Posts

Showing posts from April, 2022

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

ফুপু বছরে একবারই আসতেন। বাক্স পেটরা বোঁচকা বুচকি নিয়ে। তখন আমরা বিশ্বনাথে থাকি। লাল ইটের একটা বাড়ি। খোলা উঠান। বড় খেলার মাঠ। বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, প্রাইমারি স্কুল। ফুপু এলেন রোজার আগে। এসেই আমাদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে এক প্রস্ত কান্নাকাটি করলেন। বিলাপ দিয়ে কান্না। আব্বা বল্লেন, কান্নাকাটি শুনলে মানুষ ভাববে, পোস্ট মাস্টার মারা গেছে... ফুপু এ কথা শোনে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আব্বা সুড়ুৎ করে বেরিয়ে গেলেন। হয়তো রনজিত কাকার সাথে আড্ডা দিতে। কাকা তখন রামসুন্দর স্কুলের শিক্ষক। দীর্ঘ বছর পর দুই বাল্যবন্ধুর দেখা হয়েছে তখন। তারা চুটিয়ে সেই সময়টা উপভোগ করেছেন। কান্নাকাটি এবং আমার কেউ নাই বিলাপ শেষ করে ফুপু ব্যাগের ভেতর থেকে ছোট একটা কাঁথা বের করে সেলাই করতে শুরু করলেন! এটা এতই ছোট ছিলো যে, তখনকার পিচ্চি হাসানের কাঁথাও এরচে বড় ছিলো! আমাদের ঘরে তখন সকাল বিকেল লুডু খেলা হতো। বলতে গেলে লুডুর বোর্ডের মাপের সেই কাঁথা। বিস্ময় নিয়ে কাথা তৈরি দেখতে থাকলাম। ফুপু অসাধারণ সব সেলাইয়ের কাজ জানতেন তখন। দেখতে দেখতে কাথাটা আস্ত একটা নকশায় পরিণত

শুভ হালখাতা

নববর্ষ বলে কিছু চিনতাম না তখন। চিনতাম হালখাতা। স্মৃতির ছড়ানো মুড়ি মুড়কি জড়ো করতে গেলে যে উজ্জল সময়টা সামনে আসে, সেটা সম্ভবত ৯৩/৯৪ সাল হবে। ইংরেজি ৮৬/৮৭। জগন্নাথপুর বাজারে কাকাবাবুর দোকানে নতুন খাতা খোলা হতো। একদম সকালে হাড়িতে করে মিস্টি চলে আসতো। এরপর আব্বার হাত ধরে চলে যেতাম বাজারে। দোকানের ভেতর থেকে ডাক আসতো, ' ও মাস্টসসাব, আউক্কাতে...' আব্বা হাত নেড়ে বলতেন, 'থুড়া চক্কর দিলাই আগে...' আব্বার চক্কর বলতে লম্বা কোন দৌড় ছিলোনা। নির্দিষ্ট কয়েকটা দোকান ঘুরে তিনি কাকাবাবুর গদিতে এসে বসে যেতেন। ততক্ষণে মিস্টিতে আমার পেট টইটুম্বুর হয়ে যেতো। আব্বা মাথা নাড়লে আমি হাফপ্যান্টের কোমরে ধরে দিতাম দৌড়! ( হাফপ্যান্টের কোমর ধরা বিষয়ে নিজের কোন স্মৃতি নাই। আমার শৈশব বেঁচে আছে যাদের স্মৃতিতে, তারা বলেছেন এই গল্প!) আম্মা ভালো দেখে শাড়ি পরতেন। পোলাও রান্না হতো। এসবই আসলে বিচ্ছিন্ন বৈশাখের স্মৃতি। ফুফুত ভাই করিম, আমাদের বাড়িকে শিন্নি বাড়ি বলতো, তার কারণ মনেহয় এই যে, এমন কোন দিনে সেও ফুফার সাথে মাদানে খেতে এসেছিলো আর আম্মা তাকে মুরগির মাংসের সাথে পোলাও তুলে দিয়েছিলেন পাতে। করিম অভিমানে সব ছেড়ে

আত্মজ শোনো, বলি

আমি সেইসব সাধারণের একজন যার জীবন মূলতঃ নিস্তরঙ্গ। মাদানর খানির পরে নানাবাড়ীর উঠোনে নেমে আসা অবাক দুপুরের মতো একা। উত্তরের টিলার এষনায় অজানা অচেনা গাছের মতো, পাতার স্পর্শে যাদের ছোঁয়া যায় তারাও প্রজাতিতে ভিন্ন, অনাত্মীয়। আমার কোন খ্যাতি নাই। চৌরাস্তায় দাঁড়ালে হঠাৎ আহ্লাদে কেউ বলবেনা, 'কেমন আছো?' কাঁচাবাজারে তরুণী লাউ এগিয়ে দিয়ে সব্জিওয়ালা কখনই বলেনি, 'বাইসাব নেউক্কা, আপনার লাগি আগলাইয়া রাখছিলাম'। পাশের গায়ের লোকটাও জানেনা আমার ঠিকানা। পেছনের বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিলাম জীবনের ইশকুল। তুই বলার কোন সহপাঠী নাই আমার। কেউ কোনদিন আঁকেনাই আমার ছবি, তুলিতে রেখায়। সবাই দাঁড়িয়ে যখন হেসেছে, একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরেছে লাস্যে, আমি ছিলাম ক্যামেরায়। স্থিরচিত্রে পাবেনা আমায়। ১২/০৪/২০২১ সোনাজাদুরা আমার, তোমাদের বুকের ভেতর মন পকেটে আলতো করে এই আমাকে রেখে দিও। মাঝে মাঝে স্মৃতি ফেলার সময় হলে ফেলতে গিয়েও সাদাকালো এই বাবাটার আবছায়াটা তুমি যখন রেখে দেবে আবার জমা। বাবা তখন অনেক দুরে মুচকি হাসবে। এই পৃথিবী অবাক হবে, জানবে তখন সকল সময় সকল মানুষ গৌন না। ভালোবাসা মৌনতা

অলৌকিক বৃষ্টির পর

কথা হয়েছিলো, বসন্তের মাঝামাঝি যখন এ শহর সবুজ হয়ে উঠবে, যখন সড়ক দ্বীপ থেকে হাত বাড়াবে নানান রঙের ফুল, আমরা তখন হাঁটতে বেরুবো। শীত লেগে জমে থাকা সাইকেলের প্যাডেল আবার ঘুরবে দারুন জোরে। বাতাসের ঝাপটায়, ভুল করে রয়ে যাওয়া পুরনো পাতাটি টুপ করে ঝরে পড়বে গাছ থেকে। বিগত শীতের চিহ্ন ধরে রাখা ভোরে, পাতলা শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লে আম্মা তোমাকে একটা সোয়েটার এগিয়ে দেবেন। দরগার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আব্বা মুচকি হাসবেন। আমাদের ছেলেরা লাল চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বসে থাকবে। বাড়ি ফিরে গেলে অভিমানে গাল ফোলাবে। দেরি হলো বলে তুমি কিশোরীর মতো লজ্জা পাবে। ইমাম সাহেব বাড়ীর সামনে দিয়ে যেতে যেতে হাক দিয়ে বলবেন, 'ও কারীব আইজ মাদানে তুমাতান বাড়ীত খাওয়াত আইমু।' তিন শিশু দৌড়ে শিউলি তলায় গিয়ে হাত নাড়বে। হাজেরা গরম গরম রুটি নিয়ে এসে বলবে, মামা 'জলদি খান, পরে শক্ত ওইযাইবো।' আম্মা বলবেন, 'ও ফুড়িন আইজনু শুক্কুরবার, ভালামন্দ রান্দার ব্যবস্থা করো।' হঠাৎ নেমে আসা অলৌকিক বৃষ্টিতে সব ধুয়ে মুছে যাবার পর যে টলটলে রোদ আসবে। আকাশ যখন আরো বেশী নীল হবে, জল হবে আরো স্বচ্ছ, তখন যে ফাগুন আসবে প্রথম, তুমি আমার তিন ছেলেকে