আমাকে আগলে রাখো, রাখো তুমি মায়ায়...




তখন ঘুরতাম। অনেক ঘুরতাম। ঠিক ঠিকানা ছিলোনা এবং সেসব কোন দ্রষ্টব্য স্থানও ছিলোনা। আমারই মতো অনুল্লেখ্য কোন গ্রাম-বাজার কিংবা প্রান্তর।
এই ছবিটা ছাতকের। নদী পেরিয়ে আমরা হেঁটেছিলাম। কয়েক মাইল। সাথে আমার এক বন্ধু ছিলেন। প্রণবেশ উনার নাম। আমরা এমন হারিয়ে যাওয়া হাঁটা অনেকবারই হেঁটেছি।
একটা ভুল হলো, সাথে আরো দুজন ছিলেন। দুজনেই প্রণবেশের বন্ধু। সেদিনই পরিচয়। আর কোনদিন দেখা হয়নি, সম্ভবত আর হবেওনা। একজন আজাদ, অন্যজনের নামটা আজ আর মনে নেই!
অসাধারণ একটা হাঁটাপথ ছিলো সেটা। ছবিতে ধারণ করার মতো নয়। গোপাট, *গোল, ধানি জমিন, টিলার পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ, স্বচ্ছ জলের ছড়া। এ হলো সেইসব গ্রামেদের একটি যেখানে এখনও মানুষ অপরিচিত কাউকে পেলে হেসে কথা কয়। যেকোন বাড়ীর উঠোনে দাঁড়ালে তেষ্টার জল মেলে। যেখানে শিশুরা পরম বিস্ময়ে, অসঙ্কোচে মানুষের দিকে তাকাতে পারে।
আমার মনে আছে, মাটির উঁচু ঢিবির ওপর একটা বাড়িতে গেলাম আমরা। পাহাড়ের ঢল থেকে বাঁচতে এখানে বাড়ি গুলো এমন উঁচুতে তৈরি হয়। মৃদুভাষী এক শিশু সবুজাভ কাচের গ্লাসে করে পানি এনে দিলো। চকচকে সেই গ্লাস থেকে তখনও ফোটা ফোটা পানি ঝরছে। অতিথিকে দেওয়ার আগে সেটা ধোয়া হয়েছে। আহা! মানুষের কতো মমতা
টলটলে জলের একটা ছড়ায় শিশুরা দাপাদাপি করছে। আমরা আসবো বলে সবাই থেমে গেলো, কুটুমের গায়ে পানির ছটা যাতে না লাগে।
সেই স্বচ্ছ জলের ধারা পেরিয়েই অনুচ্চ এক টিলার পাশে দেখা হলো এই ভাইবোনের সাথে। এরাও যথারীতি বিস্ময় নিয়েই তাকিয়ে ছিলেন। কামরা তুলতেই বোনের আড়ালে চলে যেতে চাইলেন ভাই। ভাইকে মমতায় আড়াল করার পাশাপাশি এই শিশুটি মনে করিয়ে দিয়েছিলো, আগলে রাখার জন্য আমার কোন বোন নাই...

*গোল: সিলেটে ছোট ছোট টিলার মধ্যবর্তি সমতল ভূমিকে গোল বলা হয়। 

** জুন ২০, ২০২০। ফেসবুকে লিখেছিলাম।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা