পুরনো গল্প

স্কুলের ইউনিফর্ম ছিলো সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু পেন্ট। রোজ বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেই শার্ট টা ধুয়ে দিতে হতো। সাদা শার্ট একদিনের বেশি পরা যায় না। আমার একটাই শার্ট। পরের দিন পরতে হলে আগের দিনে সেটা ধুয়ে দিতেই হয়।

বাবাকে দু'একবার বলেছি, বাবা আমাকে আরেকটা শার্ট কিনে দাও। দেয়নি বাবা। আসলে তার হাতেতো টাকা থাকতো না সেসময়। আমাদের টানাটানির সংসার ছিলো। বাবা বলতো, টুটুল একটু কষ্ট করে রোজ বিকালে শার্টটা ধুয়ে দিস বাবা। রোজ রোজ শার্ট ধুতে কার ভালো লাগে? এর মাঝে সাবান শেষ হয়ে গেলেও মায়ের সাথে রাগারাগি করতো বাবা। তাই আমি একদিন পর পর শার্ট ধুয়ার চেস্টা করতাম।

বাবাকে দু একবার বুঝাতে চেয়েছি, এই যে রোজ রোজ সাবান খরচা হয়, এই বাড়তি টাকাটা এক করলেই একটা শার্ট কেনা যাবে। বাবা আমার যুক্তি শোনে সাদা সাদা চোখ নিয়ে আমাকে দেখতো। কিছু বলতো না। দাত দিয়ে নিচের ঠোট কাটতো শুধু। এসব দেখতে আমার ভালো লাগতো না। আমি বাবার সামনে থেকে চলে যেতাম। বাবা তখন বেকার ছিলো। ইট ভাটার ম্যানেজারি করতো বাবা। মালিক সেই ভাটার যায়গায় হাউজিং এর ব্যবসা খুলে বসেছিলো। বাবা তাই বেকার। এই বেকারত্ব অবশ্য কোনোদিনই আর কাটেনি।
বড়দা যখন বি ডি আর এর চাকরিতে গেলো, তার বয়েস তখন মাত্র আঠারো বছর হয়েছে। টিঙটিঙা লম্বা। যে লোকটা লাইনে দাড়িয়ে মাপছিলো বুকের ছাতি সে বড়দার সামনে দাড়িয়ে কিছুই করেনি। সাদা গেঞ্জিতে শুধু একটা সিল মেরে বলেছিলো সামনের কাতারে যাও। সুরেষ স্যার বিকেলে আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে বল্লেন, কোনোভাবেইকি ছেলেটাকে পড়ানো যায় না? বাবা শূন্যের দিকে চোখ মেলে তাঁকিয়ে থাকলেন অনেক্ষণ। একসময় স্যারকে উঠোনে বসিয়ে রেখেই ঘরে ঢুকে গেলেন। বহু বছর বাবাকে ঘর থেকে বের করা যায়নি আর। এমনকি ঈদের নামাজেও নেয়া যায়নি তাকে।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা