কয়েকটা দিন অন্যরকম-২

শুক্রবার। ফেব্রুয়ারির এক তারিখ। আমার বাবাইসোনার জন্মদিন। বারটা বাজতেই তুলির মোবাইলে মেসেজটোন। মিঠুর মেসেজ। অনন্তমৈথুন নাম দিয়ে সে ব্লগায়। প্রিয় বুলবুলিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সে বাবাইকে বুলবুলি বলবে। আর বাবাই তাকে বলবে বন্ধু। ফোন হাতে নিয়ে যখন মেসেজ পড়ছি, বাবাই আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গেস করে কে ফোন করেছে বাবা? আমি বলি তোমার বন্ধু তোমাকে হেপি বাড্ডে বলেছে সোনা। সে হাততালি দিয়ে নিজেই বলে উঠে, হেপিবাড্ডে তু ইউ, হেপি বাড্ডে ডিয়ার তমাল, হেপি বাড্ডে তু ইউ... সবাই হেসে উঠেন। বাবাই শরম পায়।
শুক্রবার সকালটা সবসময়ই অন্যরকম। কেমন এক অলস ভাললাগা ব্যাপার। ঢাকায় এই একটা সময়ই শুধু আমি কিছুটা উপভোগ করি। বাকিটা...


বউ বাচ্চা নিয়ে বেরুলাম। গন্তব্য ধানমন্ডি। ফুপু শ্বাশুড়ির বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। বাবাই মহা উৎসাহ নিয়ে রাস্তা দেখা শুরু করল। নানা প্রশ্ন আর আলাপে মুখে যেন খই ফুটছে তার।

ধানমন্ডির ঠান্ডা ঠান্ডা সেই বাড়িটায় বিকেল হয়ে যায়। আরিফ ভাই ফোন করেন। কিরে মেলায় যাবিনা। কোথায় আছি জেনে বলেন, ঠিক আছে, এ বাড়ি বেড়ানো শেষ করে বলিস, একসাথে যাব। কিন্তু শেষ আর হয়না। ভাবির ফোন। তোমরা আসনা কেন? বরযাত্রি যাবার সময় হয়ে যাচ্ছে। নিসঃঙ্গ এক মায়াবতী জননীকে রেখে আমরা মিরপুরের দিকে রওয়ানা হই...

ঘরে ঢুকতেই আম্মা আস্তে করে বলেন, কিরে তুই আমার দাদুটার জন্য কিছু আনলিনা? আজনা তার জন্মদিন। আমি অপরাধীর চোখে তাকাই। কষ্ট লাগে। ওর প্রথম জন্মদিনে আমি শহরের বাইরে ছিলাম। কি এক এ্যসাইনমেন্টে। দ্বিতীয় জন্মদিনে তুলির বাসায় একটা বাজে সমস্যা হয়েছিল। তখন ভেবে রেখেছিলাম তৃতীয়টা খুব ধুমধাম করে পালন করা হবে। এইসব লৌকিককতায় খুব একটা মন নেই আমার, কিন্তু ছেলে যখন প্রশ্ন করে বাবা আমার হেপিবাড্ডে কবে তখন মন বলে, এইবার একটু লৌকিক হই...

১ নাম্বার থেকে ছোট একটা কেক নিয়ে যখন ঘরে ফিরি সন্ধ্যা হয়েছে ততক্ষনে। বিয়ে বাড়ির তুমুল ব্যস্ততা। এরমাঝে কেক কাটবে কে? ফ্রিজে রেখে দেয় ভাবী। রাতে ফিরে কাটা যাবে। আমি আস্তে আস্তে নিচে নেমে যাই। মোবাইলে টাকা নেই। কার্ড কেনার জন্য যে দোকানটায় যাই সেখানেই দেখি নেট ইউজের ব্যবস্থা আছে। বাহ্ দারুন বলেই বসে পড়লাম একটা বুথে। বাবাইয়ের ভার্চুয়াল গিফটের ব্যবস্থা করি। আমারতো আর কিছুই করার ক্ষমতা নেই এখন। ওর ভার্চুয়াল (সত্যিইকি সব হাওয়ার মানুষ আমরা? হাওয়াই মিঠাই এই আমাদের সম্পর্ক? বাতাসে মিলাবে যখনতখন?) চাচা ফুপুরা কিছু করে কীনা দেখি...

এমদাদুল ফোন করে। আমার পার্সেন্টিজ খাওয়া ম্যানেজার। ভাই বই রেডি... আমি কেঁপে উঠি। প্রায় কাঁপা গলায় বলি, কোন সমস্যা হয়নিতো এমদাদুল? সে নির্ভয় দেয়, না, সমস্যা হবে কেন? ভাল হইছে সব। আর কবিতার বইটা? (মাশার বই, এই মিছা কবি জীবন) জ্বি সেটাও ভাল হয়েছে। আগে কবিতার বই শেষ করেছি পরে আপনারটা। এইমাত্র বাঁধাই কমপ্লিট হল। আমি বলি ঠিক আছে এমদাদুল, তুমি পঞ্চাশটা করে বই শুদ্ধস্বরের ঠিকানায় পাঠাও। আমি পরে তোমার সাথে কথা বলব। কেমন বোকা বোকা লাগে, বইটা শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল...

ফোন রেখে দেই। ঘড়িতে তাকাই, সাতটা বেঁজে পাঁচ মিনিট। ২০০৫ সালের এক ফেব্রুয়ারী প্রায় একি সময়ে বাবাই প্রথম কেঁদেছিল। বোকা বোকা চোখে আশ্চর্য সুন্দর সেই শিশুর দিকে তাকিয়ে আমি বলে উঠেছিলাম, ও তুমি...

Comments

Popular posts from this blog

বাফর ঠিক্নাই

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

মেঘবাড়ির মানুষেরা সব মেঘেতে লুকাই