আজ পিকনিক হল, ধন্যবাদ হে মহামান্য...

মাননীয় রাস্ট্রপতি আজ আপনি এসেছেন আমার পাশের ঘরে। পাশের ঘর মানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে আজ সমাবর্তন। সনদ বিতরনের অনুষ্ঠানে আপনি দেশ উদ্ধারের নানা কথা বল্লেন নিশ্চয়। সাথে এও নিশ্চয় বলেছেন রাজনীতি করাটা খুব খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করলে জেলে যেতে হবে। যদিও আপনি এই ধারার এক মহান পুরুষ ছিলেন বলে শুনেছি। সে যাই হোক, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এক গরিব এবং পশ্চাদপদ গ্রামের বাসিন্দা।

আপনি আসবেন বলে আজ সকাল থেকেই আমাদের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকালে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো যখন শহরে যাবে বলে বেরিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগোয়া সড়কে যেতেই তাদেরকে আটকে দেয়া হয়েছে। সঙ্গিন উচিয়ে আপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রীরা বলেছে রাস্তা বন্ধ!

আমি ছাপোসা প্রেস ব্যবসায়ী। মানুষের এটা সেটা ছাপিয়ে জীবন ধারন করি। আমি জানতামনা আপনি আসবেন বলে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হবে।। আমাকে কেউ বলেনি এ কথা। এটা হয়ত আমারই দোষ। এটা জেনে নেয়া উচিৎ ছিল আমার। আমি শহরে যেতে পারিনি। আমার ৯বাই৯ ফিটের অফিসটা আজ খোলা হলনা। এক স্কুলওয়ালা তার প্রসপেক্টাস ছাপাবেন বলে আজ আসবেন বলেছিলেন। আমি যেতে পারিনি বলে তার কাজটা করতে পারলামনা। মোবাইল ফোনে তাকে সমস্যাটার কথা বলেছিলাম। তার কণ্ঠ শুনে মনে হলনা তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। কাজটা করলে আমি কয়েকশ টাকা পেতাম মাননীয় রাস্ট্রপতি। কিন্তু আপনার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এমন কাজতো আমি করতে পারিনা। তাই ঘর থেকে বেরিয়েও নিরাপত্তা বেস্টনি পর্যন্ত গিয়ে মাথা নিচু করে ফিরে আসতে হয়েছে।

আজকে ভোটার তালিকার জন্য এই গ্রামের মানুষের ছবি তোলার কথা ছিল। যাদের বয়েসটা খুব বেশিনা তারা অনেক রাস্তা ঘুরে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ছবি তুলতে গিয়েছে। আমার মা-বাবা কেউ যেতে পারেননি। এজন্য তারা আপনাকে কিছু বলেনি মাননীয়, তারা তাদের বয়েসকে দোষ দিয়েছেন। বলেছেন বয়েসটা কম হলে তারাও যেতে পারত জোড়া পাহাড় ডিঙ্গিয়ে...
আমার ছেলেটা অসুস্থ। তার প্রস্রাবের সমস্যা। তিন বছর হয়নি এখনও। তবু খাতনা করাতে হয়েছে। সকাল থেকে সে জুস খাবে বায়না ধরেছে। তার জন্য জুস আনতে পারিনি আমি। আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমার অসুস্থ ছেলের জুস খাওয়ার বায়না আমি মেটাতে পারলামনা।
এতকিছুর পরও আমরা আজ ঘরে হাফ পিকনিক করে কাটালাম! আপনি এলেন বলেইতো আজ আমার বউ অফিসে গেলনা। আমি গেলামনা। দাদাভাই গেলনা! বেশ একটা ছুটি ছুটি ভাব। কিন্তু এরশাদ চাচার দিনটা খুব বাজে গেল। আজ তিনি কাজে যেতে পারেননি। বেচারা। দশজন মানুষের সংসার।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

বিকেলের রোদে দেখা মেয়ে