ছেলে আমার বড় হবে

জুন মাসের ১ তারিখে বাবাই স্কুলে গেল। সেদিন আমি যাইনি তার সাথে। দু'দিন আগে ভর্তির ব্যাপারে আলাপ করতে গিয়েছিলাম। গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে ঘরের প্রায় সবাই। মানে আব্বা, আম্মা, দাদাভাই, তুলি আমিসহ। ভাবী যায়নি বাবা (দাদা ভাই এর ছেলে, আমার বাবা) তখনও ঘুমে ছিল বলে।সে এক বৈরাতি বটে।

প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনে বাবাই যখন গাড়িতে উঠে টা টা বাবা বলছিল, আমার বুকে একটা মোচড়ের মতো দিল। মনে হলো ছেলে আমার বড় হচ্ছে বুঝি, তবে বুঝি দুরত্বের সময় এল...

কয়েকদিন পরে আমি ওকে স্কুলে নিয়ে গেলাম। ফটকের ভেতরে আম্মা তাকে নিয়ে গেলেন। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে। কালো প্যান্ট এর নিচে ইন করে সাদা শার্ট পরা ক্ষুদে ক্ষুদে বাবুদের মাঝে মিশে গেল যখন ও আমার আবার মন খারাপ হলো!!! এসব সময়তো আনন্দ হওয়ার কথা। আমার শুধু মন খারাপ করে কেন?

ফেব্রুয়ারীতে বাবাইর জন্ম। এপ্রিল মাসে সম্ভবত আব্বা বড় একটা টাওয়ালে জড়িয়ে বাবাইকে নিয়ে মোটর সাইকেলে চড়ে বসলেন। সেই থেকে বাবাই নিয়মিত মোটর সাইকেল চড়ছে। অবশ্য দুনিয়ায় আসার প্রস্তুতিকালিন সময়টা ধরলে সে মোটর সাইকেলের যাত্রি হিসেবে আরও অনেক সিনিয়ার। আমার আর তুলির প্রিয় বাহন এই দুই চাকার যান। বাবাইর যেদিন জন্ম হলো সেদিনও তুলি হাসপাতালে গেল মোটর সাইকেল চড়ে।

টাওয়ালে জড়ানো, দাদার কোলে বসা তমাল সোনা এরপর মায়ের কোলে বসে মোটর সাইকেল চড়েছে, আরেকটু বড় হয়ে মা-বাবার মাঝখানে বসেছে, একসময় বাবার সামনে বসাও শিখে ফেলেছে। তেলের টেংকের উপর বসে বসে বকবক করতে করতে ক্বিন ব্রিজ, লাক্কাতুড়া, ডলিয়া, চাতল হাওড়ের পার সব যায়গায় গিয়েছে।

গত সপ্তায় সকালে ড্রাইভার দেরি করে আসায় স্কুলে নিয়ে গেলাম মোটর সাইকেলে করে। মাঝখানে বেশ কয়েকদিন সে মোটর সাইকেলে চড়েনি। মোটর সাইকেলে বসতেই খেয়াল করলাম বাবাইর মাথাটা আমার থুতনি পার হয়ে যাচ্ছে! হেলমেটের গার্ডে মাথাটা বার বার খোচা খাচ্ছে! সেটা খুলে ওর মাথায় দিয়ে দিলাম।

গতকাল বিকেলে । অফিস থেকে ফিরতেই দু'ভাই দৌড়ে গেল, একজন মোটর সাইকেল চড়বে, আরেকজন চড়তে চায় বুমবুম! ছোটজনকে টান দিয়ে তুল্লাম সামনে, বড় সাহেবকে আর বলতে হয়না, নিজেই লটকে ফটকে পেছনে বসে আমার বেসাইজ পেটটা জড়িয়ে ধরে বলে, বাবা চালাও...হঠাৱ করেই আমার বুকের ভেতরটায় ঝুপ করে মনখারাপের মেঘ নামে, ছেলে আমার তবে বড় হয়েই যাচ্ছে...

Comments

Popular posts from this blog

বাফর ঠিক্নাই

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

মেঘবাড়ির মানুষেরা সব মেঘেতে লুকাই