একটা হাবিজাবি রচনা

গত সপ্তাহের পুরোটা সময় কেটেছে দুধের পেছনে। ঘরে দুইটা বাচ্চা। নিজের আর ভাইয়ের। আমাদের পারিবারিক সকল কর্মকান্ড এদের নিয়ন্ত্রনেই আছে। এই উড়ে আসা সরকারে সেনাপ্রধান যতটা গুরুত্বপূর্ণ তারচেয়ে কয়েকগুন বেশি এদের পারিবারিক অবস্থান। সেই দুই ভি ভি আই পি'র খাদ্য সংকট নিয়ে আমর ব্যস্ত, আতংকিত এবং অক্ষম ক্রোধে আক্রান্ত।
১৭/১৮ বছর আগেও আমাদের বাড়িতে গরু পালা হতো। আমরা দুই ভাই আক্ষরিক অর্থেই হাতের কব্জি ডুবিয়ে দুধ খেয়েছি। কিন্তু বাবা-মায়ের সেই পশু প্রীতি কেন যেন আমরা পাইনি। তাই পাশের বাড়িতে থাকতে থাকতে আমাদের শেষ গাভীটি দু তিন মাস আগে মারা গেছে। দুধের এই দুঃসময়ে বার বার এক 'কৃষকমন' আমার ভেতরে তড়পাচ্ছিলো।
আমার এই তড়পানি তুলিকে তেমন স্পর্শ করেনি। সে বার বার বলছিলো, আরে এতদিন যখন খাইছে, তাইলে আর কয়েকমাস খেলে কিছু্ই হবে না। কিন্তু সরকার বাহাদুর তাকে আটকে দিলো। বুধবারে মার্কেট থেকে দুধ উধাও। বাবাইকে যে ব্রান্ড দেয়া হয় সেটা সিলেটে যারা বাজারজাত করে তাদের একজনকে ধরলাম। সে বল্লো তাদের কাছে যা ছিল সব ফেরত দিয়ে দিয়েছে। লোকজন কিছুতেই বিশ্বাস করেনা আমি আর আগের মতো ছিদ্র খুজে বেড়াই না। সাংবাদিকতায় ইস্তফা দিয়েছি। তারা আসল কথা আমার কাছে আগের মতই চেপে যায়।
বিকালে বাসায় যাওয়ার পথে শুরু হলো দুধ খোঁজাখুঁজি। তুলি তখনও গুড়ো দুধ খুজেই যাচ্ছে। আমি তার পেছন পেছন হাটছি। একবার বল্লাম দেশী তরল দুধ নিয়ে নিতে, সে বিকট রিএক্ট করলো। এরচেয়ে নাকি মেলামাইনওয়ালাটা অনেক নিরাপদ!
একবার সে বাসায় ফোন করে জেনে নিলো, গরুর দুধ জোগাড় হয়েছে কীনা। আম্মা না করলেন। পরিচিত এক দোকানদার তখন একটা ফার্মের খবর দিলেন, সকাল-বিকাল একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে গেলে সেখানে নাকি দুধ পাওয়া যায়। ছুটলাম দুজনে। ভাগ্য ভালো মিলে গেলো। সময়টাও মিললো আমাদের সাথে। সন্ধ্যায় বাড়ি যাবার পথে নিয়ে নেয়া যাবে।
আমার বাচ্চাদের দুধের সমস্যা মিটে গেলো বলা যায়। বাপের বানানো বাড়িটাকে কাজে লাগিয়ে হয়তো যে কোন দিন আমি নিজেই দুধ ওয়ালা বনে যেতে পারবো। কিন্তু অন্যদের?
আমাদের মহা ক্ষমতাধর বর্তমান সরকার দুই বছরে কত্তো বড়ো বড়ো বুলি আওড়ালো, এখন তারা কথা বলেনা কেনো? অনেক লোকেরইতো কোমর ভেঙেছে তারা, সংস্কারে সংস্কারে ভরে দিয়েছে দেশটা। এখন তাদের সেই জেহাদী ভাব নাই কেন? দুধের এই ভেজালে তারা বাজার থেকে সব দুধ তুলে নিলো, এতেই কি সব দায়িত্ব শেষ? বিকল্প ব্যবস্থার দায়িত্বটা তবে কে নেবে? এই অশ্লিল মানুষগলো কি একবারও সাধারণের কথা ভাবে না?
হরলিক্স এর একটা বিজ্ঞাপন ব্রিটিশরা বন্ধ করে দিয়েছে মিথ্যাচারের জন্য। সেখানে সাফাই গাইতে গিয়ে এরা আবার বলেছে, বিজ্ঞাপনটা নাকি বাংলাদেশের জন্য বানানো হয়েছে। এর মানে কি? কেউ বলতে পারে না। আমাদের ক্ষমতাধর সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেছেন, আইনের খামতি আছে বলে বিজ্ঞাপনগুলোর বিরুদ্ধে কিছু করা যাচ্ছে না।
যারে শালা, এইও আমাদের শুনতে হলো। এই সরকার তবে আইন বুঝে ব্যবস্থা নেয়। আহমেদ নূর ভাইকে তবে বলতে হবে, তার পা ভাঙা হয়েছে আইন মেনে... তিনি যেন বেশি লাফালাফি না করেন।
প্রথম আলো সব ভালোর সাথে থাকার দাবী করে। সম্পাদক মতিউর রহমান কেমন বিছিয়ে বিছিয়ে, ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন। সেই মতিউর রহমান তার পত্রিকায় নিয়মিত মিথ্যাচারে ঠাসা হরলিক্স এর বিজ্ঞাপন ছাপান। আহা বড়ো বিচিত্র দুনিয়া। জাতীর বিবেকগুলো কেন যে যাত্রাপালার সেই বিবেকের মতো হয় না...

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

বিকেলের রোদে দেখা মেয়ে