কতিপয় ইতিহাস আর বেকার হয়ে যাওয়া আমি

এই লেখাটা ঠিক বিন্যস্ত নয়। অগোছালো ভাবনা এবং মনের কথা...
এই মুহুর্তে আমি বেকার। হ্যা বেকার। কাজকাম নাই। ব্যবসাপাতি নাই। এই কিসিমের মানুষতো বেকার বলেই পরিচিত।
খুব কম বয়েসে আমি পেশাদার হয়েছি। আমার বন্ধুরা যখন নোট আর লেখাপড়ার কাজে ব্যাস্ত তখন আমি সিলেট শহরের প্রথম সারির বাজার জরিপকারী! আমার রোজ তখন ১৬০ টাকা! ১৯৯৪/৯৫ সালে এটা বিরাট অংকই ছিল। পেট্রলের লিটার তখন ১৪ টাকা মনে হয়। আমি চালাতাম হোন্ডা-৫০। তিন লিটারের টেঙ্কটা ভরলে শেষ হতে চাইতনা!
লেখালেখির একটা বাতিক ছিল তখন থেকেই। ৯৭/৯৮ এর দিকেই ঠিক করে ফেলেছি লাইনটা কোনদিকে যাবে।
২০০১ সালে হুট করেই সিলেটের একটা দৈনিক পত্রিকায় ঢুকে গেলাম। এবং মজে গেলাম। আজিব আজিব সব কান্ড কারখানার সাথে শুরু হল জীবন। কাজ করে অতৃপ্তি ভর করে। মুজাহিদ শরিফ বলে একজন ছিলেন। যিনি হাত ধরে ধরে শিখালেন পত্রিকার নানা গলি-উপ-গলি। তারসাথে বসেই আলাপ আর পরিকল্পনা। একটা নামের জন্ম হয় সিলেট প্রতিদিন।
নানা ভজঘট শেষে ২০০৪ এ বিয়ে। ২০০৫ এ সন্তানের জনক। এরিমাঝে টেলিভিশন, জাতীয় দৈনিকের সাধ নেয়া হয়ে যায়। মাথার চিন্তাটা আরও বিস্তার পেয়েছে। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নূর ভাই ( আহমেদ নূর ) বল্লেন, এইবার একটা দৈনিক করে ফেলতে হবে। ঢাকার সম্পাদকরা আমাকে ( নূর ভাই ) আর কাজ দেবেনা...
মার্চ মাস থেকে শুরু হয় কাজ। সাথে যোগ দিলেন আমার এক টাকাওয়ালা আত্মিয় ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী। ডিক্লারেশন পাওয়া গেল মে ২০০৬ এ। অফিস সেটআপ দিতে দিতে জুলাই। আগস্টে ডামির কাজ। ঠিক হল নির্বাচনের সময়টায় বাজারে আসা হবে।
নির্বাচন আর হয়না। দেশ চলে অন্য এক অচেনা সড়কে। যে সড়কে আমরা কখনও হাটিনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করে বাজারে আশে সাদাকালো সাদামাটা আঞ্চলিক দৈনিক সিলেট প্রতিদিন
খারাপ চলছিলনা। যদিওবা টানা ভর্তুকি। তবু সাড়া পাচ্ছিলাম ভাল। আস্তে আস্তে বিজ্ঞাপনদাতাদের দেখা মিলছিল। আমারা প্রতিদিন ভাল ভাল খবর পাচ্ছিলাম সার্কুলেশন আর বিজ্ঞাপন বিভাগ থেকে।
এপ্রিল ৭, ২০০৭। রাত পৌনে দশটা। নূর ভাইকে অফিস থেকে তুলে নেয়া হল। বলা হল সূনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে... ৮ এপ্রিল রাত ১১টার পর যখন সিলেট কোতয়ালি থানায় জমা দেয়া হল ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ আহমেদ নূরকে... আহত। আগের রাতে যে মানুষটা তিনতলার সিড়ি বেয়ে নেমে গেল, পরের রাতে সে আর হাটতে পারেনা! প দুটো ফুলে ঢোল।
খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা শুরু হল আহমেদ নূর আর আমাদের। হালকা একটা সুখবর মিলে জুলাই মাসে। চাঁদাবাজির মামলায় বেকসুর খালাস পেয়ে যান। কিন্তু কোন এক আদ্দিকালে সরকারি চাকরি করার মামলায় আর ছাড়া মেলেনা!!!
সব কষ্ট মেনে নেয় প্রতিদিন এর প্রতিটি কর্মী। সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ নূর ভাই জামিনে বেরিয়ে আসেন। আহত বিদ্ধস্থ...

১৩ সেপ্টেম্বর আহমেদ নূর বরখাস্ত!

১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের সব দৈনিকে সংবাদ আসে, দূর্নিতি দমন কমিশনের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সিলেট প্রতিদিন সম্পাদক আহমেদ নূর'কে বরখাস্ত করা হয়েছে! একি খবর সিলেট প্রতিদিন এর প্রথম পাতায় বক্স আইটেম হিসাবে ছাপা হয়।

১৬ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া দশটায় প্রকাশক ও সম্পাদক ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী সিলেট প্রতিদিন এর কর্মীদের জানালেন, অর্থনৈতিক কারনে তিনি আর পত্রিকা চালাতে পারছেননা। সবার সব পাওনা ইদের আগেই বুঝিয়ে দেয়া হবে...

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা