ঝিঁঝি পোকার বাড়ি

মাথার ভেতর শ'য়ে শ'য়ে ঝিঁঝি পোকা বাসা বেঁধেছে। দিনমান চেঁচিয়ে যাচ্ছেতো যাচ্ছেই। কোন বিরাম নেই। প্রতি মুহূর্তে এরা বাচ্চা দিচ্ছে মনে হয়। কারণ শব্দটা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।


𑂽
মোবাইলের স্ক্রিণ নেশার মতো হয়ে গেছে। স্ক্রিণটাইম দেখার অপশনে গিয়ে ছেলে নসিহত দেয়। নিজের কাছেও মনেহয়, বেশি হয়ে যাচ্ছে। এপস ফেলে দিলাম। প্রথম দিন একটু কষ্ট হলেও দ্বিতীয় দিন থেকেই বেশ নির্ভার লাগছে। রাতে বা একদম সকালে কম্পিউটারে আপডেট জানতে কিছু সময় ঘুরাফেরা। মোবাইল এপসের যে মজা, সেটাতো আর কম্পিউটারের ব্রাউজারে পাওয়া যায়না। মিনিট কয়েক চোখ বুলিয়েই পরিশ্রান্ত মনে হয়!

তবে, ফলটা ভালো হয়েছে। আজন্ম লাল চোখটা যথেষ্ঠ বিশ্রাম পেয়ে একটু একটু সাদা হয়ে গেছে (মনের ভুল)। হাতে বাঁধা রক্তচাপ মাপার ব্যান্ডটাও বেশ সহনশীল ডিজিট দেখাচ্ছে।

খবর বেঁচে খাওয়ার পুরনো অভ্যাস থেকে এখনও নানা খবর আন্দোলিত করে। কোন কোন খবর একটু আগে জানা হয়ে যায়। জানাজানির একটা প্রধান উৎস হলো ফেইসবুক আর চেইন মেইল। ফেসবুক এপস ফেলে দেয়ায় নানান ধরণের মাথা খারাপ, মন খারাপ করা খবর সময়ের চেয়ে পরে জানতে পারছি। এবং আশ্চর্য হয়ে দেখছি, প্রতিক্রিয়ায় অনেক সহনশীল এবং চাপহীন থাকতে পারছি!

𑂽
আমাদের এখানে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। মানুষজন ত্যাক্ত বিরক্ত। করোনা নিয়ে বাঙ্গাল জনগনের মাঝেই শুধু বেপরোয়াভাব আছে আর বাকি দুনিয়া খুব শিষ্ঠ, এটা ভাবার কোন কারণ নাই। বিলাতীদেরকেই বরং অনেক বেশি ছাগল মনে হয়েছে আমার। এরা একেবারে রাষ্ট্রিয়াভাবেই ছাগলামি করেছে, করছে। কাজের সূত্রে মোটামুটি ভিন্ন কয়েকটি দেশের মানুষের সাথে পরিচয়, চলাফেরা। এজন্য মাল্টিন্যাশনাল ছাগ বৃন্দের সাথে পরিচয় হয়েছে ইতিমধ্যে।

সবচে বড় ছাগলটা অতি অবশ্যই ইংলিশ। প্রথম লকডাউনের শেষের দিকে যখন কাজে ফিরে গেছি, সে মহা উৎসাহে আমার সাথে দেখা করতে এলো, 'মামু, তুমি এতো ডরাও! ক্যামনে এই দুইটা মাস ঘরে বন্দী থাকলা?' তুমি কী করছো এই কথা জিগাইতেই সে আর তার ইয়ার দোস্তরা কেমন কমান্ডো স্টাইলে নিজেদের বাড়িরেই পাব বানায়া ফেলছিলো সেই গল্প শোনালো! আমি তব্দা মেরে থাকলাম। এবং দুই সপ্তার মাথায় জনতে পারলাম ছাগলটি আক্রান্ত হয়েছে!

সুস্থ হয়ে ফিরে এসেই সে ঘোষণা করলো, এটা আদতে ভয়ের কিছু না। সাধারণ ফ্লু। মানুষ যা মরছে, এরা এমনিতেই মরতো! আমার জীবনে হাতে গুনা দুয়েকবার ছাড়া কখনই ছাগলের সাথে তর্ক করিনি। এর সাথেতো প্রশ্নই উঠেনা। কারণ ইংরেজীতে কেমন করে ছাগু ডাকতে হয় সেটাতো এখনও শিখতে পারিনি।

নতুন লকডাউন ঘোষণার পর, হাঙ্গেরিয়ান এক ছাগী বল্ল, এসবই আসলে টেসকো, আজদা, এমাজন এমন সব বড় বড় কোম্পানির ষড়যন্ত্র। লকডাউন মানেই তাদের ব্যবসা বেড়ে যাওয়া, তাই সরকারকে বাটে ফেলে লকডাউন করিয়েছে!


𑂽
খুপড়ির মতো একটা ঘরে ঢুকিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে দিলো। দরোজা বন্ধ। তারপর নানা তরঙ্গের শব্দ শোনায়। শেষ করে বেটায় বলে, কী ভয়ংকর! এটাতো ভালোর উপরে ভালো! আমি বলি, জানি। শয়তানের ফিসফিসানিও আমি শুনতে পারি। লোকটা হাসে। আমার এক সহকর্মীকেও বলেছিলাম এই কথা, সে বলেছিলো, বরিস এতো লাউড, সে জীবনেও ফিসফিস করে কথা বলেনি, তাকে শোনার জন্য এতো ভালো কান না থাকলেও চলে।

প্রাচিনপন্থী নার্স ডিজিটাল বিষয় নিয়ে সম্ভবত ত্যাক্ত বিরক্ত। তিনি ফুস ফুস করে ব্লাডার টিপে আগের জামানার মতো রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। একবার, তারপর আবার... এবার কপালটা কম কুচকানো। গতমাসের চেয়ে ভালো, কিন্তু রাশ ছাড়া যাবে না। মাসে মাসে ধরনা দিতে হবে। জু হুকুম বলে বেরিয়ে আসি।

𑂽
লিখতে গেলে আলস্য লাগে। ভাবছি ওয়াজ শুরু করবো। বাঙ্গাল মুল্লুকে ওয়াজের ওপর আর কিছু নাই। মোল্লারা মিথ্যা বল্লেও মানুষ আহা উহু করে। হিন্দি গান গাইলেও কাইন্দা বুক ভাসায়। আর যারা দুই চাইর লাইন লেখে, তাদের কল্লা কাটার জন্য আপামর জনসাধারণ সদা প্রস্তুত। ওয়াজটা কোথায় করবো, ইউটিউবে না ফেসবুকে, সেটা ঠিক করতে পারছিনা। ওইটা ঠিক হলেই নেমে পড়বো এনশাল্লা

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা