:: তখনও ঝরেনি পাতারা, বেলাদি ছিল ::


বেলাদির মাথায় একরাশ ঘনকালো চুল ছিল। রাজের বিস্ময় মাখানো একজোড়া চোখ ছিল তার। তখন অবশ্য অতটা বুঝতামনা। শুধু চোখ গুলো দেখতে আমার ভিষন ভালো লাগত।

আমাদের বাড়ির উত্তর সীমানায় ছিল একসারি কদম গাছ। তার পরই শুরু বেলাদিদের বাড়ি। সীমানা থেকে ঘর অবধি যেতে বেশ লম্বা একটা ফাঁকা যায়গা ছিল। মখমলের মত বিছানো সবুজ সবুজ সেই ঘাসের মাঝখানে ছিল বেশ বড় একটা পাথর। অনেকটা বেদীর মত। সাদা রঙের সেই পাথরে বসে রোজ বিকেলে বেলাদি রবীন্দ্রনাথের বই পড়ত। মাঝে মাঝে সুনীল।

রোজ বিকেলে আমরা সব বালকের দল সেই ফাঁকা যায়গায় খেলা করতাম। গোল্ল্লাছুট খেলা হত। পাথরের সেই বেদীটাকে কেন্দ্র ধরে আমরা ঘুরে ঘুরে ছড়া বলে একসময় দিতাম ভু দৌড়। আমরা আসলে বেলাদিকে ঘিরেই ছড়া কাটতাম।

এটা একেবারেই আমার বালক বেলার কথা। ওই বয়েসে আমরাতো আর দুরে কোথাও যেতে পারতামনা। তবে আস্তে আস্তে আমাদের দৌড় বড় হতে থাকে। বেলাদিকে ঘিরে ছড়া বলার সময় ফুরুতে থাকে। গ্রামের শেষে যে মাঠ, তারও পরে যে পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ি। সেইসব গলিঘুপচিতে ভাগ হতে থাকে আমাদের শৈসব।

কনক, নিলু, রাজু সবাই খুব সহজেই রোজ রোজ চলে যেত সেইসব অচেনাকে চিনতে। আমার যাওয়া হতনা। কি এক পিছুটানে আমি রোজ বেলাদির উঠোনে ঘুর ঘুর করতাম। আমার শুধু মনে হত আবার আমার বন্ধুরাসব ফিরে আসুক সবুজ এই মখমলে। আমরা লোকুচুরি খেলায় মাতি। হাতের বইটা পাশে রেখে বেলাদি আমাদের মাঝে যে চোর হল তার চোখটা চেপে ধরুক। (হাতের ছোঁয়া পাব বলে আমিই হতাম নিয়মিত চোর।) অথবা আমরা তাকে ঘিরে আবার ছড়া আউড়াতে থাকি। কেউ সে মনোডাকে সাড়া দেয়না! আমি থাকি সেই ছোট্ট মাঠে।

আমাকে ঘুরতে দেখে বেলাদি মাঝে মাঝে বলে, কিরে তোর খেলা নাই? আমি মাথা নাড়ি। বেলাদি হাসে। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকি। হাত ইশারায় কাছে ডাকে বেলাদি। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাই। মাথার চুলগুলো বিন্যস্ত করতে করতে বেলাদি বলে, যা খেলতে যা। সন্ধায় ঘরে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে যাবি!

আমি দৌড় দিই। বেলাদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আমি আতরের ঘ্রান পেয়েছি। সেই ঘ্রানটা সঙ্গি করে আমি দৌড়াই।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা