আমার শিশু বয়েস থেকেই আব্বারে তার ঢং সম্পর্কের লোকজন বুড়া বলে ডাকতো। আমারে বলতো বুড়ার পোলা! আমিতো চেইত্যা মেইত্যা শেষ... ক্যান আমার আব্বারে বুড়া বলবে, ক্যান আমারে বুড়ার পোলা বলবে। তারা বলতো, তোর বাপের ইয়া বড়ো দাড়ি আছে, মাথায় কিস্তি টুপি পরে!!! এইটা ঠিক, আব্বার ইয়া বড়ো দাড়ি, টুপি, সাথে সার্বক্ষণিক পাঞ্জাবি। বুড়া না বলে করবে কি লোকে? কিন্তু আমার উত্তর একটা ছিলো তখনও, বলতাম, আব্বার মাথার চুল গুলো হঠাৎ করে সরে গিয়ে মুখের দিকে চলে আসছে বলে দাড়ি হয়ে গেছে, আর মাথার চুল সরে যাওয়ায় সেটা ঢেকে রাখার জন্যই টুপি পরে! এইটা একটা বাস্তব সম্মত যুক্তি হিসাবেই আমি বলতাম। কিন্তু আমার পুংটা মামুরা সেইটা মানতো না। তারা বিতিকিচ্ছরি কাণ্ড করতো, অন্তত যতক্ষণ না আমি নানাবাড়ির উঠানের ঠিক মাঝখানে হাত পা ছড়িয়ে কানতে শুরু করতাম, কিংবা চ্যালা কাঠ নিয়ে ধাওয়া দিয়ে তাদেরকে নানাবাড়ির ১০ তলা সমান টিলা থেকে নিচে নামিয়ে না দিতাম, ততক্ষণ চলতে থাকতো। বেশিরভাগ সময় নানীর কঠোর হস্তক্ষেপে আমি উদ্বার পেতাম। তখন রাগ হতো আব্বার উপর, কি দরকার ছিলো এতো তাড়াতাড়ি দাড়ি রেখে ফেলার! কই আবুল হায়াততো দাড়ি রাখে নাই! তো সময় যত যেতে লাগলো ...
দশ দিন আগে... শীত চলে যাচ্ছে। দিন লম্বা হচ্ছে, রোদ উঠছে নিয়মিত তবু ঠান্ডা কমছে না। কারণ তীব্র বাতাস। সকালে উঠেই সেই বাতাসের আক্রমনে পড়লাম বাপ ছেলেতে। আবহাওয়া নিয়ে বাবাইর নিজের অনেক মতামত আছে। সিরি নামের এক মহিলার সাথে তার ব্যাপক খাতির। ওর কাছ থেকে এ বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করে তারপর নিজের মতামত যোগ করে। বেশিরভাগ সময় সেগুলো ঠিক হয়। মাঝে মাঝে বাঙ্গাল সূলভ বেশি কথা যদিও বলে, আমিও বাঙ্গাল সূলভ পিতাভাব ধরে সেগুলো এড়িয়ে যাই। গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে, বাবা আজকে অনেক মেঘ হবে। ঝুম ঝুমায়া মেঘ পড়বে। তুফানও হবে। ওর কথা সত্যি হয়ে যায় মিনিট কয়েকের মাঝে। চারদিক ঝাপসা করে আসে, সাথে ঝড়ো বাতাস। বাবাই বলে, দেখলায়তো বাবা আমার কথা সত্যি হলো। আমি বলি, হু, তুমি হইলা আবহাওয়াবাবা। মাথায় একটা পাগড়ি বাইন্ধা দেই... গতবার কপাল যদি কারো থাকে সেইটা আমার পাশের বাড়ির মুহাম্মদের। রাস্তায় কাজ চলছিলো গতবার। বলা নেই কওয়া নেই কাউন্সিলের একটা গাড়ী এসে রাস্তার পাশে রাখা তিনটা গাড়িতে দিলো ঘষা। প্রথমে আমারটা, তারপর আরেকটা শেষটা মুহাম্মদের। শব্দ শুনে বাইরে আসতেই ড্রাইভার আগে থেকেই দুঃখ প্রকাশ করতে ক...
তারপর ঝুম ঝুম করে মেঘ নেমে আসে। আমাদের ঘিরে ধরে। পর্দার পর পর্দা পড়তে থাকে। চোখের সীমানা ছোট হয়ে আসে। একটা হালকা স্বচ্ছ চাদরে ঢাকা পড়ে আমাদের চারপাশ। মেঘবাড়ির মানুষ আমরা, মেঘেতে হই মশগুল... তারও আগে, ভোর হবার আগে আকাশ ভেঙে পড়ে বাড়ির ছাদে, পাশের টিলায়, ঝুম ঝুম শব্দ হয়। বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আলোয় দেখি সেই জলধারা। জঙ্গলযাত্রা শুরু করবো, অপেক্ষা। এই পথে এর আগে যখন গিয়েছি, সেদিন রানা ছিলো। মাঝখানের দশকধরা বিচ্ছিন্নতার পর সেটা আমাদের লম্বাযাত্রা। এই সড়কটা প্রিয় আমার। দুপাশে বিস্তির্ন ধানক্ষেত, বর্ষায় জলে টইটম্বুর। সবুজ। একটা রেলপথ এই আসে, এই দুরে সরে যায়। সবুজ বাড়তে থাকে। ছোট ছোট টিলা, ঘন সবুজ, মাটির ঘ্রাণ, নাম না জানা বুনো ফুলের ঘ্রাণ, অচেনা মানুষের মুখ। মনে হয় এই বুঝিবা হারিয়ে যাচ্ছি, অথচ হারানো হয় না। পালাতে চাইলেও পালানো যায় না, তবু কিছুটা সময় গোপন থাকা যায় নিজের খোলসে। এবার এই পথে আমার সঙ্গি শাওন, সায়েম, শান্ত আর আরেকটা শাওন। বাবাইকে নিয়ে আমি আর তুলি এই পথে ভুল করে একবার ঢুকে পড়েছিলাম বছর তিনেক আগে। হারাচ্ছি, হারাচ্ছি কিন্তু হারাচ্ছি না এমন একটা পথ, আ...
Comments
Post a Comment