অক্ষমের চিঠি


আমার ভেতরে বড়ো বেশি উচাটন। অকারণে পেছনের কথা ও সময়কে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকি।
যেদিন সবুজ বাতিটা জ্বলা বন্ধ হলো, যেদিন জানলাম আপনি অসুস্থ, সেদিন থেকে রোজ একটু পর পর দেখতে থাকি বাতিটা জ্বলে কী না। না, জ্বলেনি। আর জ্বলবে না। তবু আমি রোজ রোজ একবার করে কন্টাক্ট এর লিংক ধরে সেই নামটা দেখি... না, জ্বলে না।

গতমাসে একদিন সকালে উঠে সোজা বসলাম পিসিতে। জিমেইলে ঢুকে প্রথমেই দেখি সেই বাতিটা ধুসর হয়েই আছে। দেখি মাসুদ ভাই এর নামটা সবুজ হয়ে আছে। আমি তারে বলি, ভাই একটা কথা শুনবেন, একটা জিনিস দরকার, দেবেন? তিনি বলেন, কি? আমি বলি, জুবায়ের ভাই এর একটা ছবি দেন...
জুবায়ের ভাই এভাবেই আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখেন, সবসময়। এই দীর্ঘ সময়ে একটা দিনের জন্যেও তাঁকে ভুলতে পারলাম না।

আমার নোটবুকে একটা ঠিকানা লেখা। কথা ছিলো এই ঠিকানায় একটা ক্ষুদ্র পুস্তক যাবে। আমাকে নিয়ে এমন আগ্রহ কে কবে দেখালো আর?

আমার এক পরিচিতজন বলেন, ইনি কে ছিলেন? সচলের সবাই তাঁর প্রতি এতো অনুরক্ত কেনো? আমি বলি, ইনি কি ছিলেন না সেটা জিজ্ঞেস করেন। তিনি আবার প্রশ্ন করেন, তাঁর মেয়ের চিঠিটা পড়েও আপনারা কিছু বুঝতে পারলেন না? সেই চিঠির পরতে পরতেইতো ছড়িয়ে আছে তার অন্তিম রোগের কথা... না আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের বুঝতে দেননি। জুবায়ের ভাই, আপনি হরদম নিজেরে গোপন করেছেন আমাদের কাছ থেকে, তারচেয়েও বেশি গোপন থেকেছেন নিজের কাছে নিজেই।


গল্পদাদু ছিলেন আপনি। আমাদের গল্পদাদু। কত যে আব্দার করেছি। সেইসব আব্দার এর একটা বিষয় ধরে আপনি একটা সিরিজ শুরু করলেন, আমাদের বাতিঘরগুলি নিয়ে। আর কি আশ্চর্য আপনি নিজেই মিশে গেলেন সেইসব বাতিঘরের ভিড়ে, হারিয়ে যেতে চাইলেন যেনবা। কিন্তু আপনি কি জানেন, হারাতে পারবেন না আপনি। কোনমতেই না। আমাদের মন অবচেতনে হলেও আপনাকে মনে রাখবে।


আমার ছেলেটাকে নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে আপনার সাথে। ওর কুটুস কুটুস গল্পগুলো শুনে দারুণ মজা পেতেন। আপনি জানেন জুবায়ের ভাই, ও এখন দুইটা ক্লাস শেষ করে তিন নাম্বার ক্লাসটার অর্ধেক শেষ করে ফেলছে। ও বড় হয়ে যাচ্ছে...। ? আপনি কি জানেন স্কুলে ওর নিকনেইম কি? প্রথম যেদিন সেটা আমি জেনেছিলাম, কেঁপে উঠেছিলাম... কেনইবা কাঁপবো না? ওকে যে ওর বন্ধুরা, ওর টিচাররা গল্পদাদু বলে ডাকে!

আজ আপনার জন্মদিন। আপনাকে শুভকামনা জানাতে পারছি না। না দেখা একটা মানুষ আপনি, আপনার চলে যাওয়ায় এভাবে আক্রান্ত হই কেনো আমি, আমরা। এর নাম কি? জানি এইসবের কোন ব্যাখ্যা হয় না। এসবের জবাব আপনি নিজেও দিতে পারতেন না।

ভালো থাকবেন প্রিয় জুবায়ের ভাই। খুব ভালো

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

বিকেলের রোদে দেখা মেয়ে