Posts

Showing posts from 2014

পূনর্জীবনের ইসলাম

ইসলাম পূনর্জীবন লাভ করে প্রতিটি কারবালার পর। এরকম একটা কথা বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে খুব প্রচলিত এবং জনপ্রিয় বটে। এবং সেটা উর্দুতেই বলা হয়ে থাকে সবসময়। সে হিসাবে এটি সম্ভবত উর্দু থেকেই এসেছে। কারবালা ইসলামের ইতিহাসের এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়। নিষ্ঠুরতা, শঠতা, প্রবঞ্চনার ইতিহাস এই কারবালা। তো কারবালার কথা যখন এভাবে বলা হয়, তখন আম মুসলমানের মনে এটাই খেলা করে যে, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের ভাষায় বিধর্মীদের আরেকটা মহা ষড়যন্ত্র এই কারবালা। কিন্তু আদতেতো তা নয়। কারবালা মুসলমানের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরই যুদ্ধ। এবং এটা প্রথম যুদ্ধ নয়। এর আগে ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.) নিহত হয়েছেন স্বজাতির হাতে। চতুর্থ খলিফা আলী (রা.) যুদ্ধ করেছেন স্বয়ং নবী (স.) এর প্রিয়তম পত্নী আয়শার (রা.) বিরুদ্ধে। এই দুটি বড় ঘটনার বাইরেও যুদ্ধ অথবা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি আরও তৈরি হয়েছে কারবালা পুর্ববর্তী নাতিদীর্ঘ সময়ে। কিন্তু সেসবকে ছাপিয়ে কারবালা অন্য মহিমায় স্থান করে নেয় ইতিহাসে। এর পেছনে সম্ভবত মুসলিম নৃশংসতার একটা বড় অবদান আছে। মুসলমানদের উপর মুসলমানদের সবচেয়ে নৃশংস কর্মকান্ড এই যুদ্ধের মাধ্যমেই প্রকা

হিঙ্কলি রোড কর্নার

মোড়ের পাশের ফুলের দোকানটা বন্ধ হয়ে গেল। ফুলের দোকান, তারপর একটা চিকেন এন্ড চিপসের দোকান, এরপর নাপিতের দোকান তারপর টনি পাপটের অফ লাইসেন্স। এর ঠিক লাগোয়া বাসস্টপ। বাসস্টপে সারাদিন হুইল চেয়ার নিয়ে বসে থাকে ডেভিড। সামনে দিয়ে যে-ই যাক, নিচু গলায় ভাংতি পয়সা চায়। কেউ দেয়, কেউ দেয় না। সে বসেই থাকে। পাশ দিয়ে কোনো বাচ্চা যদি বাবার সাথে যায় তখন শুধু একটু উঁচু গলায় বলে, বাবাকে আঁকড়ে ধরো, জাপটে ধরো, দুনিয়ায় এই একটাই বাবা তোমার! রোজ যারা হাঁটে এই পথে তারা ছাড়া, নতুন বাচ্চারা একটু ভয় পায় আর বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে। যারা জেনে গেছে ডেভিডকে, তারা আগে থেকেই ধরে থাকে হাত আর একটু সাহসী যারা তারা হাতটা একটু উঁচু করে ডেভিডকে দেখিয়ে দেয়। ডেভিড কখনো বাচ্চাদের কাছে পয়সা চায় না। বাচ্চা থাকে যেসব বাবা মায়ের সাথে তাদের কাছে পয়সা চায় না। রাত আটটায় টনি তার দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় সস্তা বিয়ারের একটা ক্যান ধরিয়ে দেয় ডেভিডের হাতে। তারপর নির্জন হতে থাকা বাসস্টপে ডেভিড বসে থাকে। টনি অফলাইসেন্সের নিয়ন সাইনটা একবার জ্বলে আর একবার নিভে, বাড়ি ফিরে যাবার আগ পর্যন্ত ডেভিডের মুখে খেলা করে সেই আলো। ফুলের দোকানের

বাফর ঠিক্নাই

আমার শিশু বয়েস থেকেই আব্বারে তার ঢং সম্পর্কের লোকজন বুড়া বলে ডাকতো। আমারে বলতো বুড়ার পোলা! আমিতো চেইত্যা মেইত্যা শেষ... ক্যান আমার আব্বারে বুড়া বলবে, ক্যান আমারে বুড়ার পোলা বলবে। তারা বলতো, তোর বাপের ইয়া বড়ো দাড়ি আছে, মাথায় কিস্তি টুপি পরে!!! এইটা ঠিক, আব্বার ইয়া বড়ো দাড়ি, টুপি, সাথে সার্বক্ষণিক পাঞ্জাবি। বুড়া না বলে করবে কি লোকে? কিন্তু আমার উত্তর একটা ছিলো তখনও, বলতাম, আব্বার মাথার চুল গুলো হঠাৎ করে সরে গিয়ে মুখের দিকে চলে আসছে বলে দাড়ি হয়ে গেছে, আর মাথার চুল সরে যাওয়ায় সেটা ঢেকে রাখার জন্যই টুপি পরে! এইটা একটা বাস্তব সম্মত যুক্তি হিসাবেই আমি বলতাম। কিন্তু আমার পুংটা মামুরা সেইটা মানতো না। তারা বিতিকিচ্ছরি কাণ্ড করতো, অন্তত যতক্ষণ না আমি নানাবাড়ির উঠানের ঠিক মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে কানতে শুরু করতাম, কিংবা চ্যালা কাঠ নিয়ে ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে নানাবাড়ির ১০ তলা সমান টিলা থেকে নিচে নামিয়ে না দিতাম, ততক্ষণ চলতে থাকতো। বেশিরভাগ সময় নানীর কঠোর হস্তক্ষেপে আমি উদ্বার পেতাম। তখন রাগ হতো আব্বার উপর, কি দরকার ছিলো এতো তাড়াতাড়ি দাড়ি রেখে ফেলার! কই আবুল হায়াততো দাড়ি রাখে নাই! তো সময় যত যেতে লাগলো

শিরোনামের সঙ'বাদ, সংবাদের শিরোনাম

সিলেটে একসময় বন্দরবাজারে গেলে আজব কিছু পত্রিকা পাওয়া যেতো। মাঝে মাঝে সেসব পত্রিকা মাইক দিয়ে ডেকে ডেকেও বিক্রি হতো। সম্ভবত দেশের অন্য অঞ্চলেও এটা হতো। কারণ পত্রিকাগুলো ঢাকা থেকে বের হতো। বিচিত্রসব খবর, তারচেয়ে অধিক বিচিত্র শিরোনাম ছিলো সেসবের। যেমন একদিন প্রধান শিরোনাম ছিলো 'অবৈধ সন্তানের মা হতে চলেছেন খালেদা'! সেটা আবার মাইকে বলা হচ্ছে, একেবারে গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্টাইলে। আমাদের বদর মামা বিরাট রসিক লোক। সারাদিন টো টো করে সিলেট শহর ঘুরে বেড়ান। পায়ে হেঁটে। তিনি একটা পত্রিকা কিনলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সেটা নিয়ে হুলস্থুল। যতরকমভাবে মজা করা যায় সেটা করে তারপর জানা গেলো কোন এক প্রান্তিক জনপদের খালেদা নামের এক তরুণী, প্রেম করেছিলেন। এখন মা হবেন, কিন্তু প্রেমিক সটকে পড়েছে। তখন ধর্ষিতা বা নির্যাতিতার নাম প্রকাশে নিষেধ ছিলো না। তাই নাম দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিষয় সেটা নয়, বিষয় হচ্ছে 'খালেদা' নামটি। খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী। মাত্রই তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ তাকে নিয়ে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ, যাদের কাছে দেশের শাসক হিসাবে নারী বিষয়টাই অদ্ভুত। তো সেই ম

শুক্কুরবার, বাবা, আমি

শুক্কুরবার রাত থেকেই আসলে মজা শুরু। বাবা সেদিন একটু দেরি করে ফেরে যদিও, কিন্তু মজা হয়। এম্নিতে রোজ বিকালে প্লে-গ্রাউন্ডে যাই। অনেক্ষন থাকি সেখানে। কিন্তু শুক্কুরবারে আগে আগে চলে আসি। যদিও সেদিনই বাবা দেরি করে বাড়ি ফিরে, তবুও। আমাদের বসার ঘরের জানলা দিয়ে তাকালে উঠোন পেরিয়ে একেবারে বাস স্টপ পর্যন্ত দেখা যায়। আমি ঘরে ফিরেই সেই জানলার ধারে বসে পড়ি। অন্যদিন বাড়ি এসে হাত ধোয়া, মুখ ধোয়া, ঘামে ভেজা কাপড় বদলানো কতো কিছু করতে হয়, কিন্তু শুক্কুরবারে সেসব নেই। আগে মা জোরাজুরি করতো, এখন আর করে না। জানে বাবা না আসলে শুক্কুরবারে সেসব কিছুই হবে না। আমি জানলার ধারে বসে বসে দেখি বাবা কখন আসে। বাবার দুহাত ভরে থাকে ব্যাগ, সারা সপ্তার বাজার সেখানে। অফিস শেষে বাজার করে, তারপর বাড়ি ফেরে। বাজারের ভারে বাবা নুয়ে পড়ে যেনো। কাঁধটা ঝুলে থাকে, মাথা নিচু। তবু বাবা একটু পর পর চোখ তুলে তাকাবে আমাদের জানলায়, দেখবে আমাকে দেখা যায় কীনা। এর আগে জানলার ধারে বসা থাকলেও ঠিক তখন আমি লুকিয়ে যাবো। জানালার পাশের দেয়ালে নিজের শরীরটা আড়াল করে শুধু চোখটা পর্দার ফাঁকে দিয়ে দেখছি বাবা হাঁটছে আর আমাকে দেখার চেস্টা করছে। কিযে মজা

এবং বন্ধুতা...

ঝুমুর বয়েসে বড় ছিলো আমাদের, তাই নামের শেষে দাদা যোগ করে সে আমাদের বন্ধু হয়ে গেলো। ঝুমুরদা। মূলত এটা একটা নামই শেষ পর্যন্ত। ওসব দাদাগীরি কি আর চলতো! দীর্ঘ বছর আমরা আড্ডা দিয়েছি। উদ্দাম তারুণ্য বলতে যে সময়টা থাকে, ঠিক সেই সময়ের বন্ধুদের একজন ঝুমুর। এই বয়েসে একটা দলের সাথেতো আর সময় কাটানো যায়না। নানা ধরণের বন্ধু বান্ধব জুটে যায়। তারপর বয়েস বাড়ার সাথে সাথে যেকোন একজন, দুজন অথবা বিশেষ একটা গ্রুপের সাথে যোগাযোগ হয়তো বেশি থাকে, অন্যদের সাথে সেটা কমে। কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ধই হয়ে যায়। স্টেডিয়াম পাড়ার সৈকত রেস্তোরাতে বসে আমরা যারা আড্ডাবাজি করতাম, সেটা খেলাধুলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিলো। সেই গ্রুপে কেউ ক্রিকেট খেলতো, কেউ হকি, কেউ ফুটবল। কোন ধরণের খেলাধুলা না করেও আমি আর শামীম সেই গ্রুপে কেমন করে ঢুকে গিয়েছিলাম সেটা আর মনে নাই। কিন্তু টানা ৪/৫ বছর সেই আড্ডাটায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছি আমরা। আর সেই আড্ডার মধ্যমনি ছিলো এই ঝুমুরদা। বিচিত্র কাণ্ডকারখানা, মজার মজার কথা দিয়ে আড্ডা মাতিয়ে রাখতো। সৈকত রেস্টুরেন্টের টেবিল কিংবা স্টেডিয়ামের যে কোন একটা গ্যালারী দখল করে প্রতিদিনের আড্ডার আজান দিতো

নির্বাসনের পদ্য

এই প্রত্ন শহরে সকলই বিন্যস্ত। পরিপাটি ঘর, শোভন উদ্যান। আলো ঝলমল বিপণী বিতান। এ শহরে মানুষের শাসিত, শৃঙ্খলিত নদী আছে এক, সোয়ার... আছো নির্বাসিত আলবাব। প্রত্ন শহর। অনাত্মীয় শহর। অপরিচিত মানুষের মুখ ৯৯৯ এর পরমাত্মীয় কণ্ঠ ছাড়া আর কেউ নেই তোমার