Posts

Showing posts from 2022

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

চল্লিশ পেরুলে বয়েস পরস্পরের আলাপের বিষয় হয় ওষুধের তালিকা। কোন কবি বলেছিলেন এই কথা? কোন কবিতায় আছে এই কথা? নাকি কোন গদ্যে? কথাটা মিথ্যে নয়। নির্দিষ্ট বয়েস পেরুলে পরে বন্ধুদের আলাপেও ঢুকে পড়ে সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যবার্তা। আমরা সিনেমা নিয়া কথা বলি। তত্ত্ব বা তথ্য থাকেনা সেখানে। নিজেদের মধ্যে কার হৃদয়ে ছুরি চিকিৎসা হলো তার গল্প করতে করতে মান্নাদা বলে, সিনেমাটা খারাপনা। দেখতে পারিস। আমরা তরল সিনেমার তালিকা করতে থাকি। কঠিন বাস্তবতার গল্পগুলো এড়িয়ে যাবার পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করি। এ এক প্রাত্যহিক গল্প বলা। সিনেমার দৃশ্যান্তরে ধারাবাহিকতা নিয়ে আলাপ হয়। গল্পের সময়কাল নিয়ে চিন্তা না করা পরিচালককে আমরা গাধা নাম দেই। মান্নাদা বলে, তুই যেমন ভাবছিস, তেমন না আসলে। অন্ধ একটা মানুষ এই সমাজে যেমন অবিচারের শিকার হয়, তেমন না, বরং প্রতিশোধ নিতে পারার এক সুপারম্যানিয় ঘটনা। সিনেমাটা সিনেমাই। অন্যকিছু না। কম টাকায় তৈরি হওয়া সিনেমার তালিকা করি আমরা। ভালো সিনেমার জন্য টাকা কোন বিষয় না। কম টাকা দিয়ে বিস্তর ভালো সিনেমা তৈরি হয়েছে। অন্ধ হলেই বিহঙ্গ পাখা বন্ধ করেনা, সিনেমাটা সেই সূত্রেই হয়তো তৈরি। কিন্তু হিন্দিওয়ালারা রবী

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

ফুপু বছরে একবারই আসতেন। বাক্স পেটরা বোঁচকা বুচকি নিয়ে। তখন আমরা বিশ্বনাথে থাকি। লাল ইটের একটা বাড়ি। খোলা উঠান। বড় খেলার মাঠ। বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, প্রাইমারি স্কুল। ফুপু এলেন রোজার আগে। এসেই আমাদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে এক প্রস্ত কান্নাকাটি করলেন। বিলাপ দিয়ে কান্না। আব্বা বল্লেন, কান্নাকাটি শুনলে মানুষ ভাববে, পোস্ট মাস্টার মারা গেছে... ফুপু এ কথা শোনে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আব্বা সুড়ুৎ করে বেরিয়ে গেলেন। হয়তো রনজিত কাকার সাথে আড্ডা দিতে। কাকা তখন রামসুন্দর স্কুলের শিক্ষক। দীর্ঘ বছর পর দুই বাল্যবন্ধুর দেখা হয়েছে তখন। তারা চুটিয়ে সেই সময়টা উপভোগ করেছেন। কান্নাকাটি এবং আমার কেউ নাই বিলাপ শেষ করে ফুপু ব্যাগের ভেতর থেকে ছোট একটা কাঁথা বের করে সেলাই করতে শুরু করলেন! এটা এতই ছোট ছিলো যে, তখনকার পিচ্চি হাসানের কাঁথাও এরচে বড় ছিলো! আমাদের ঘরে তখন সকাল বিকেল লুডু খেলা হতো। বলতে গেলে লুডুর বোর্ডের মাপের সেই কাঁথা। বিস্ময় নিয়ে কাথা তৈরি দেখতে থাকলাম। ফুপু অসাধারণ সব সেলাইয়ের কাজ জানতেন তখন। দেখতে দেখতে কাথাটা আস্ত একটা নকশায় পরিণত

শুভ হালখাতা

নববর্ষ বলে কিছু চিনতাম না তখন। চিনতাম হালখাতা। স্মৃতির ছড়ানো মুড়ি মুড়কি জড়ো করতে গেলে যে উজ্জল সময়টা সামনে আসে, সেটা সম্ভবত ৯৩/৯৪ সাল হবে। ইংরেজি ৮৬/৮৭। জগন্নাথপুর বাজারে কাকাবাবুর দোকানে নতুন খাতা খোলা হতো। একদম সকালে হাড়িতে করে মিস্টি চলে আসতো। এরপর আব্বার হাত ধরে চলে যেতাম বাজারে। দোকানের ভেতর থেকে ডাক আসতো, ' ও মাস্টসসাব, আউক্কাতে...' আব্বা হাত নেড়ে বলতেন, 'থুড়া চক্কর দিলাই আগে...' আব্বার চক্কর বলতে লম্বা কোন দৌড় ছিলোনা। নির্দিষ্ট কয়েকটা দোকান ঘুরে তিনি কাকাবাবুর গদিতে এসে বসে যেতেন। ততক্ষণে মিস্টিতে আমার পেট টইটুম্বুর হয়ে যেতো। আব্বা মাথা নাড়লে আমি হাফপ্যান্টের কোমরে ধরে দিতাম দৌড়! ( হাফপ্যান্টের কোমর ধরা বিষয়ে নিজের কোন স্মৃতি নাই। আমার শৈশব বেঁচে আছে যাদের স্মৃতিতে, তারা বলেছেন এই গল্প!) আম্মা ভালো দেখে শাড়ি পরতেন। পোলাও রান্না হতো। এসবই আসলে বিচ্ছিন্ন বৈশাখের স্মৃতি। ফুফুত ভাই করিম, আমাদের বাড়িকে শিন্নি বাড়ি বলতো, তার কারণ মনেহয় এই যে, এমন কোন দিনে সেও ফুফার সাথে মাদানে খেতে এসেছিলো আর আম্মা তাকে মুরগির মাংসের সাথে পোলাও তুলে দিয়েছিলেন পাতে। করিম অভিমানে সব ছেড়ে

আত্মজ শোনো, বলি

আমি সেইসব সাধারণের একজন যার জীবন মূলতঃ নিস্তরঙ্গ। মাদানর খানির পরে নানাবাড়ীর উঠোনে নেমে আসা অবাক দুপুরের মতো একা। উত্তরের টিলার এষনায় অজানা অচেনা গাছের মতো, পাতার স্পর্শে যাদের ছোঁয়া যায় তারাও প্রজাতিতে ভিন্ন, অনাত্মীয়। আমার কোন খ্যাতি নাই। চৌরাস্তায় দাঁড়ালে হঠাৎ আহ্লাদে কেউ বলবেনা, 'কেমন আছো?' কাঁচাবাজারে তরুণী লাউ এগিয়ে দিয়ে সব্জিওয়ালা কখনই বলেনি, 'বাইসাব নেউক্কা, আপনার লাগি আগলাইয়া রাখছিলাম'। পাশের গায়ের লোকটাও জানেনা আমার ঠিকানা। পেছনের বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিলাম জীবনের ইশকুল। তুই বলার কোন সহপাঠী নাই আমার। কেউ কোনদিন আঁকেনাই আমার ছবি, তুলিতে রেখায়। সবাই দাঁড়িয়ে যখন হেসেছে, একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরেছে লাস্যে, আমি ছিলাম ক্যামেরায়। স্থিরচিত্রে পাবেনা আমায়। ১২/০৪/২০২১ সোনাজাদুরা আমার, তোমাদের বুকের ভেতর মন পকেটে আলতো করে এই আমাকে রেখে দিও। মাঝে মাঝে স্মৃতি ফেলার সময় হলে ফেলতে গিয়েও সাদাকালো এই বাবাটার আবছায়াটা তুমি যখন রেখে দেবে আবার জমা। বাবা তখন অনেক দুরে মুচকি হাসবে। এই পৃথিবী অবাক হবে, জানবে তখন সকল সময় সকল মানুষ গৌন না। ভালোবাসা মৌনতা

অলৌকিক বৃষ্টির পর

কথা হয়েছিলো, বসন্তের মাঝামাঝি যখন এ শহর সবুজ হয়ে উঠবে, যখন সড়ক দ্বীপ থেকে হাত বাড়াবে নানান রঙের ফুল, আমরা তখন হাঁটতে বেরুবো। শীত লেগে জমে থাকা সাইকেলের প্যাডেল আবার ঘুরবে দারুন জোরে। বাতাসের ঝাপটায়, ভুল করে রয়ে যাওয়া পুরনো পাতাটি টুপ করে ঝরে পড়বে গাছ থেকে। বিগত শীতের চিহ্ন ধরে রাখা ভোরে, পাতলা শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লে আম্মা তোমাকে একটা সোয়েটার এগিয়ে দেবেন। দরগার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আব্বা মুচকি হাসবেন। আমাদের ছেলেরা লাল চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বসে থাকবে। বাড়ি ফিরে গেলে অভিমানে গাল ফোলাবে। দেরি হলো বলে তুমি কিশোরীর মতো লজ্জা পাবে। ইমাম সাহেব বাড়ীর সামনে দিয়ে যেতে যেতে হাক দিয়ে বলবেন, 'ও কারীব আইজ মাদানে তুমাতান বাড়ীত খাওয়াত আইমু।' তিন শিশু দৌড়ে শিউলি তলায় গিয়ে হাত নাড়বে। হাজেরা গরম গরম রুটি নিয়ে এসে বলবে, মামা 'জলদি খান, পরে শক্ত ওইযাইবো।' আম্মা বলবেন, 'ও ফুড়িন আইজনু শুক্কুরবার, ভালামন্দ রান্দার ব্যবস্থা করো।' হঠাৎ নেমে আসা অলৌকিক বৃষ্টিতে সব ধুয়ে মুছে যাবার পর যে টলটলে রোদ আসবে। আকাশ যখন আরো বেশী নীল হবে, জল হবে আরো স্বচ্ছ, তখন যে ফাগুন আসবে প্রথম, তুমি আমার তিন ছেলেকে

হাসপাতালের দিনগুলো

Image
তখন পাতলা ঝোলের মুরগির মাংস আর আলু দিয়ে একটা তরকারি থাকতো, সাথে ডাল আর মোটা চালের ভাত। বড় বড় সসপ্যান ভর্তি করে ট্রলিতে ঠেলতে ঠেলতে ওয়ার্ডের মাঝ বরাবর এসে দাঁড়াতেন মাসি অথবা ওয়ার্ডবয়। ওসমানী হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডের সেইসব দিনে, আমার শৈশবে ফিরে গেলে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন আর আন্তরিকতার দেখা পাই। এলুমিনিয়ামের টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে সেখানে যারাই যেতেন, দুরন্ত ক্ষ্যাপা আমাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা তাদের কারো ছিলোনা। সাদা বিছানায় পা তুলে গুটিসুটি মেরে বসে থাকার নিয়ম ছিলো। খাবারের ট্রলিতে আসা ঘ্রাণের দিকে আড়চোখে তাকাতাম। একদিন আম্মা বলেন, "খাইতায়নি"? আত্মবিশ্বাসহীন কণ্ঠে হ্যাঁ বলি। আম্মা প্লেটে করে অল্প একটু ভাত, হলুদ রঙের ছোট্ট এক টুকরা মাংস আর আলু নিয়ে আসেন। আমি বিছানায় বসে পা দোলাতে থাকি, আম্মা ভাত মুখে তুলে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করেন, "মজা"? আমি মাথা নাড়ি শুধু। আবার জিজ্ঞেস করেন, "আম্মারটার চেয়ে বেশি"? আবারও মাথা নাড়ি। আম্মা হাসেন। এরপর যতদিন খাবারের সময় হাসপাতালে গেছি, আমি না চাইলেও ট্রলিওয়ালা মাসি খাবার দিয়ে যেতেন আমার জন্য। বলতেন, "পুয়ায় মজা করি খাইন দিদি, খাওয়া