এমন চিঠি আর কেউ লিখবে না...
প্রিয় নজমুল আলবাব,
আমার বয়সীরা সাধারণত কনিষ্ঠদের লেখা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের লেখা পড়ে না, পড়লেও স্বীকার করতে চায় না, করলেও প্রশংসায় তাদের শব্দের ঘাটতি পড়ে। ব্যতিক্রম হওয়ার জন্যে নয়, আমি সাম্প্রতিক লেখকদের জানতে চাই, তাদের ভাবনা বুঝতে চাই, তাদের কাছে শিখতেও চাই। আদৌ জানা-পরিচয় নেই, এমন অনেকের লেখা পড়ে ভালো লাগলে নিজের উদ্যোগে যোগাযোগ করেছি, এমন ঘটনা খুব বিরল নয়।
আপনার লেখা এবং তার অন্তর্নিহিত শক্তি নিয়ে আমার মুগ্ধতা আছে, সে কথা প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি। আপনার কাছে আরো অনেক গাঢ় ও গভীর রচনা পাবো আশা করি। কিন্তু খুব দুঃখের সঙ্গে একটি পুরনো প্রসঙ্গের অবতারণা না করে উপায় দেখছি না। আজকের টম-জেরি গল্পটি আমার যতোটা ভালো লেগেছে, ঠিক ততোটাই ব্যথিত করেছে এর অসংখ্য ভুল বানান ও অসতর্ক বাক্যনির্মাণ। আপনি মনঃক্ষূণ্ণ হলেও আমাকে বলতেই হবে, আমার প্রিয় লেখকের কাছে আমি এটা আদৌ আশা করি না।
ব্যস্ত দৈনন্দিন জীবন, বয়স ইত্যাদি অজুহাত আসলে অচল। অবাংলাভাষী আবু সয়ীদ আইয়ুব বাংলা শিখেছিলেন চল্লিশ বছর বয়সে এবং শিখেছিলেন অনেক বাংলাভাষীকে শেখানোর মতো করে। চেক বংশোদ্ভুত লেখক মিলান কুন্ডেরা প্রথম জীবনে লিখতেন চেক ভাষায়, এখন লেখেন ফরাসী ভাষায় যা তিনি শিখেছেন মধ্যবয়সে। আপনি মনোযোগ দিলে আপনার দুর্বলতাগুলি কাটাতে পারবেন না, তা আমার বিশ্বাস হয় না।
পৃথিবীতে কোনো ভাষায় কোনো বড়ো লেখক নিজের ভাষা ব্যবহারে সংশয়মুক্তভাবে নিশ্চিত নন বা ছিলেন না, এমন উদাহরণ আমার জানা নেই। সাহিত্যচর্চার প্রথম শর্তই তো হওয়া উচিত যে ভাষায় তিনি সাহিত্য রচনা করবেন তার ব্যবহারিক প্রয়োগ কৌশল সম্পর্কে জানবেন এবং ক্রমাগত তাকে শাণিত করবেন। আপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেখক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আমি দেখতে পাই এবং লেখালেখি বিষয়ে আপনার মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে বলে অনুমান করি। কিন্তু সাফল্যের কোনো শর্টকাট পথ নেই।
আপনার লেখাটিতে আমি ভুলগুলি মোটামুটি নির্দেশ করার চেষ্টা করেছি। আপনি হয়তো অপছন্দ করবেন, অসস্তুষ্টও হতে পারেন, কিন্তু আমার প্রতিক্রিয়া সরাসরি না জানিয়ে পারলাম না।
একেকজন লেখকের লেখার অভ্যাস বা ধরণ একেকরকম। এসব দিকে অতিরিক্ত সতর্ক হতে গেলে আপনার লেখার স্বতস্ফূর্ততা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটানে লেখা শেষ হওয়ার পর সম্পাদনায় মন দিতে পারেন।
বাদবাকি আপনার বিবেচনা।
জুবায়ের
এপ্রিল ২৬, ২০০৮
---------------------------------------------------------
এইভাবে বিষন্ন হতে আর ভাল্লাগে না।
চিঠির বাক্স এখন খালি পড়ে থাকবে, প্রিয় পত্রলেখক আর জানাবেন না ভুলের ফিরিস্তি। মৃদু বকুনি দিয়ে বলবে না কেউ, নিজেকে এভাবে নষ্ট করার কোনো মানে নেই। আর কি আশ্চর্য লোকটা নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছে, খেলেছে নিজেকে নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে! আমাদেরকে বলেছে, নষ্ট হয়ো না, কষ্ট পেলে সেটাকে শক্তিতে পরিণত কর। আর নিজের ভেতরে পুষে রেখেছে দেখো কত কষ্ট, হাহাকার রেখে গেছে আমাদের জন্য...
সবুজ বাতি তবে আর জ্বলবে না? আর কেউ টোকা দিলেই বলবে না, ঘুম নাই তোমার? বাজে ক'টা এখন? আর কেউ অবিন্যস্ত লেখায় লাল দাগ দিয়ে ফেরত পাঠাবে না। 'তুমি' বলার অধীকার পেয়ে শিশুর মতো বলবে না, তোমার সাথে আমার অনেক মিল হে বালক...
'আপনি তো অনেক বুড়ো' এই শব্দুগুলো শুনে তিনি কেমন শব্দে হেসেছিলেন শুনিনি, তবে স্ক্রিনে ভাসা অক্ষর বলেছিল, 'আমি এই লেখাটা দিয়ে বিরাট ভুল করলাম নাকি অপু...'
আমি খুব কাতর সময়ে ছিলাম, আপনি সাহস দিয়ে বলেছিলেন নিজের দীর্ঘ কষ্টের কথা। আর বলেছিলেন, এই যে মানিয়ে নেয়ার চেস্টায় আছো, অবিরত নিজেকে বদলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছ, এইসবই লেখায় তুলে আনো।
কিছুই করা হয় না, এই জীবন আমাদের যতটা ভাঙে, দুমড়ে দেয়, মুচড়ে দেয়, ততটা শক্ত হতে মনে হয় শেখায় না...
তবে শেষ কথা এই যে, আপনি লোকটা ভাল নন মুহম্মদ জুবায়ের। এভাবে মাঝপথে যে একা আকাশের তারা দেখতে বেরোয় তাকে ভালো মানুষ কিভাবে বলি জুবায়ের ভাই? কাজটা আপনি ঠিক করেননি...
আমার বয়সীরা সাধারণত কনিষ্ঠদের লেখা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের লেখা পড়ে না, পড়লেও স্বীকার করতে চায় না, করলেও প্রশংসায় তাদের শব্দের ঘাটতি পড়ে। ব্যতিক্রম হওয়ার জন্যে নয়, আমি সাম্প্রতিক লেখকদের জানতে চাই, তাদের ভাবনা বুঝতে চাই, তাদের কাছে শিখতেও চাই। আদৌ জানা-পরিচয় নেই, এমন অনেকের লেখা পড়ে ভালো লাগলে নিজের উদ্যোগে যোগাযোগ করেছি, এমন ঘটনা খুব বিরল নয়।
আপনার লেখা এবং তার অন্তর্নিহিত শক্তি নিয়ে আমার মুগ্ধতা আছে, সে কথা প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি। আপনার কাছে আরো অনেক গাঢ় ও গভীর রচনা পাবো আশা করি। কিন্তু খুব দুঃখের সঙ্গে একটি পুরনো প্রসঙ্গের অবতারণা না করে উপায় দেখছি না। আজকের টম-জেরি গল্পটি আমার যতোটা ভালো লেগেছে, ঠিক ততোটাই ব্যথিত করেছে এর অসংখ্য ভুল বানান ও অসতর্ক বাক্যনির্মাণ। আপনি মনঃক্ষূণ্ণ হলেও আমাকে বলতেই হবে, আমার প্রিয় লেখকের কাছে আমি এটা আদৌ আশা করি না।
ব্যস্ত দৈনন্দিন জীবন, বয়স ইত্যাদি অজুহাত আসলে অচল। অবাংলাভাষী আবু সয়ীদ আইয়ুব বাংলা শিখেছিলেন চল্লিশ বছর বয়সে এবং শিখেছিলেন অনেক বাংলাভাষীকে শেখানোর মতো করে। চেক বংশোদ্ভুত লেখক মিলান কুন্ডেরা প্রথম জীবনে লিখতেন চেক ভাষায়, এখন লেখেন ফরাসী ভাষায় যা তিনি শিখেছেন মধ্যবয়সে। আপনি মনোযোগ দিলে আপনার দুর্বলতাগুলি কাটাতে পারবেন না, তা আমার বিশ্বাস হয় না।
পৃথিবীতে কোনো ভাষায় কোনো বড়ো লেখক নিজের ভাষা ব্যবহারে সংশয়মুক্তভাবে নিশ্চিত নন বা ছিলেন না, এমন উদাহরণ আমার জানা নেই। সাহিত্যচর্চার প্রথম শর্তই তো হওয়া উচিত যে ভাষায় তিনি সাহিত্য রচনা করবেন তার ব্যবহারিক প্রয়োগ কৌশল সম্পর্কে জানবেন এবং ক্রমাগত তাকে শাণিত করবেন। আপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেখক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আমি দেখতে পাই এবং লেখালেখি বিষয়ে আপনার মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে বলে অনুমান করি। কিন্তু সাফল্যের কোনো শর্টকাট পথ নেই।
আপনার লেখাটিতে আমি ভুলগুলি মোটামুটি নির্দেশ করার চেষ্টা করেছি। আপনি হয়তো অপছন্দ করবেন, অসস্তুষ্টও হতে পারেন, কিন্তু আমার প্রতিক্রিয়া সরাসরি না জানিয়ে পারলাম না।
একেকজন লেখকের লেখার অভ্যাস বা ধরণ একেকরকম। এসব দিকে অতিরিক্ত সতর্ক হতে গেলে আপনার লেখার স্বতস্ফূর্ততা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটানে লেখা শেষ হওয়ার পর সম্পাদনায় মন দিতে পারেন।
বাদবাকি আপনার বিবেচনা।
জুবায়ের
এপ্রিল ২৬, ২০০৮
---------------------------------------------------------
এইভাবে বিষন্ন হতে আর ভাল্লাগে না।
চিঠির বাক্স এখন খালি পড়ে থাকবে, প্রিয় পত্রলেখক আর জানাবেন না ভুলের ফিরিস্তি। মৃদু বকুনি দিয়ে বলবে না কেউ, নিজেকে এভাবে নষ্ট করার কোনো মানে নেই। আর কি আশ্চর্য লোকটা নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছে, খেলেছে নিজেকে নিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে! আমাদেরকে বলেছে, নষ্ট হয়ো না, কষ্ট পেলে সেটাকে শক্তিতে পরিণত কর। আর নিজের ভেতরে পুষে রেখেছে দেখো কত কষ্ট, হাহাকার রেখে গেছে আমাদের জন্য...
সবুজ বাতি তবে আর জ্বলবে না? আর কেউ টোকা দিলেই বলবে না, ঘুম নাই তোমার? বাজে ক'টা এখন? আর কেউ অবিন্যস্ত লেখায় লাল দাগ দিয়ে ফেরত পাঠাবে না। 'তুমি' বলার অধীকার পেয়ে শিশুর মতো বলবে না, তোমার সাথে আমার অনেক মিল হে বালক...
'আপনি তো অনেক বুড়ো' এই শব্দুগুলো শুনে তিনি কেমন শব্দে হেসেছিলেন শুনিনি, তবে স্ক্রিনে ভাসা অক্ষর বলেছিল, 'আমি এই লেখাটা দিয়ে বিরাট ভুল করলাম নাকি অপু...'
আমি খুব কাতর সময়ে ছিলাম, আপনি সাহস দিয়ে বলেছিলেন নিজের দীর্ঘ কষ্টের কথা। আর বলেছিলেন, এই যে মানিয়ে নেয়ার চেস্টায় আছো, অবিরত নিজেকে বদলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছ, এইসবই লেখায় তুলে আনো।
কিছুই করা হয় না, এই জীবন আমাদের যতটা ভাঙে, দুমড়ে দেয়, মুচড়ে দেয়, ততটা শক্ত হতে মনে হয় শেখায় না...
তবে শেষ কথা এই যে, আপনি লোকটা ভাল নন মুহম্মদ জুবায়ের। এভাবে মাঝপথে যে একা আকাশের তারা দেখতে বেরোয় তাকে ভালো মানুষ কিভাবে বলি জুবায়ের ভাই? কাজটা আপনি ঠিক করেননি...
Comments
Post a Comment