:: সেইসব সময় অথবা তুমি বিষয়ক অথবা কিচ্ছুনা ::


আমার তখন না ঢাকা না সিলেট অবস্থা! আরিফ ভাই, নিজের ভাই, রনি ভাই এমনতর ভাই এবং সঙ্গিয় গৌরী, চেরী, রাজুরা প্রায় প্রতিদিন টানছেন মহানগরের দিকে। সেখানে নাকী আছে আমার জন্য অবারিত প্রান্তর। আমার সকল প্রতিভা(!) বিকষণে সেই নগরীই হবে প্রকৃষ্ট স্থান!

এদিকে প্রাণের শহরে আছেন জননী আমার, আছেন শিশুমনের পিতা। আছে আমার প্রান্তিক। আছে সবুজ ঘনবন, জাফলং টাঙ্গুয়া...। আছে অর্ণা নামের এক মানবী!!! সাথে সাথে আমারই মত বিষয় বুদ্ধিহীন একদঙ্গল বালক বালিকা!!!

ঘরে আবার মাঝে মাঝে কানাঘুষা হয়। সাতসমুদ্র তের নদীর পারের নিকটজনেরা বলেন, চলে আস জাদুধন, পাবে সফেদ স্নেহ আর স্নো...।

এমন এক সময় শহর সিলেটে কতিপয় মানুষ দাড় করাতে চায় পত্রিকা। আমাদের টুকুদা তখন যে কোনভাবেই আমাকে ধরে রাখতে চান শহর সিলেটে! আমি বলি তাইলে একটা চাকরি দেন। বেকার হয়েত আর থাকতে পারিনা! তিনিই খবর জানান সেই পত্রিকার। বিজ্ঞাপনও জোগাড় করে নিয়ে আসেন তখনকার ঘরবাড়ি প্রান্তিকের টিনশেড বারান্দায়।

অর্ণাতো মহা খুশি। আমাকে বুঝায়, সবাই চলে যাক, আমরা দুই বন্ধুতে এই শহরকে আগলে রাখব!!! সেই বালিকা এখন নগর ছেড়ে বৈদেশের পথে পথে ঘুরে ইচ্ছেমত!!!

চাকরিটা হয়ে যায়। আমিও পড়ি সৃষ্টির মায়ায়! ২০০১ সালের মার্চ মাসের ২০ তারিখে প্রবেশ করি চেনা জগতের অচেনা বন্দরে।

সব নতুন ছেলেপিলে। মেয়েও আছে। আমার তখন প্রেমহীন সময়। অর্ণা ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে পারতে কথা বলিনা! আমার যত বন্ধু আছে তাদের প্রায় সবাই তখন শহর ছাড়া। যারা আছে তাদের সাথে কোন এক আজিব কারনে আমার আর তখন খাতির নাই! আজীবন ঝগড়াটে আমি তখন আক্ষরিক অর্থেই খবিশ প্রকৃতির মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই কোননা কোন ভাবে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে চলেছি! ঘরে মা আগলে রাখেন আর বাইরে অর্ণা।

নতুন অফিসে আমার পুরনো বন্ধু পলাশ দত্ত আছে। এছাড়া পুরনো পরিচিত কয়েকজন। তিন বালিকার কাউকেই চিনিনা। চেনার কোন গরজও নাই। আমি আছি আমার কেশরাশি সামলানোতে ব্যাস্ত! প্রায় খোপা করা যায় এমন চুলের মালিক আমি লাল চোখে ধুন্দুমার ঝগড়ায় মাতি সারাদিন। এমন বালকের সামনে কোন বালিকাই সহজে কথা বলতে আসবেনা। আসেনিও।

আমাদের মাঝে ছিল শিপলু। তোতলাতে তোতলাতে সেই আমার সাথে কথা বলিয়ে দেয়, মনিকা, সালমা আর তুলির। আমি কাষ্ট হাসি দিই। এর বেশি প্রেমভাব তখন আমার নাই! আমি শুধু মনে মনে ভাবি কি করবে এই বালিকাগুলো! এরা সাজবে কখন আর কাজ করবে কখন! ( যদিও পরে দেখেছি, এখনও দেখছি এই বালিকাদের ওতে আছে প্রবল আপত্তি )

শিপলু, চয়ন, তুলি, মনিকা মিলে যখন আড্ডায় মাতে আমি তখন আমার কাজে ব্যাস্ত। ভুলেও মুখ তুলে তাকাইনা। তাচ্ছিল্যই করি কিছুটা। সুজোগ পেলে দুই পান্ডারে গাইল দেই, মাইয়া পাইলে আর কিছুই বুঝি মনে থাকেনা। তারা আমাকে সহকর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহারের গুনাগুন বর্ণনা করলে আমি এ বিষয়ে গ্রন্থ লেখার পরামর্শ দেই!

এরপর আছে অনেক কথা। খুটিনাটি সেসবের আর নাইবা হল বর্ণন...

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা