এই লেখাটার শিরোনাম নাই। দিতে পারি নাই

বছর দশেক হতে চল্ল... নাহ যুগ পেরিয়ে গেছে। তখন ঢাকা নামের নগরটা আরো অনেক দুরের ছিল। ট্রেনে চড়লে সিলেট পৌছাতে সময় লাগতো সাত/আট ঘন্টা। আর বাসে চড়ার জন্য যথেষ্ঠ সময় হাতে রাখতে হতো। রাতের বেলায় সাহস। নভেম্বরের ২৩ তারিখের ভোর। রাতের বাসে সেই পথ পাড়ি দিয়ে, একটা উলুম্বা পাঠা হৈ হৈ করতে করতে আমার রুমে ঢুকে একেবারে লেপের তলায় সেদিয়ে গেল। লাত্থিগুতা মেরে তাকে নামানো গেলোনা। সে তারস্বরে চেচায়... চিৎকারের ঠেলায় মা নেমে এসে চিল্লা ফাল্লা করে থামালেন। সাফ সাফ বলে দিলাম রোদের যথেষ্ট তেজ না হলে আমাকে যেন সে না ডাকে। কে শোনে কার কথা, পাঠার কাইকুই এর মাঝে কি আর ঘুমানো যায়? অনভ্যাসের সময়ে উঠে দেখা গেল ভ্যামতালাবদমাশটা বিশাল একটা ব্যাগ বয়ে এনেছে, আর তাতে ঠেসে এনেছে মানিক রচনা সমগ্র!!! তিন দশকের অধীককাল বেঁচে থেকে এর চেয়ে মূল্যবান উপহার আর পাইনি। আমার বই এর তাকে রোজ রোজ শোভা ছড়ায় প্রিয় উলুম্বা পাঠা গৌরীশের সেই ঠান্ডা অথচ আবেগী ওমে ভরা ভোরটা...
নভেম্বর তেইশের মতো আরো অনেক তারিখ ছিল আমাদের। সারাদিন আমরা বন্ধুরা মিলে শহর সিলেটকে উল্টে পাল্টে গিলে খেতাম সে সময়ে। তারপরে আমাদের নিস্তরঙ্গ জীবনের শুরু হয়েছিল। সকলের অলক্ষে। আমাদের মাঝে খরগোশের মতো চুপিসারে ঢুকে গেল কয়েকটা মানব মানবি। আমাদের আর নিজের বলে কিছু থাকলো না। আমরা মুড়ি মুড়কির মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলাম।
মাঝখানে শূন্যতার মতো দীর্ঘ বিরতির পরে গত শীতে আবার পেয়েছিলাম সেইসব সময়ের কিছুটা ওম। আর এইবার একেবারে ভেসে গেলাম। ....৭৭ নাম্বার সচল লেখায় সৌরভের কিবোর্ড থেকে ছুটে আসা কোমল তুষার আমারে ভিজায় যখন তারও আগে মুঠোফোন ভরে উঠে টুকরো টুকরো চিঠিতে। দুরাগত পাখির মতো গান গায় প্রিয়সব কণ্ঠস্বর...
শুভ ভাই (আলী মাহমেদ) বলেন, প্রতিটা কমেন্ট নাকি তাকে ছুয়ে যায়, সৌরভের পোস্টে করা বন্ধুদের বাক্যগুলো সারাদিন আম্মার দেয়া চাদরের মতো আমারে জড়ায়ে ধরে। অনুভূতি কেমন ভোতা লাগে, আমিও আরন্যকের মতো অনুভূতিশূন্য হই। কাজের ফাঁকে, দৌড়ের ফাঁকে বার বার সচলের পাতায় ফিরে আসি। ভেতরে কতো উচাটন হয় প্রতিবার তার আর কোন বয়ান দিতে পারেনা অক্ষম গদ্য লেখক নজমুল আলবাব। কৃতজ্ঞতায় নত হওয়া ছাড়া আর কিছু নাই।
শুধু বিকেলের রোদ ম্লান হয়ে এলে প্রিয় পলাশ দত্ত যখন মরে যাওয়া কোন এক অপুর জন্য রচনা করেন শোকগাথা, নিজেরে আর ধরে রাখা যায় না। আমিও আপ্লুত হই। মৃত আত্মার জন্য বুকের ভেতরে আনচান করে, চোখ জ্বলে...

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা