প্রতিক্রিয়াসমূহ

০.
বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর। নাজিম হিকমতের কথা। হয়তোবা মানুষ ভুলে যায় এক বছরের মাথায় তার শোকার্ত সময়কে। কিন্তু একুশ শতকে শোকের আয়ু কত বছর, কত দিন? এই ফেসবুক জামানায়, যখন মিনিটে মিনিটে বদলে যায় হোম পেইজ, নিজের দেয়াল!
১.
আমাদের দেশে মানুষের জীবন কচু পাতার পানির মতো। টুপ করে ঝরে যায়। ক্ষমতার জন্য, শুধুমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্র দখলের জন্য রাজনীতির সাথে যোগাযোগহীন মানুষকে পুড়ে মরতে হয়। বিষয়টা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মানুষ সেটা মেনে নিয়েছে যেনবা।
২.
দল বেঁধে মানুষ যখন পুড়ে মরে। কিংবা আস্ত একটা ভবন যখন মানুষকে নিয়ে মাটিতে মিশে যায়, ডুবে যায় আস্ত একটা লঞ্চ। আমরা বেদনাহত হই। মানুষ হিসাবে মানুষের জন্য কেঁদে ওঠে আমাদের মন। কিংবা অজানা কোনো কারণে যখন খুন হয়ে যান সাগর-রুনি তাতেও মানুষের ভেতর প্রশ্ন তৈরি হয়, প্রতিবাদ তৈরি হয়।
৩.
দল বেঁধে এই মৃত্যুর মিছিলের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে ব্লগারের মৃত্যু। সাধারণ মানুষের সাথে বুঝিবা এর কোনো সম্পর্কই নেই। যেনবা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মানুষ। এরা হঠাৎ করে মরতে শুরু করেছে। এদের কেউ প্রকৌশলী, কেউ ছাত্র, কেউ বেকার। এরা মরছে, আহত হচ্ছে খবর হচ্ছে। খবর হচ্ছে সে ব্লগার, তাই সে মরেছে, মরবে। ব্লগাররা মানুষ না।
৪.
৫৭ ধারার বলে আমি যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারি। আমার বন্ধুকে যেকোনো সময় আটক করা হতে পারে। এটি হয়েছে, হবেও। হত্যার হুমকি ফৌজদারি আইনে অপরাধ। ৫৭ ধারার প্রয়োগ আছে কিন্তু হত্যার হুমকি দিলে কিছুই হয় না। তাই আহমদ শফী ঘোষণা দেয় নাস্তিকদের মেরে ফেলা যাবে। নাস্তিকরা খুন হতে থাকে। এর আগে এই শফী মাওলানাই বলে দিয়েছে ব্লগাররাই হচ্ছে নাস্তিক। আমাদের দেশে তাই ব্লগার ও নাস্তিক এখন একটি সমার্থক শব্দ। মরতে থাকো।
৫.
রাষ্ট্রকে তার নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু মন্ত্রী অনেক আগেই বলে দিয়েছেন শোবার ঘরে গিয়ে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এর আগে অন্য মন্ত্রী বলেছিলেন, আল্লার মাল আল্লায় নিয়া গেছে... যদিও রাস্তায় কোপ খেয়ে মরে যাবার বিষয়ে কিছু বলা হয় নাই, তবু সমীকরণ মিলিয়ে ঝিম মারতে হবে। মানুষ মরুক। মরতে থাকুক।
৬.
আওয়ামীলীগ আমার ভোটে সরকার গঠন করেছে। প্রগতিশীল মানুষ এই দলকে সমর্থন দেন। দলটি এবং এর নেতৃত্বাধীন সরকার সেই ভোটের অবমাননা করেছে। বিশ্বাসকে নষ্ট করেছে। মুক্তচিন্তা এবং প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে তাদের নানা পদক্ষেপের দায়ভার দলটিকে নিতে হবে। এবং সবচে বেদনার হলো, মুক্তবুদ্ধির মানুষদেরকেই এই দলটির অপ-রাজনীতির খেসারত দিতে হবে।
৭.
মানুষ মরবেই। কোপ খাবেই। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। বাবু নামের স্বল্প পরিচিত ব্লগারটি মরে এই সত্য প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন। আপনি চলমান প্রক্রিয়ার বাইরে চিন্তা করেন। আপনার বলবার অনেক কথা আছে, মাঝে মাঝে সেটি বলেও ফেলেন তাহলেই হলো। মৃত্যুর জন্য, খুন হবার জন্য আপনি যোগ্যতম ভেবে নিন নিজেকে। তাই বলি, মরতেই যখন হবে, ভালো করে মরি। যা বলার, যেটুকু বলতেই হবে, বলে যাই। এই সময়ে হয়তো এর কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না। কে বলবে, আগামী পৃথিবীতে হয়তো এই বলে যাওয়া কথাটা মূল্য পেলেও পেতে পারে। আর নাইবা যদি পায়, তাতেই কী? বল্লাম তো...
৮.
আপনি মানুষ হলে আর কখনো হিজড়াদের নিয়ে ফাইজলামি করবেন না আশা করি।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা