Posts

Showing posts from 2012

চিঠি: বাবাইকে

এভাবে বেড়ে উঠলে বাবাকে ছাড়িয়ে তুমি বুক টান করে দাঁড়াতে শিখে যাবে আর কটা দিন পরেই। তোমার সদ্য কাটা চুল হাত গুটিয়ে পরা সাদা শার্ট, নাবিকের নীল প্যান্ট, কালো পলিশ করা জুতো… আমি কিযে মুগ্ধতায় তোমারে দেখি… বাবার কথা মনে পড়ে শুধু। আমি বুঝতে পারি, বাবা কেমন চোখে দেখতেন আমারে… তোমার সাথে কথায় পারি না এখনই, তোমার মতো মানবিকবোধও নাই আমার আমি শুধু মুগ্ধ হতে জানি, তোমার ফড়িং বন্ধুর মতো আমি তোমার আরেকটা বন্ধু হতে চাই, এ্যাকুরিয়ামে রাখা সোনালী মাছের মতো নিয়ত সাতরাতে চাই তোমার মনে! জানি সেসব সম্ভব নয় আমার জীবনে… তুমি জানবে, তোমাকে জানানো হবে এক ব্যর্থ পিতার সন্তান তুমি। পিতাকে নিয়ে অহংকারী কোন উচ্চারণ তোমার থাকবে না বাবাই শুধুমাত্র একটা ঘোষনা তুমি বুক উচিয়ে দিতে পারো চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে দাঁড়িয়ে- ‘তোমার বাবা, কালো বোকা মানুষটা ভীষণ ভালোবাসতো তোমায় …

বাড়ি ফেরা

আজ গরম খুব বেশি। শ্রাবণ মাসের তপ্ত রোদ। এই মাসটা বৃষ্টির মাস। বৃষ্টি মানেই একটা কোমল ভাবনা, কোমল সময়। রবীন্দ্রনাথ বৃষ্টি নিয়ে কতো রকম আমোদে কাব্য রচনা করেছেন। কিন্তু সব কিছুই এখন উল্টে গেছে। গত তিনদিন ধরে টানা রোদ দিচ্ছে। আকাশে একফোটা মেঘ নেই। এরকম রোদ আরো কয়েকদিন হয়তো চলবে। অবশ্য এই মাসটার কোন তাল নেই। কোন ফাকে দেখা যাবে কোত্থেকে টেনে হিচড়ে মেঘ নিয়ে এসেছে, তারপর ঝুম... রাহাত চিন্তা করে দেখেছে, প্রকৃতি সবসময় তার সাথে বৈরি আচরণ করে। যখন একটু ছায়া দরকার তার, তখন দেখা যাবে আকাশে এক টুকরা মেঘও নেই। আর যখন তার রোদ দরকার তখন দেখা যাবে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তিন রাস্তার মোড়টাতে দাড়িয়ে রিকশা খুজতে খুজতে ঘামে প্রায় গোসল হয়ে যাচ্ছে তার। না পাচ্ছে রিক্সা না পাচ্ছে ছায়া। ফোন বাজে প্যান্টের পকেটে। ময়নাবাবু নিশ্চয়। হ্যা, দাদুর ফোন থেকে রিং করেছে। ইদানিং এই এক মজা হয়েছে তার। বাবার নাম্বারটা মুখস্থ করেছে। তাই যখন ইচ্ছে তখন যারতার ফোন থেকে কল করে ফেলে। সেদিন স্কুল থেকে ফোন দিয়েছে। ক্লাস টিচারের ফোন থেকে। বিষয়টা ভাবতেই বিব্রত হতে হয়। আজকে এই নিয়ে তিনবার হলো। ফোন ধরেই এক কথা, বাবা ফুলঝরি বাতি

আয়ুষ্কাল

আমিনুল ভাই তখন  আটত্রিশ বছরের যুবক। কিন্তু দেখলে মনে হয়  কমপক্ষে পঞ্চাশ তার বয়েস। লম্বা পানজাবী, মাথায় টুপি, তার সাথে মিল রেখে গালে পাতলা দাড়ি। তাবলিগের চিল্লা দিয়ে বেড়ায়। উত্তরের কোন এক জেলা থেকে লম্বা তাবলিগী সফর দিয়ে সে আমাদের বাড়িতে এলো। তখন দুপুর, মার্চ মাসের হালকা গরমের দুপুর। তার গাল  ভেঙ্গে বেশ ঢুকে গেছে। চোখের নিচে কালি। ঝোলার মতো ব্যাগটা কোন মতে দরজার কাছে রেখেই সে সটান শুয়ে পড়লো মেঝেতে। বাড়িতে হট্টগোল শুরু হলো। আমিনুল ভাই এর গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। সে কোনমতে বাড়ি পর্যন্ত এসেছে, আর কোলাতে পারছে না। আব্বা বিকেলে বাড়িতে ফিরেই শুরু করলেন গালাগালি। তাবলিগীর গোষ্ঠি উদ্ধার করতে লাগলেন। আমিনুল ভাই চিচি করে মিহি কণ্ঠে শুধু চাচার হেদায়েত কামনা করছিলো। কিন্তু সেটা এমনভাবে, যেনো আব্বার কানে না পৌছে। আব্বা পারেনতো তখনই বাড়ি থেকে তারে বের করে দেন। তাবলীগের মতো বেকার কাজে যে জোয়ান ছেলে সময় কাটায় তার কোন দরকার নাই। আম্মা নানান চেষ্টায় আব্বারে সামলালেন সে যাত্রায়। আমিনুল ভাই বাড়িতে আসার পর পরই মা বাড়ির পুরনো লোক মনতেরার বাপকে গ্রামের বাড়িতে পাঠালেন। সে সন্ধ্

ফোন বিল

ফোন বিল এলো, একাশি টাকার গতমাসে এসেছিলো, তার আগের মাসে, তারও আগের মাসে, প্রতিমাসে একটা করে, প্রতিবারই একাশি টাকা... মূলত, একা মানুষের ফোন থাকতে পারে হয়তো, কথা বলার কেউ থাকে না

না কবিতা

আমি কবি হতে চেয়েছি সবসময়। কবিতায় যাপন করতে চেয়েছি জীবন। বাউল হতে চেয়েছি। নগ্ন পায়ে হেটে যেতে চেয়েছি খোলা প্রান্তরে, রাত আর চাঁদকে নিয়ে পাড়ি দিতে চেয়েছি আমার সারাটা জীবন। সেসব কিছুই হয় নি। কারন নিজের ভেতরের আমিকে আমার বাইরের আমি কখনই ছাড় দেয়নি। সংসার ভালো লাগে না আমার তবু গৃহেই বসবাস। এই বৈপরিত্ত অথবা ভণ্ডামী নিয়েই আমার নিত্যদিন। কবিতা লেখার এবং কবিতা যাপনে ব্যর্থ হলে মানুষটা আর মানুষ থাকে না। আর যে মাঝামাঝি আটকে থাকে সে একটা কিম্ভুতে পরিণত হয়। সম্ভবত আমিও একটা কিম্ভুত। জোর জবরদস্তি করে আমি প্রায়শঃ এটা সেটা লিখে ফেলি এবং পদ্য বলে ভান করি। সেসবে নেমে আসা কিছু পদ হয়তো থাকে, বাকিটা ইট-সিমেন্টের কারিকুরির মতো। কাগজে, কিংবা কম্পিউটারে মাঝে মাঝে একটা-দুটো লাইন কেমন করে যে আসে... আমি সেসবের সুরাহা করতে পারি না অনেক সময়। প্রবল আলস্য আমার, চেষ্টাও খুব বেশি করি না। টুকরো টাকরা কাগজ একসময় উড়ে যায়, হারিয়ে যায়। কিন্তু জিমেইলের ড্রাফ্ট কিংবা কম্পিউটারে হঠাৎ খোলা কোন ওয়ার্ড ফাইলে টোকে রাখা কিছু লাইন মাঝে মাঝে খুলে যায়। আমি সেসব দেখি, পড়ি, কিন্তু তাদের আর কোন গতি হয

রেনুকা

শান্ত, স্নিগ্ধ, স্রোতময় জলধারা তুমি নীলাকাশ যেনো মিশেছে নতজানু হয়ে তোমার পায়। আমি মুগ্ধ কিশোরের মতো তোমারে দেখি, আমি তোমার কোমলে ভাসাই নিজেরে... আর বড় অসহায় লাগে, যখন দেখি তোমার ষোল আনার দখল নিয়েছে পাইক-পেয়াদাতে, আমি এক বোকালবাব, জলকাতর, ভালোবাসারও যার নাই অধিকার। তবু তুমি জেনে রাখো রেনুকা, তোমারে ভালোবাসবে না আর কেউ আমার মতো, আমি ছাড়া আর নাই কোন যোগ্য প্রেমিক তোমার... রেনুকা, জলবতী আমার, ভালোবাসতে দেবে?

সন্তাপ ০২

০৯.০৭.১২ প্রথম ঘন্টায় হিসেবে মিলেছে গত ঘন্টার কণ্ঠস্বর দ্বিতীয় দিনে বলেছি গতকাল, এভাবে প্রতিদিন পূর্ববর্তি দিনকে টেনে এনেছি … অষ্টম দিবসে এসে আর 'গত' বলতে পারি না বলতে হয় গত বৃহস্পতির আগের বৃহস্পতিবার! হায়, এত দ্রুত তুমি দুরে সরে যাও হায়, এত দ্রুত তুমি স্মৃতি হও! শূন্যতা কল লিস্ট থেকে তোমর নামটা উধাও শেষবার দেখেছি ১৩৪ টা মিস্ড কল ৩২ টা কল আর ডায়াল লিস্টে কিছুই নেই! হু, কিছুই নেই, আমি তোমাকে ফোন করিনি ইদানিংকালে, কোনদিনই না মনে হয়, ঘন্টায় ঘন্টায় উল্টোদিক থেকে কথা বলা হলে এপাশ থেকে কি সেরকম টান থাকে? থাকে না বোধয় ১৩৪ টা মিস্ড কল মানে কমপক্ষে তিরিশটা সকাল, বিশটা দুরের যাত্রা, কমপক্ষে বিশবার তোমাকে উপেক্ষা! সবকিছু মনে পড়ে না, মনে পড়বে না। শুধু শেষবার, জীবনের শেষবার, চলে যাবার ঠিক আগে আগে একেবারে স্বাভাবিক কণ্ঠে যখন বল্লে, ‘শরীরটা খারাপ লাগছে একটু আয়,’ এই কথাটা ভুলবো না। কল লিস্ট থেকে তোমার নাম মুছে গেছে, আরো অনেক লিস্ট থেকে কাটা পড়বে তোমার নাম, শুধু খুব গোপনে গভীরে আমার কানে বাজবে, শরীরটা খারাপ লাগছে, খারাপ লাগছে, খারাপ লাগছে… কি অপার

ইজা...

বাবার শরীরে একটা ঘ্রাণ ছিলো। ঘাম জমে জমে সম্ভবত ঘ্রাণটা তৈরি হতো। মায়া মায়া একটা ঘ্রাণ। বাবার কাপড় চোপড়ে সেই ঘ্রাণ। বাবার বিছানায় সেই ঘ্রাণ... আর কেউ সেই ঘ্রাণ পেতো কী না জানি না। আমি পেতাম। বাবার গামছায় লেগে থাকা ঘ্রাণ নিতে রোজ সকালে আমি মুখ ধুয়ে তার রুমে ঢুকতাম। বাবা সম্ভবত সেটা জানতেন। ভোরে ওঠা ছিলো বাবার অভ্যাস। ওজু পড়ে গামছায় হাত মুখ মুছে আলনার একটা পাশে সেটা মেলে দিতেন। আমি সেই গামছায় মুখ মুছতে মুছতে বাবার সাথে কথা বলতাম। গুরুত্বহীন আলাপ সেসব। আমি আলাপের আড়ালে ঘ্রাণ গিলতাম। বাবার ঘ্রাণ...