স্বাদ

শুক্রবারের সকালটা বড় অলস। সারা সপ্তা'র ঘুম এসে যেনো চোখে ভর করে। বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করেনা। কিন্তু তাহমিনার জন্য সেটা সম্ভব হয়না। নানা কাজ ঠিক করে রাখে সে শুক্রবারের জন্য। এম্নিতে সে নিজেই বাজার করে। ঘরের বিন্দু বিসর্গ সব কাজ নিজেই সামলায়। সেই অর্থে আসিফের আরামের জীবন।
সব শুক্রবারেইযে আসিফের জন্য কাজ রাখে তাহমিনা, তেমনটা নয়। কোন কোনদিন তার নিজেরই কাজ থাকে, বেরিয়ে যায়। কোনদিন হয়তো দেখা গেলো সেও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ওদের একটা সামাজিক সংগঠনও আছে। তিন সপ্তা পরপর সেটার মিটিং থাকে। ওই শুক্রবারটা আসিফের সবচে প্রিয়। তাহমিনা সকালেই বেরিয়ে যায়। ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়ায়। বিছানাটা আসিফের দখলে। কেউ নাই ডিস্টার্ব করার। আজ সেই শুক্রবার।
বেড সাইড টেবিল থেকে ঘড়িটা তুলে নিতে নিতে আসিফকে ডাকতে থাকে তাহমিনা, "শোন, আমি বেরুচ্ছি। তোমার নাশতা টেবিলে রেখে গেলাম, উঠে পড়ো। নয়তো ঠান্ডা হবে। আর শোন, ঘরে মাছ প্রায় শেষ, মুরগিও নাই। কটা মুরগি আর মাছ নিয়ে আসোনা বাবু আজ। প্লিজ প্লিজ..." তাহমিনা বলেই যায়। আসিফ শুধু হ্যাঁ-হুঁ করে। ওতে ক্ষতি নেই। তাহমিনা জানে ঘুমের ঘোরে শুনলেও আসিফ ঠিকই কাজটা করবে। সাথে টুকটাক সব্জি, মাছও নিয়ে আসবে। সে নিশ্চিত হয়ে বেরিয়ে যায়।
আসিফের প্রিয় রুমালি রুটি আজ। সাথে আলুর দম। রুটির সাথে মাংস খেতেই তার বেশি ভালো লাগে। কিন্তু ডাক্তারের সাথে তাহমিনার গভীর প্রণয়। প্রেশার একটু উপরের দিকে বলে এরা ষড়যন্ত্র করে ইদানিং তাকে মাংস খেতে দিচ্ছেনা। কিন্তু আসিফকে রুখে সাধ্য কার।
ফ্রিজ ভর্তি বাক্সো। রান্না করে করে বাক্সো ভর্তি করে ফ্রিজে রাখা তাহমিনার অভ্যাস। আসিফকে এখন এইসব বাক্সের ভিড় থেকে তার উদ্দিষ্ট বস্তু বের করতে হবে। টার্গেট সাধারণত মিস হয়না। কিন্তু তাহমিনাওতো বোকা না। সে জানে এইসব হবে। আসিফ একটা একটা করে বাক্স নামিয়ে টেবিলে রাখে। একটা ভাত ভর্তি বোল, ক্লিং ফিল্ম লাগানো দুটো বাটি। একটা চায়ের কাপে দুধের সর তুলে রাখা। আসিফের জিভে জল আসে, কিন্তু সামলে নেয়। বড় কিছুর জন্য, ছোট ছোট ত্যাগ স্বিকার করতে বলে গেছেন গুরুজনে। আজকের বিষয় রুমালি রুটি উইথ গোমাংশ। দুধের সর, তুমার জন্য কৃষ্ণ হবো অন্য ভোরে... এই বলে লোকেশন ঠিক রেখে রেখে বাক্সগুলো আবার আগের যায়গায় রেখে দেয় সে।
আহ্... কাহাতক আলুর দম গেলা যায় রোজ! স্বাদ না বদলালে কিসের জীবন? এজন্য অফিসে বসে সুযোগ মতো কাচ্চি বিরিয়ানি মেরে দেয় আসিফ। কিন্তু রুমালি রুটিতো বাড়ি-ঘর ছাড়া মেলেনা। তাই মাঝে সাঝে এমন কমান্ডো অভিযান চালাতে হয়।
বাজারে যেতে একদমই ইচ্ছা করছিলোনা। বিছানার মজা ছাড়তে ভালো লাগেনা। কিন্তু ঘড়ি দৌড়াচ্ছে। তাহমিনা আসার সময় হলো বলে। তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়তে হয়। তার আগে ঘরের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয়। অনভ্যস্থ কিছু আছে কি না। টেবিলটা দেখে নেয় এক পলকে। ঝোল টোল পড়ে থাকলে সমস্যা। নাহ, সন্দেহ করার মতো তেমন কিছু নেই।
গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করে, কোথায় নামিয়ে দিতে হবে তোমায়, নাকি সোজা তোমার বাসায়?- উদ্দেশ্যমূলক চোখ নাচায় আসিফ। "বদের মতো ইশারা করো না" বলে প্রশ্রয় মাখা হাসি হাসে নিতু। বেশি বেশি পেলে আবার খারাপ লাগা শুরু হবে। মেঝো আপার বাড়িতে যাবো, ওদিকটায় চলো। আসিফ মাথা দোলায়, "আবার কবে আসছো?" নিতু বলে, আর আসাআসি নাই। তুমি চাইলে আসতে পারো। মা কাল থেকে মেঝো আপার বাসায়। বাবুর জন্ম হওয়া পর্যন্ত আসা যাওয়া করবে! ইয়াহু বলে চিৎকার করে উঠে আসিফ। কাল সকালেই ফোন করছি তাহলে তোমাকে।
গাড়ি থেকে নামার পাঁচ মিনিটও হয়নি, নিতুর ফোন। আবার কি হলো বলে ফোন ধরে আসিফ। কাঁপা কাঁপা গলায় নিতু বলে, সর্বনাশ হয়ে গেছে আসিফ। আমার বাম কানের দূলটা নেই... আসিফের শরীরে একটা ঝাকুনি লাগে যেনো! বালিশের নিচে, নাকি ঘরের আর কোথাও পড়লো সেটা... আসিফের মাথাটা ঝিমঝিম করছে।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা