Posts

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

চল্লিশ পেরুলে বয়েস পরস্পরের আলাপের বিষয় হয় ওষুধের তালিকা। কোন কবি বলেছিলেন এই কথা? কোন কবিতায় আছে এই কথা? নাকি কোন গদ্যে? কথাটা মিথ্যে নয়। নির্দিষ্ট বয়েস পেরুলে পরে বন্ধুদের আলাপেও ঢুকে পড়ে সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যবার্তা। আমরা সিনেমা নিয়া কথা বলি। তত্ত্ব বা তথ্য থাকেনা সেখানে। নিজেদের মধ্যে কার হৃদয়ে ছুরি চিকিৎসা হলো তার গল্প করতে করতে মান্নাদা বলে, সিনেমাটা খারাপনা। দেখতে পারিস। আমরা তরল সিনেমার তালিকা করতে থাকি। কঠিন বাস্তবতার গল্পগুলো এড়িয়ে যাবার পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করি। এ এক প্রাত্যহিক গল্প বলা। সিনেমার দৃশ্যান্তরে ধারাবাহিকতা নিয়ে আলাপ হয়। গল্পের সময়কাল নিয়ে চিন্তা না করা পরিচালককে আমরা গাধা নাম দেই। মান্নাদা বলে, তুই যেমন ভাবছিস, তেমন না আসলে। অন্ধ একটা মানুষ এই সমাজে যেমন অবিচারের শিকার হয়, তেমন না, বরং প্রতিশোধ নিতে পারার এক সুপারম্যানিয় ঘটনা। সিনেমাটা সিনেমাই। অন্যকিছু না। কম টাকায় তৈরি হওয়া সিনেমার তালিকা করি আমরা। ভালো সিনেমার জন্য টাকা কোন বিষয় না। কম টাকা দিয়ে বিস্তর ভালো সিনেমা তৈরি হয়েছে। অন্ধ হলেই বিহঙ্গ পাখা বন্ধ করেনা, সিনেমাটা সেই সূত্রেই হয়তো তৈরি। কিন্তু হিন্দিওয়ালারা রবী

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

ফুপু বছরে একবারই আসতেন। বাক্স পেটরা বোঁচকা বুচকি নিয়ে। তখন আমরা বিশ্বনাথে থাকি। লাল ইটের একটা বাড়ি। খোলা উঠান। বড় খেলার মাঠ। বাড়ির ঠিক উল্টো দিকে রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, প্রাইমারি স্কুল। ফুপু এলেন রোজার আগে। এসেই আমাদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে এক প্রস্ত কান্নাকাটি করলেন। বিলাপ দিয়ে কান্না। আব্বা বল্লেন, কান্নাকাটি শুনলে মানুষ ভাববে, পোস্ট মাস্টার মারা গেছে... ফুপু এ কথা শোনে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আব্বা সুড়ুৎ করে বেরিয়ে গেলেন। হয়তো রনজিত কাকার সাথে আড্ডা দিতে। কাকা তখন রামসুন্দর স্কুলের শিক্ষক। দীর্ঘ বছর পর দুই বাল্যবন্ধুর দেখা হয়েছে তখন। তারা চুটিয়ে সেই সময়টা উপভোগ করেছেন। কান্নাকাটি এবং আমার কেউ নাই বিলাপ শেষ করে ফুপু ব্যাগের ভেতর থেকে ছোট একটা কাঁথা বের করে সেলাই করতে শুরু করলেন! এটা এতই ছোট ছিলো যে, তখনকার পিচ্চি হাসানের কাঁথাও এরচে বড় ছিলো! আমাদের ঘরে তখন সকাল বিকেল লুডু খেলা হতো। বলতে গেলে লুডুর বোর্ডের মাপের সেই কাঁথা। বিস্ময় নিয়ে কাথা তৈরি দেখতে থাকলাম। ফুপু অসাধারণ সব সেলাইয়ের কাজ জানতেন তখন। দেখতে দেখতে কাথাটা আস্ত একটা নকশায় পরিণত

শুভ হালখাতা

নববর্ষ বলে কিছু চিনতাম না তখন। চিনতাম হালখাতা। স্মৃতির ছড়ানো মুড়ি মুড়কি জড়ো করতে গেলে যে উজ্জল সময়টা সামনে আসে, সেটা সম্ভবত ৯৩/৯৪ সাল হবে। ইংরেজি ৮৬/৮৭। জগন্নাথপুর বাজারে কাকাবাবুর দোকানে নতুন খাতা খোলা হতো। একদম সকালে হাড়িতে করে মিস্টি চলে আসতো। এরপর আব্বার হাত ধরে চলে যেতাম বাজারে। দোকানের ভেতর থেকে ডাক আসতো, ' ও মাস্টসসাব, আউক্কাতে...' আব্বা হাত নেড়ে বলতেন, 'থুড়া চক্কর দিলাই আগে...' আব্বার চক্কর বলতে লম্বা কোন দৌড় ছিলোনা। নির্দিষ্ট কয়েকটা দোকান ঘুরে তিনি কাকাবাবুর গদিতে এসে বসে যেতেন। ততক্ষণে মিস্টিতে আমার পেট টইটুম্বুর হয়ে যেতো। আব্বা মাথা নাড়লে আমি হাফপ্যান্টের কোমরে ধরে দিতাম দৌড়! ( হাফপ্যান্টের কোমর ধরা বিষয়ে নিজের কোন স্মৃতি নাই। আমার শৈশব বেঁচে আছে যাদের স্মৃতিতে, তারা বলেছেন এই গল্প!) আম্মা ভালো দেখে শাড়ি পরতেন। পোলাও রান্না হতো। এসবই আসলে বিচ্ছিন্ন বৈশাখের স্মৃতি। ফুফুত ভাই করিম, আমাদের বাড়িকে শিন্নি বাড়ি বলতো, তার কারণ মনেহয় এই যে, এমন কোন দিনে সেও ফুফার সাথে মাদানে খেতে এসেছিলো আর আম্মা তাকে মুরগির মাংসের সাথে পোলাও তুলে দিয়েছিলেন পাতে। করিম অভিমানে সব ছেড়ে