পথে পথে পড়লাম ছড়াইয়া...


ছুটিবারের লক্ষ্যহীন ঘুরাঘুরিতে মাঝে মাঝে অচেনা সড়কে ঢুকে পড়া যায়। ছুটতে ছুটতে এ পথ থেকে সে পথ ঘুরে আবার চেনা সড়কে ফিরে আসা।


গ্রামে বিচ্ছিন্ন কচুরিপানার মতো একেকটা বাড়ি, মনেহয় ভাসছে যেনোবা। কিন্তু না, এরা স্থির। একা, নির্জন। বিন্যস্থ এই দেশে সবকিছুতেই নাম্বার সাটা আছে। কিন্তু অবাক করা একেকটা বাড়ি, এদের কোন নাম্বার নেই! বরং নাম আছে। আমাদের যেমন উত্তরের বাড়ি, কিংবা নয়া বাড়ি থাকে প্রতিটা গ্রামে, তেমন করে এদেরও আছে। মেনর হাউজ, উডভিল কটেজ, ব্রুম ক্রফট, বেলস এনড... বাহারি সব নাম।


বেশিরভাগই কৃষকদের বাড়িঘর এসব। বাড়ির সামনে মাঝে মাঝে হাতে লেখা এক টুকরো কাগজ কিংবা বোর্ডের দেখা মেলে। কেউ লেটুস বিক্রি করেন। কেউ লিখে রেখেছেন ডিমের জন্য বড় ঘন্টায় টোকা দাও। কেউ টমেটো, মুলোটা, লাউটা বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন। পাশে ছোট একটা বাক্স নয়তো বাটি রাখা। নিজ দায়িত্বে টাকা রেখে জিনিস নিয়ে যাও। এটাই ব্যবস্থা।


"শেয়াল বনের" ছবির মতো এক বাড়ির সামনে খুব কারুকাজ করা একটা বোর্ড লাগানো ছিলো। ওতে লেখা, 'বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়'। পাশেই কার্ড বোর্ড কেটে মোমবাতি বানিয়ে লিখে রাখা হয়েছে, হাতে বানানো মোমবাতি বিক্রি হয়।



বাড়ির সদর দরোজার পাশে ছোট একটা শেলফে সাজিয়ে রাখা আছে মধু। সামনেই একটা ট্রে-তে মোমবাতি। এক বয়াম মধু পাঁচ পাউন্ড। এমনিতে বাক্স বা টাকা রাখার পাত্র খোলাই থাকে। ভাঙতির দরকার পড়লে নিজেই নিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু এই বাড়ির মানুষ বেশ সাবধানী। তালা দেওয়া ক্যাশ বাক্সো রাখা। পকেট হাতড়ে পাঁচ পাউন্ড পাচ্ছিলামনা যখন, তখনই সামনে এলেন কিষাণী, "সান! হাও ক্যান আই হেল্প ইউ?" বল্লাম ভাংতি নাই। তিনি তুরতুর করে বাড়ির ভেতরে গিয়ে দুইটা পাঁচ পাউন্ডের নোট নিয়ে বেরিয়ে এলেন। আমি দশ পাউন্ডের নোট বাড়িয়ে দিতেই পাঁচ পাউন্ড আমাকে দিয়ে অন্য নোটটা ক্যাশ বাক্সে ঢুকিয়ে রাখলেন! তারপর শুরু হলো সাক্ষাৎকার পর্ব।


কোথায় থাকি? কোন দেশের মানুষ? পরিবারে কে কে আছে? নিজের কথাও বলে চলেছেন। মধুর বাক্সো দেখালেন। বাগান করছেন। আলু, শিম, কজেট... ঘুরে ঘুরে দেখালেন। আপেল গাছ আছে অনেকগুলো। এই বাড়িতে অনেক বছর ধরে আছেন। আর বেশিদিন থাকা হবেনা। সমুদ্র খুব পছন্দ। ছেলেরা যেখানে থাকে, তার পাশের সমুদ্র শহরে বাড়ি খুঁজছেন। সেদিকটায় চলে যাবেন।


ফিরে আসার সময়, এক প্যাকেট মোম দিয়ে বল্লেন, আমার নিজের হাতে বানানো, তোমার বউকে দিও। পকেটে হাত ঢুকাতেই জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলেন, না না; টাকা দিতে নেই...। আপেল তোলার সময় হলে আবার এসো...


'ধন্যবাদ' কিংবা 'অনেক অনেক ধন্যবাদ' এরকম কাজ চালানো ইংরেজি পর্যন্তই আমার দৌড়। ভালো করে কথা বলতে পারলে, বলতাম, - ও মুরব্বি মাই, ওতো মায়াদারি কেনেগো তুমি? দুনিয়ার লাগি আমার লোভ বাড়াইল্লায়নু আইজ!


হারিয়ে যাবার কাল গত হয়েছে সেই কবে!

প্রপঞ্চের ফেরে কেটে যাবে বাকিটা জীবন।


অগাস্ট ১, ২০২১। ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা