Posts

Showing posts from 2015

বেয়াইপ্রজাতন্ত্র এবং একজন প্রবীর সিকদার

Image
প্রবীর সিকদারকে জেলহাজতে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ দশ দিনের রিমান্ড চাইলে সেই আবেদনের শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করে তাঁকে জেলে পাঠান আদালত। আজ এই শুনানী হবে। ইতোমধ্যে অনলাইনচারী সবাই প্রবীর সিকদারকে চিনে ফেলার কথা। ১৬ আগস্ট তাকে আটক করেছে ঢাকার ডিবি পুলিশ। আটক করার কয়েক ঘন্টা পর ফরিদপুরে দায়ের করা হয় মামলা। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আটক হওয়া সাংবাদিক প্রবীর ফেসবুক স্টেটাসের মাধ্যমে মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের সম্মানহানি করেছেন! এখানে লক্ষণীয় হলো, আমাদের দেশে যখন মামলা করেও আসামি গ্রেপ্তার করানো যায় না, যখন প্রকাশ্যে ব্লগাররা খুন হবার পরও খুনিদের না ধরে উল্টো ব্লগারদেরই দোষ খোঁজা হয়, ঠিক সেই সময়ে আগেভাগে আসামি আটক করে মামলা দায়ের একটি অভিনব ঘটনা। প্রবীর সিকদার কে? তিনি একজন সাংবাদিক, এই তার পরিচয়। কিন্তু এসব ছাড়িয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে প্রবীরের আপোসহীন কর্মকাণ্ড। ব্যক্তিজীবনে তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাবাসহ পরিবারের ১৪ জনকে হারিয়েছেন প্রবীর। এমন একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ হয়ে কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। টানা সে

নামাবলী

১৯৯১ সালে ইরাক যুদ্ধ শুরু হলে বীর পূজারী মুসলিমদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষে পরিণত হন সাদ্দাম হোসেন! আরবের শাসকরা যতই সাদ্দামের বিরুদ্ধে থাকুক না কেনো, কিংবা আমাদের মতো দূরবর্তী দেশগুলোর শাসকরাও যুদ্ধে কুয়েতের পক্ষে অংশ নিক, সাধারণ মুসলমানদের মাঝে এই লোকটা ছিলো অসম্ভব প্রিয়। তখনকার বাংলাদেশে অনেক নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে সাদ্দাম। আমার পরিচিত একজন শিক্ষিকা তার ছেলের নাম রাখেন সাদ্দাম! ধর্মকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া উপমহাদেশীয় মুসলমানরা ভেবেছিলেন মুসলমানদের কথিত হারানো গৌরব আবার বুঝি ফিরে আসবে সাদ্দামের হাত ধরে! সম্ভবত আরবেও এরকম একটি ধারণা ছিলো। তারা আমাদের মতো হয়তো মুসলমান কেন্দ্রিক চিন্তা করতো না। সাদ্দামের মাধ্যমে আরব পূণর্জাগরণের একটা প্রচ্ছন্ন স্বপ্ন ছিলো আম আরবীয়দের। আমাদের মসজিদে তবলিগ করতে আসা কোন এক আরবদেশীয় তরুণ ভাঙা ভাঙা বাংলাতে সেই স্বপ্নের কথা আমাদের বলেছিলেন। যতটা মনে করতে পারি, তিনি একটিবারের জন্যও মুসলমানদের কথা বলেননি। বার বার বলছিলেন আরবের কথা। বাংলাদেশেই ডাক্তারি পড়তে থাকা সেই আরব বাগদাদের প্রাচীন সভ্যতার কথা বলেছিলেন, বাদশাহ হারুনুর রশিদের গল্পের ছলে যার অনেকটাই আমর

জ্বরগ্রস্ত

বৃষ্টি, জ্বর আর একাকিত্ব নিয়ে আমার বেড়ে উঠা। বৃষ্টিকে আমরা মেঘ বলি। মেঘের পর মেঘ আমাকে ভিজিয়েছে আশৈশব, বালকবেলা থেকে মেঘে ভিজতে ভিজতে পেরিয়ে এসেছি একাকী তারুণ্য, এসে দাঁড়িয়েছি চালসে সময়ের সামনে... এত বেশি জ্বর হতো, কেউ আর সেটাকে গুরুত্ব দিতো না। মা-ও না। একবার জ্বরে গা পুড়ে যায়, নানা বাড়ির পুরনো আমলের পালঙ্কে আমার চে বয়েসে বড় রেজাইর নিচে শুয়ে দেখি মা শহরে চলে গেলেন। ডাক্তার দেখাতে হবে যে। জন্মের দাগ রেখে এসেছি মায়ের জরায়ুতে, সে-ও তো আর ভালো থাকে না। সেবার জ্বর ছিলোনা শুধু, সন্ধ্যার আগে আগে সারা শরীর লাল হয়ে হাম এলো! নানী তখন কানে শুনতে পাননা ভালো করে। দুদুমইর বাড়ি থেকে কীসব শিকড় বাকড় আনালেন। একটু পর পর নানী শরীরে হাত বুলিয়ে দেন, আহ্ প্রশান্তি... চিঠি লিখি। রোল টানা বাংলা খাতার পাতা ছিঁড়ে। ভেতরে অনেক গরম, দই খেতে ইচ্ছে করে, মা বাড়ি নেই... সব লিখে দেই, সব। লোকটার নাম ভুলে গেছি। একটা বড় ঝোলা থাকতো কাঁধে। চোখে মোটা কাচের চশমা। নাকের উপর সুতো পেঁচিয়ে রাখা। চিঠি থাকুক আর না থাকুক এপাশটায় এলে নানাবাড়িতে একবার তিনি আসতেনই। সেই একই খাতার পাতা ছিঁড়ে খাম বানিয়ে ভাত দিয়ে আঠা লাগিয়ে তাঁর হাত

অনন্ত বিজয়

আপনার সাথে দেখা হয়েছে অনেকবার অফিসে, রাস্তায়, ছাপাখানায়, মিছিলে আপনি কথা বলতেন নির্ভয়ে, স্থিরতায় আমার অপরিসর খুপড়িতে লাল চা হয়েছিলো কোন একদিন, বাঁধাই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে খুনসুটি করেছি, কার কাজ আগে করানো যায় তার জন্য তাড়া দিয়েছি মলাট মাল্লারকে মিছিলে মিশে যাওয়া মুখে আপনি ছিলেন, ছিলাম আমিও। চিৎকারে অনভ্যস্থ আমাদের গলা ভেঙে গেলে ফুটপাতের আদা চা’য়ে ভাগ বসিয়ে সুমন’দার ঘাড়ে বিলের দায় চাপিয়েছি সকলই গৌণ স্মৃতি, আমরা গৌণ মানুষ আপনি বেঁচে থাকলে কোনদিন মনে হতো না, এখন সেইসব মূখর সময়কেই বড় বেশি মৌন মনে হচ্ছে। ভালো থাকবেন অনন্ত...

বুচ্ছি, আপনে কে সেইটা বুচ্ছি

Image
কয়েকটা ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে ফেসবুক। এখানে একটা তুলে দিলাম। হু বিষয়টা দুঃখজনক। একটা মেয়েকে এভাবে পুলিশ নির্যাতন করতে পারে না। এর নিন্দা জানাই। কিন্তু এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার কোন মানে নাই। ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে, পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্যই কঠোর হতে হয়। আপনার এই ছবিটা দেখার পর কস্ট লাগবে, রাগ উঠবে, সেটাই হওয়া উচিত। আমারও হয়েছে। কিন্তু ইউ হ্যাভ টু এ তুকাতুকি মাইন্ড। আপনাকে তুকাতুকি, মানে খুঁজাখুঁজি করতে হবে। ঘটনা কী ঘটেছিলো সেটা বের করতে হবে। তখন আপনারও, আমার মতো রাগ কমে যাবে। যেমন এই ছবিটার আগের ছবি। হ্যা ওটা আপনাকে খুঁজে বের করে দেখতে হবে। সেই ছবি এম্নি এম্নি আপনাকে কেউ দেখাবে না। এটাই হয়ে আসছে এখন। সবাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। এজন্য এই মেয়েটি মার খাবার ঠিক আগে কী করেছিলো সেটা আপনার কাছ থেকে আড়াল করা হবে। আপনি জানেন এ কি করেছিলো? হু, এইবার ২য় ছবিটা দেখুন। এই অসভ্য মেয়ে পুলিশের গাড়িতে ফুলের টব ছুড়ে মেরেছিলো! একবার চিন্তা করেনতো বিষয়টা! এভাবে রাস্ট্র চলতে পারে বলেন? একটা মেয়ে, ফুলের টব ছুড়ে মারে পুলিশের গাড়িতে! এর পরেও পুলিশকে বসে থাকতে হবে? আপনি যদি সেটা বলেন তখন আপনার অ

লড়কে লেংগে পাকিস্তান ও প্রথমালো

পাকিস্তান ও প্রথম আলো নিয়ে বিরক্তির শেষ নেই। বাংলাদেশ-পাকিস্তান এর চলমান ক্রিকেট সিরিজ নিয়ে পাকিস্তানপন্থী এই দৈনিক আর এর খেলার পাতা যেভাবে নগ্ন পাকিপ্রেম দেখাচ্ছে সেটা নিয়ে এই লেখাটা তৈরি করার পর দেখি সচলায়তনে ইয়ামেন এ বিষয়ে লিখে ফেলেছেন। এখন এই লেখাটার করবো কী? ফেলতেও মন চাইছে না। তাই নিজের ব্লগে টুকে রাখলাম। পাকিস্তানপন্থী প্রথম আলো নিয়ে সচলায়তনে বিস্তর লেখা আছে। এরমাঝে সবচেয়ে বেশি মনেহয় এর খেলার পাতা নিয়ে লেখা। প্রথম আলোর খেলার পাতায় তাদের দেশ পাকিস্তান নিয়ে যত ম্যাৎকার করা হয় এই মাপের ম্যাৎকার সম্ভবত পাকিস্তানের কোন দৈনিকেও করে না। সংবাদপত্রে খবর তৈরি করার একটা বিষয় আছে। এইটারে মলা বলতাম আমরা। মলা মানে ঘোটা। আটা-ময়দা দিয়ে খামির বা কাই বানানোর সময় ঘোটা দেওয়াকে সিলেটে মলা বলে। কখনও ভালো নিউজের সংকট হলে, পুরনো কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধরে একটা রিপোর্ট নামানোরে মলা বলতাম। টেবিলমেইড রিপোর্টও বলে সম্ভবত। প্রথম আলোর খেলার পাতার পাকিস্তান প্রেম এতই প্রবল যে, যখন পাকিস্তানের কোন খবর থাকে না, তখন এরা মলা দিয়ে খবর তৈরি করে। যেমন, মোহাম্মদ আমির বিলাত ভ্রমণে। বাবা হচ্ছ

প্রতিক্রিয়াসমূহ

০. বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর। নাজিম হিকমতের কথা। হয়তোবা মানুষ ভুলে যায় এক বছরের মাথায় তার শোকার্ত সময়কে। কিন্তু একুশ শতকে শোকের আয়ু কত বছর, কত দিন? এই ফেসবুক জামানায়, যখন মিনিটে মিনিটে বদলে যায় হোম পেইজ, নিজের দেয়াল! ১. আমাদের দেশে মানুষের জীবন কচু পাতার পানির মতো। টুপ করে ঝরে যায়। ক্ষমতার জন্য, শুধুমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্র দখলের জন্য রাজনীতির সাথে যোগাযোগহীন মানুষকে পুড়ে মরতে হয়। বিষয়টা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানুষ সেটা মেনে নিয়েছে যেনবা। ২. দল বেঁধে মানুষ যখন পুড়ে মরে। কিংবা আস্ত একটা ভবন যখন মানুষকে নিয়ে মাটিতে মিশে যায়, ডুবে যায় আস্ত একটা লঞ্চ। আমরা বেদনাহত হই। মানুষ হিসাবে মানুষের জন্য কেঁদে ওঠে আমাদের মন। কিংবা অজানা কোনো কারণে যখন খুন হয়ে যান সাগর-রুনি তাতেও মানুষের ভেতর প্রশ্ন তৈরি হয়, প্রতিবাদ তৈরি হয়। ৩. দল বেঁধে এই মৃত্যুর মিছিলের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে ব্লগারের মৃত্যু। সাধারণ মানুষের সাথে বুঝিবা এর কোনো সম্পর্কই নেই। যেনবা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মানুষ। এরা হঠাৎ করে মরতে শুরু করেছে। এদের কেউ প্রকৌশলী, কেউ ছাত্র, কেউ বেকার। এরা মরছে, আহত হচ্ছে খবর

অপ্রস্তুত ব্লগরব্লগর

কয়েকদিন আগে ফেসবুকে কেউ একটা গান শেয়ার দিলেন। চকমকে শাড়ি পরা এক নারী গান গেয়ে, মোবাইলে রেকর্ড করে আপ করেছিলেন। সেই গান ঘুরছে এর তার দেয়ালে। গানের গুণে নয়। শিল্পী এখানে মূল লক্ষ্য। মজা হচ্ছে সেটা নিয়ে। মিনিটখানেক শুনে নিজেও তাতে যোগ দিলাম। আমার এক বোন তার ‘প্রেন্ড’ হবার আগ্রহ জানিয়ে স্টেটাস দিলো। শব্দটা দেখে বুঝলাম এরকম কিছু একটা উচ্চারণ করেছেন তিনি। তার ফেসবুক একাউন্ট বের করলাম। তারপর হু হু করে উঠলো ভেতরটা... খুব কাছের মানুষজন বিদেশে থাকেন। সিলেটি হিসাবে বিলাতে থাকেন বড় একটা অংশ। এর বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে। যারাই যেখানে থাকুন, বিলাতের নতুন প্রজন্ম ছাড়া প্রায় সবাই শ্রমিক। কারখানা-রেস্টুরেন্ট হয়ে সেখানকার প্রজন্ম মোটামুটি একটা স্থির অবস্থানে পৌঁছেছেন। কিন্তু যারা মধ্যপ্রাচ্যে আছেন, তাদের কষ্টের জীবন। খুব কাছে থেকে সেইসব মানুষদের দেখেছি। কঠিন, কঠোর পরিশ্রম করা একেকটা প্রিয় মুখ আমার। তাঁদের চিঠির ভেতরের দীর্ঘশ্বাস, তাঁদের বাড়ি ফেরার আকুতি, দীর্ঘ বছর কষ্টের কাজ করে বিধ্বস্ত শরীর এবং মন নিয়ে ফিরে আসা সেইসব মানুষকে নিয়েই আমাদের পরিবার। এই জীবনের কথা, কষ্টের কথা জানা ছিলো। একটা ধারণা তৈরি হয়

কসাইদের করতলে নিজেদের সঁপে দিলাম

জানি, নিশ্চিত করেই জানি এখানেই থেমে যাবে সবকিছু। কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছু হয়না এখানে। এই অন্ধকারে, বদ্ধ আবহে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো অবশিষ্ট থাকবে না আর কোনো বিশুদ্ধ বাতাস। প্রতিবার কিছু বোকা মানুষ তড়পাবে, কাঁদবে, মুষ্টবিদ্ধ হাত উপরে তুলে প্রতিবাদ করবে... তারপর সেই যুথবদ্ধ কণ্ঠের মাঝ থেকে সবচেয়ে তীব্র কণ্ঠটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। অমোঘ কোনো গাণিতিক নিয়মের মতো। রক্তপিপাসু মধ্যযুগ বারবার আঘাত হানবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, মতিহারে। শত্রুর ঠিকানা জানবে মানুষ। চিনবে শত্রুকে। তারপরও সেই শত্রু থেকে যাবে অধরা। নিয়মিত তার কাজ করে যাবে, রাষ্ট্র তার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। ২০০৪-এর ২৭ ফেব্রুয়ারির সাথে ২০১৫'র ২৬ ফেব্রুয়ারির কোনো পার্থক্য নেই। ২০১৩’র ১৫ ফেব্রুয়ারির সাথে একাকার হয়ে আছে ২০০৪-এর ২৪ ডিসেম্বর। প্রতিটি ঘটনার একই কায়দা। খুন হয়ে যান হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক ইউনুস, রাজীব হায়দার, অধ্যাপক শফিউল, অঞ্জলী দেবীরা। পত্রিকা, উড়ো চিঠি আর ভার্চুয়াল পৃষ্ঠায় তালিকা টানিয়ে আমার ভাই-বন্ধুর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। সেই তালিকা ধরে খুন হই আমরা। তবু উল্টো পক্ষের কোনো তালিকা