোন অচেনায়, কেউ রাখেনি খবর। ঝুপ করে নেমে আসা অন্ধকারে নাই জোনাকির কোলাহল। বিলাপের জন্য অবশিষ্ট কেউ নাই আর। কান্নাকে খুন করে টাকায় কেনা শিৎকার।