Posts

Showing posts from April, 2009

পুরনো গল্প ০৩

মা গুনে গুনে টাকা দিতো। ডানোর কৌটো থেকে বের হতো সেই টাকা। সাত টাকার ডাল, এক টাকার কাচা মরিচ... এভাবে টাকার অংক ধরে ধরে বাজারে পাঠাতো আমাকে। ততদিনে আমি জেনে গেছি, এভাবে হিসেব করেই বাজারে যেতে হয় আমাদের। এভাবে হিসাব করে বাজার করা যায় না তবু সেটা মেনে নিতে হবে। এও জেনেছি, সাত টাকায় এক পোয়া ডাল আর তেরো টাকায় আধা সের, এক টাকা বাচানোর এই হিসাবে আমরা যেতে পারবো না। আমাদেরকে রোজ আট আনা বেশি দিয়েই ডাল কিনতে হবে। বাবা মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় বারান্দায় এসে দাড়াতো। সে বৃষ্টিই হোক আর শীত। বাজার থেকে ফিরে এসে দেখি বাবা বারন্দায়, সন্ধার আলো আলো অন্ধকারে বাবা আমার দিকে স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি সেটা দেখি, আবার নাও দেখি। কথা বলতো না। শুধু একবার, রাতে, মাঝরাত হবে হয়তো। কি একটা বই খুজতে বাবার ঘরে গেলে বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কিরে টুটুল তুই রোজ রোজ সাত টাকার ডাল কিনিস কেনো? আমি অবাক হয়ে বলি, তুমি জানলে কিভাবে? বাবা একটু থেমে আবার বলে তেরো টাকা দিলেতো আধাসের ডাল পাওয়া যায়। রোজ রোজ আট আনা বেশি দিস কেনো? আমার মাথায় ঢং ঢং করে হাতুড়ির বাড়ি পড়ে। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে তাকানো চোখটায় পুরনো সেই শূন

আলবাব'র সময় ০৫

একেকটা রাত মৃত্যুর মতো দীর্ঘ হয়ে আসে... মানুষ মূলত মিথ্যুক জেনেও ভালোবাসা বিলায় প্রকৃতি। এইসব প্রেম ও অপ্রেমে, করুণা ও কার্পণ্যে ভেজার সময় কোথায় বলো? প্রতারিত আলবাব অভিমান ভুলেছে, বিশ্বাস হারিয়েছে মানুষে সরল রেখার জীবন, এইবার তবে ছুটি নাও

পুরনো গল্প ২

বাবার একটা আলাদা রুম ছিলো। দাদাজান যখন বাড়ি বানান, বাবা তখন যুবক। ছেলের জন্যে আলাদা একটা রুম বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘর ঠাসা ছিলো নানান রকমের বই এ। বাবা সেই ঘরে ডুব দিলেন। বড়দা এক রাতে ট্রেন ধরার জন্যে যখন বাড়ি ছাড়ছিলো, তার আগে বাবার সাথে দেখা করার জন্যে গেলো সেই রুমে। বাবার সাথে কি কথা হয়েছিলো বড়দার সেটা আমরা জানি না। এই কথা শুধু মনে আছে, বড়দা বেরিয়ে এসে আর দাড়ায়নি। হন হন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমি পেছন পেছন সাইকেল নিয়ে বেরুলাম। দাদা সেটা চালিয়ে স্টেশনে গেলো। রাস্তায় কোন কথা হয়নি দু’ভাইয়ে। স্টেশনে ঢুকার মুখে, আমার হাতে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে বল্লো, একটা পেডলক কিনিস সাইকেলের জন্যে। তারপর দু কদম এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে বল্লো, 'টুটুল, বাবাকে দেখে রাখিস সোনাভাই। বাবা খুব কষ্টে থাকেরে...' দাদার চোখে টলটল করছিলো পানি, সাইকেল চালাতে চালাতে মুছে ফেলছিলো যা, এইবার আর সেটা করলো না। টপ টপ করে গাল বেয়ে নেমে আসে ... সাইকেলের প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে অবাক হই, সেই প্রথমবার আমি রাত দশটায় একা বাড়ি ফিরি। সেইদিন থেকে আমি বড়ো হতে শুরু করলাম।

পুরনো গল্প

স্কুলের ইউনিফর্ম ছিলো সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু পেন্ট। রোজ বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেই শার্ট টা ধুয়ে দিতে হতো। সাদা শার্ট একদিনের বেশি পরা যায় না। আমার একটাই শার্ট। পরের দিন পরতে হলে আগের দিনে সেটা ধুয়ে দিতেই হয়। বাবাকে দু'একবার বলেছি, বাবা আমাকে আরেকটা শার্ট কিনে দাও। দেয়নি বাবা। আসলে তার হাতেতো টাকা থাকতো না সেসময়। আমাদের টানাটানির সংসার ছিলো। বাবা বলতো, টুটুল একটু কষ্ট করে রোজ বিকালে শার্টটা ধুয়ে দিস বাবা। রোজ রোজ শার্ট ধুতে কার ভালো লাগে? এর মাঝে সাবান শেষ হয়ে গেলেও মায়ের সাথে রাগারাগি করতো বাবা। তাই আমি একদিন পর পর শার্ট ধুয়ার চেস্টা করতাম। বাবাকে দু একবার বুঝাতে চেয়েছি, এই যে রোজ রোজ সাবান খরচা হয়, এই বাড়তি টাকাটা এক করলেই একটা শার্ট কেনা যাবে। বাবা আমার যুক্তি শোনে সাদা সাদা চোখ নিয়ে আমাকে দেখতো। কিছু বলতো না। দাত দিয়ে নিচের ঠোট কাটতো শুধু। এসব দেখতে আমার ভালো লাগতো না। আমি বাবার সামনে থেকে চলে যেতাম। বাবা তখন বেকার ছিলো। ইট ভাটার ম্যানেজারি করতো বাবা। মালিক সেই ভাটার যায়গায় হাউজিং এর ব্যবসা খুলে বসেছিলো। বাবা তাই বেকার। এই বেকারত্ব অবশ্য কোনোদিনই আর কাটেনি। বড়দা যখন

হালখাতা

সকালে, সেটা সাতসকাল ছিলো না। আবার রোদও কড়া হয়নি এমন সময়ে বাবাই আমার ঘড়িটা পরলো। বেশ দামি এই ঘড়িটা। বলাই বাহুল্য, এটা আমি কিনিনি। লিল্লাহ পেয়েছি। (এইটা কেনার মুরোদ আমার নাই।) আমি হালকা রা॥রা.. করলাম। সে রুম থেকে বেরিয়ে হেডকোয়ার্টারে আশ্রয় নিলো। চিফ অব ফ্যামেলির আশ্রয়ে থেকে একটা আছাড়া মারলো। শখের ঘড়ি গেলো... সাত সকালে উঠতে হতো আগে। শহর যারা রাঙাতো আমিও তাদের একজন ছিলাম। এখন আর সেইসব দায় নাই। ইচ্ছে হলে ঘুরি, নাহলে ঘুমাই। শুনেছি আমাদের হাতে গড়া কলেজের উৎসব এখন মিলেঝুলে করা হয়। জিয়া আর মুজিবের সৈনিকেরা নাকি এককাতারে দাড়িয়ে বগল বাজায়। শুনতে খারাপ লাগে না। এই একটা উপলক্ষে কুকুরের চরিত্র ভুলে তারা গলাগলি করে এইটাইতো অনেক! তবু কিছুটা খচখচানি বুকের ভেতরে, খুব গভীরে করতেই থাকে। এক ভদ্রলোক বিবাহ করছেন, নববর্ষের দিনে বউভাত হচ্ছে। ভুলেও ভাববেন না, বাঙালিয়ানার টানে এই তারিখ নির্ধারন। ছুটির দিনটা কাজে লাগানোই মূল উদ্দেশ্য। গোসল টোসল করে, মাকে নিয়ে, বউকে নিয়ে, ছেলেকে নিয়ে আমি চেপে বসি আমার প্লাস্টিকে। (ঢাকার লোকজনে এই জিনিস চেনার কথা) ভালই চলে বেটা। অনভ্যস্থ আমি হালকা চালে এগুতে থাকি। কিন্তু মিনিট পনের