সংসারি মানুষরা সব স্বার্থপর হয়। খুব খুব স্বার্থপর...
মঙ্গলবার সন্ধায় যখন ভাবি বলেন, তুলি চল ঢাকা থেকে ঘুরে আসি। আমি সামনে বসা। ভাবছি, আর মানুষ পায়নি... শেষ করতে পারিনি সেই ভাবনা, আমাকে অবাক করে রাজি হয়ে যায়! সে যাবে... এমনকি আমি যাব এই ঘোষনাটাও দিয়ে দেয়! প্রচণ্ড ঘরকুনো তুলির এই আচরনে বেশ মজাই পাই। জিজ্ঞেস করি, কিভাবে? ছুটি নিলেনা... আমারওতো ছুটি নিতে হবে। বেশ একটা ঝামটা খেলাম। তারটা সে সামলাবে। আমার যেহেতু ছুটি নাই তাই অফিসে এমন ব্যবস্থা করি যাতে ফোন দিয়ে কাজ সারা যায়!
সন্ধায় অফিসে চলে আসি। তাদের পরিকল্পনা আর আমার জানা হয়না। মধ্যরাতের আগে আগে ঘরে ফিরে দেখি ব্যাগ গোছানো শেষ। আমাকে জানানো হল, আমার কাপড়ও ঢোকানো হয়েছে সেই ব্যাগে! কি পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতে চাই। মান অভিমানের গন্ধ পেয়ে কথা বাড়াইনা। আর খুব ভেতরে, মনের ভেতরে একটা লোভও হয়। কতদিন ছুটি কাটাইনা। এতদিনেও ছেলেটাকে নিয়ে কোথাও বেড়ানো হলনা।
বুধবার ভোরে ছেলে আমাকে ডাক দেয়, বাবা উঠ... আমরা ঢাকাত যাই... সেজ ভাইয়ায় গাড়ি আনছে... ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলি, তুমি যাও বাবা। বিকালে আসব আমি। সে বায়না ধরে, না এখন... আমি তাকে মানাতে পারিনা। আম্মা আসেন। বলেন, দাদু চল আমরা যাই। বাবা বিকালে আসবে। ছেলে আমার কি বুঝে জানিনা। তবে আমাকে আর ডাকেনা।
বৃষ্টির মাঝে দাদার কোলে চড়ে মাইক্রোতে চড়ে বসে বাবাই। আম্মা তার দুই বউ আর দুই নাতি নিয়ে ঢাকা রওয়ানা দেন। দশটার দিকে অফিসে চলে আসি। ম্যানেজার সাহেবকে খবর দিই। এই সময়টায় উনি ঘুমে থাকেন। ভোরে পত্রিকা বাজরে দিয়ে ঘুমাতে যান। তবুও ডাকি। খবর পেয়ে দ্রুত আসেন। বলি স্বপন সাহেব আমার ছেলেটাতো ঢাকায় চলে গেছে। এবার আমাকে যেতে হবে। আপনি অফিসটা একটু সমঝে নেন। আমি মামাকে বলে যাব। ( মামা= ইকবাল সিদ্দিকী, আমাদের উপদেষ্টা সম্পাদক।) কথা বলতে বলতে টিভি ছাড়ি। সি এস বি নিউজে যাই। ওমা একি। ঢাকাযে রণত্রে। দ্রুত কম্পিউটার অন করেই বিডি নিউজ, ব্লগ সবকটা উইন্ডো খুলে দেই... সবখানে একি খবর। খবরের মানুষ। এসবে কখনই ঘাবড়াইনা। বরং একটা উল্লাসই খেলা করে মনের ভেতর বুঝিবা। নিউজের গন্ধে এমনটা মনেহয় অনেকেরই হয়। কিন্তু আজ কেমন ঘাবড়ে গেলাম। ফোন করি ভাবির ফোনে। তুলিকে এসব বলা ঠিক হবেনা। ঘাবড়ে যাবে। তারা তখন উজানভাটি পাড়ি দিচ্ছেন। জিমেইলে পিয়াল ভাই যেসব কথা বলেছিলেন সেটুকু পাচার করি। তাদেরকে টঙ্গি দিয়ে শহরে ঢুকার কথা বলি। যদিও সেই রাস্তাটা কতটা নিরাপদ সেটা জানিনা। তবু আন্দাজে ধরি। কারন খবরতো সব শহরের।
এরিমাঝে সিলেটের খবরও আসতে শুরু করেছে। শাবিতে মিছিল। আমি বেশি পাত্তা দিইনা। এমসি কলেজের খবরটা জরুরি। সিলেটে কিছু হলে সেখানেই হবে। মদনকেও হিসাবে ধরি। একটু পরেই খবর আসে। এমসি কলেজে মিছিল চলছে। কিন্তু র্যাব-৯ হেডকোয়ার্টার কলেজের খুব পাশে থাকায় ছাত্ররা বেশি সুবিধা করতে পারেনি। খুব দ্রুত তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের কাজগুলো খুব দ্রুত সামলে নিই। এই প্রথম পেশার প্রতি টানহীন হয়ে পড়ে নজমুল আলবাব... বার বার মনে হতে থাকে, আহা ছেলেটা এভাবে বল্ল, কেন গেলামনা সাথে। সেইতো বিকালে যাব, তবে কেন কয়েক ঘন্টা আগেই গেলামনা... মুহুর্ত যায়না আমি ফোন করি। এখন কোথায়? উত্তর শুনে মনে হয় মাইক্রোর ড্রাইভার হারামজাদাকে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়া দরকার। সে এমন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চালায় কেন... ভাবি আমাকে শান্তনা দেন। নিশ্চিন্ত থাকতে বলেন। তুলি আমাকে আবারও অবাক করে বলে, আমি যেন চিন্তা না করে বিকালে বাসে উঠার ব্যবস্থা করি। আগে আগে টিকেট না কাটলে ভাল যায়গায় সিট পাবনা এটাও মনে করিয়ে দেয়।
ওরা ঠিক মতো দুপুরের পরেই মীরপুরে পৌছে যায়। ঘরে ঢুকেই আম্মা ফোন করেন। আর চিন্তা করনা।
টিভি চলছে। খবর দেখছি... কেমন একটা দুলোনি টের পাই রক্তে... কিন্তু সেই দুলোনিটা বেশিন আমাতে স্থায়ি হয়না। কারন আমি জেনে যাই অনির্দিষ্টকালের কার্ফিউ জারি করেছেন ‘সরকার বাহাদুর’! আমি বুঝে যাই বাবাইটা আমার একাই কাটাবে ঢাকায় বন্দি জীবন। এবারও তুলির বেড়ানো হলনা... বিকাল পাচটার দিকে ফোন করি। দেখা যায়না তবে অনুভব করি তুলি কাদছে... তবে সে কান্নায় যতটানা কষ্ট তারচে অনেক বেশি ক্ষোভ... বাবাই আমায় বলে বাবা তুমি আওনা খেনে... আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে... বলি, বাবা তুমি ভাইয়াকে নিয়ে ঢাকার নানার সাথে বেড়াতে যেও। ছেলে আমার আর কিছু বলেনা, বলতে পারেনা... ধাতব শব্দ বাজে খুব হালকা সুরে... লাইনটা কেটে যায়... আমি আবারও ফোন করার চেস্টা করি, পারিনা। অনেক্ষন লেগে যায় আমার, মোবাইলের নেট বন্ধ এই কথাটা বুঝতে...
সন্ধায় অফিসে চলে আসি। তাদের পরিকল্পনা আর আমার জানা হয়না। মধ্যরাতের আগে আগে ঘরে ফিরে দেখি ব্যাগ গোছানো শেষ। আমাকে জানানো হল, আমার কাপড়ও ঢোকানো হয়েছে সেই ব্যাগে! কি পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতে চাই। মান অভিমানের গন্ধ পেয়ে কথা বাড়াইনা। আর খুব ভেতরে, মনের ভেতরে একটা লোভও হয়। কতদিন ছুটি কাটাইনা। এতদিনেও ছেলেটাকে নিয়ে কোথাও বেড়ানো হলনা।
বুধবার ভোরে ছেলে আমাকে ডাক দেয়, বাবা উঠ... আমরা ঢাকাত যাই... সেজ ভাইয়ায় গাড়ি আনছে... ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলি, তুমি যাও বাবা। বিকালে আসব আমি। সে বায়না ধরে, না এখন... আমি তাকে মানাতে পারিনা। আম্মা আসেন। বলেন, দাদু চল আমরা যাই। বাবা বিকালে আসবে। ছেলে আমার কি বুঝে জানিনা। তবে আমাকে আর ডাকেনা।
বৃষ্টির মাঝে দাদার কোলে চড়ে মাইক্রোতে চড়ে বসে বাবাই। আম্মা তার দুই বউ আর দুই নাতি নিয়ে ঢাকা রওয়ানা দেন। দশটার দিকে অফিসে চলে আসি। ম্যানেজার সাহেবকে খবর দিই। এই সময়টায় উনি ঘুমে থাকেন। ভোরে পত্রিকা বাজরে দিয়ে ঘুমাতে যান। তবুও ডাকি। খবর পেয়ে দ্রুত আসেন। বলি স্বপন সাহেব আমার ছেলেটাতো ঢাকায় চলে গেছে। এবার আমাকে যেতে হবে। আপনি অফিসটা একটু সমঝে নেন। আমি মামাকে বলে যাব। ( মামা= ইকবাল সিদ্দিকী, আমাদের উপদেষ্টা সম্পাদক।) কথা বলতে বলতে টিভি ছাড়ি। সি এস বি নিউজে যাই। ওমা একি। ঢাকাযে রণত্রে। দ্রুত কম্পিউটার অন করেই বিডি নিউজ, ব্লগ সবকটা উইন্ডো খুলে দেই... সবখানে একি খবর। খবরের মানুষ। এসবে কখনই ঘাবড়াইনা। বরং একটা উল্লাসই খেলা করে মনের ভেতর বুঝিবা। নিউজের গন্ধে এমনটা মনেহয় অনেকেরই হয়। কিন্তু আজ কেমন ঘাবড়ে গেলাম। ফোন করি ভাবির ফোনে। তুলিকে এসব বলা ঠিক হবেনা। ঘাবড়ে যাবে। তারা তখন উজানভাটি পাড়ি দিচ্ছেন। জিমেইলে পিয়াল ভাই যেসব কথা বলেছিলেন সেটুকু পাচার করি। তাদেরকে টঙ্গি দিয়ে শহরে ঢুকার কথা বলি। যদিও সেই রাস্তাটা কতটা নিরাপদ সেটা জানিনা। তবু আন্দাজে ধরি। কারন খবরতো সব শহরের।
এরিমাঝে সিলেটের খবরও আসতে শুরু করেছে। শাবিতে মিছিল। আমি বেশি পাত্তা দিইনা। এমসি কলেজের খবরটা জরুরি। সিলেটে কিছু হলে সেখানেই হবে। মদনকেও হিসাবে ধরি। একটু পরেই খবর আসে। এমসি কলেজে মিছিল চলছে। কিন্তু র্যাব-৯ হেডকোয়ার্টার কলেজের খুব পাশে থাকায় ছাত্ররা বেশি সুবিধা করতে পারেনি। খুব দ্রুত তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের কাজগুলো খুব দ্রুত সামলে নিই। এই প্রথম পেশার প্রতি টানহীন হয়ে পড়ে নজমুল আলবাব... বার বার মনে হতে থাকে, আহা ছেলেটা এভাবে বল্ল, কেন গেলামনা সাথে। সেইতো বিকালে যাব, তবে কেন কয়েক ঘন্টা আগেই গেলামনা... মুহুর্ত যায়না আমি ফোন করি। এখন কোথায়? উত্তর শুনে মনে হয় মাইক্রোর ড্রাইভার হারামজাদাকে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়া দরকার। সে এমন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চালায় কেন... ভাবি আমাকে শান্তনা দেন। নিশ্চিন্ত থাকতে বলেন। তুলি আমাকে আবারও অবাক করে বলে, আমি যেন চিন্তা না করে বিকালে বাসে উঠার ব্যবস্থা করি। আগে আগে টিকেট না কাটলে ভাল যায়গায় সিট পাবনা এটাও মনে করিয়ে দেয়।
ওরা ঠিক মতো দুপুরের পরেই মীরপুরে পৌছে যায়। ঘরে ঢুকেই আম্মা ফোন করেন। আর চিন্তা করনা।
ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। জরুরি কাজ গুলো স্বপন সাহেব বুঝে নেন। টিকিটের জন্য বাসের কাউন্টারে ফোনটাও তিনি করেন।
টিভি চলছে। খবর দেখছি... কেমন একটা দুলোনি টের পাই রক্তে... কিন্তু সেই দুলোনিটা বেশিন আমাতে স্থায়ি হয়না। কারন আমি জেনে যাই অনির্দিষ্টকালের কার্ফিউ জারি করেছেন ‘সরকার বাহাদুর’! আমি বুঝে যাই বাবাইটা আমার একাই কাটাবে ঢাকায় বন্দি জীবন। এবারও তুলির বেড়ানো হলনা... বিকাল পাচটার দিকে ফোন করি। দেখা যায়না তবে অনুভব করি তুলি কাদছে... তবে সে কান্নায় যতটানা কষ্ট তারচে অনেক বেশি ক্ষোভ... বাবাই আমায় বলে বাবা তুমি আওনা খেনে... আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে... বলি, বাবা তুমি ভাইয়াকে নিয়ে ঢাকার নানার সাথে বেড়াতে যেও। ছেলে আমার আর কিছু বলেনা, বলতে পারেনা... ধাতব শব্দ বাজে খুব হালকা সুরে... লাইনটা কেটে যায়... আমি আবারও ফোন করার চেস্টা করি, পারিনা। অনেক্ষন লেগে যায় আমার, মোবাইলের নেট বন্ধ এই কথাটা বুঝতে...
নাজমুল আলবাব ভাই বোধহয় আর সামহোয়্যারে লেখেন না। আপনার লেখাগুলো মিস করি। সচলায়তনে ঢুকে হঠাৎ আপনার একটা মন্তব্য দেখে আপনার ব্লগে আসলাম। অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়ে আবারও আগের মতই ভাল লাগল।
ReplyDeleteবায়েজীদ।
"বায়েজীদ, কেমন আছেন? আপনার জন্যই আজ সামহোয়ারে আসলাম। ভুল না করে থাকলে আপনিই আমার ব্লগস্পটে কমেন্ট করে এসেছেন। খুব ভাল লেগেছে সেই কমেন্ট দেখে। ভাল থাকবেন। খুব ভাল।
ReplyDeleteআরে বলাই হলনা, এখানে এসে আপনার এই দারুন লেখাটাও পড়া হয়ে গেল। ঝরঝরে লেখাটা পড়ে আরামবোধ হল।"
--নজমুল আলবাব ভাই, অনেক আনন্দিত হলাম আপনার কমেন্ট পড়ে। আপনি সমহোয়্যারে এসে আমার মন্তব্যের জবাব আমার ব্লগে দিয়ে গেলেন, এটা পাঠক হিসেবে আমার জন্য অনেক সম্মানের। আর লেখার প্রশংসা করে লজ্জা দেবেন না, আমি জানি আমার লেখার করুণ অবস্থার কথা, তারপরও অনেক ধন্যবাদ এই উৎসাহ দেয়ার জন্য।
একটা মেইল করেছি আপনাকে, একটু দেখবেন দয়া করে।
যোগাযোগের একটা উপায় থাকা উচিত। আশা করছি সব কিছু ঠিকমতো চলছে।
ReplyDelete