লড়কে লেংগে পাকিস্তান ও প্রথমালো

পাকিস্তান ও প্রথম আলো নিয়ে বিরক্তির শেষ নেই। বাংলাদেশ-পাকিস্তান এর চলমান ক্রিকেট সিরিজ নিয়ে পাকিস্তানপন্থী এই দৈনিক আর এর খেলার পাতা যেভাবে নগ্ন পাকিপ্রেম দেখাচ্ছে সেটা নিয়ে এই লেখাটা তৈরি করার পর দেখি সচলায়তনে ইয়ামেন এ বিষয়ে লিখে ফেলেছেন। এখন এই লেখাটার করবো কী? ফেলতেও মন চাইছে না। তাই নিজের ব্লগে টুকে রাখলাম।
পাকিস্তানপন্থী প্রথম আলো নিয়ে সচলায়তনে বিস্তর লেখা আছে। এরমাঝে সবচেয়ে বেশি মনেহয় এর খেলার পাতা নিয়ে লেখা। প্রথম আলোর খেলার পাতায় তাদের দেশ পাকিস্তান নিয়ে যত ম্যাৎকার করা হয় এই মাপের ম্যাৎকার সম্ভবত পাকিস্তানের কোন দৈনিকেও করে না।
সংবাদপত্রে খবর তৈরি করার একটা বিষয় আছে। এইটারে মলা বলতাম আমরা। মলা মানে ঘোটা। আটা-ময়দা দিয়ে খামির বা কাই বানানোর সময় ঘোটা দেওয়াকে সিলেটে মলা বলে। কখনও ভালো নিউজের সংকট হলে, পুরনো কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধরে একটা রিপোর্ট নামানোরে মলা বলতাম। টেবিলমেইড রিপোর্টও বলে সম্ভবত। প্রথম আলোর খেলার পাতার পাকিস্তান প্রেম এতই প্রবল যে, যখন পাকিস্তানের কোন খবর থাকে না, তখন এরা মলা দিয়ে খবর তৈরি করে। যেমন, মোহাম্মদ আমির বিলাত ভ্রমণে। বাবা হচ্ছেন শোয়েব মালিক... এরকম।
প্রথম আলোর পাকিস্তানপন্থী হবার মিছিলে যেমন যোগ্য নেতার মতো নেতৃত্ব দেন তাদের সম্পাদক মতিউর রহমান। খেলার পাতাতেও আছেন যোগ্য নেতা। তিনি সেই বিভাগের সম্পাদক, উৎপল শুভ্র। এই মানুষটার পাকিপ্রেম অসুস্থতার পর্যায়ে পড়ে। সে এতটাই অসুস্থ যে, নিজের দেশের বিপক্ষে খেলা থাকলেও সে পাকিস্তান পাকিস্তান বলে গলায় রক্ত বের করে আনে। চলমান সিরিজে সঙ্গত কারণেই যেটা মাতমে রুপান্তরিত হয়েছে।
এবারকার সিরিজ শুরুর আগে এরা যে প্রতিবেদন ছাপে সেটাতে আফ্রিদি, মিসবাহ, ইউনুস দলে নেই বলে যে মাতম করা হয়েছে এর সাথে তুলনা করতে হলে ইউটিউবে গিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে আপ করা সেদেশের ভিডিও দেখতে হবে আপনাকে। তারপরও সাচ্চা পাকিস্তানিদের মতো এদের আশাবাদের শেষ নেই। প্রথম আলো আশা করে, প্রতিভা প্রসবা দেশ পাকিস্তান দলে যারাই আছে তারাতো আর এমনি এমনি দলে আসেনি। এরপর প্রতিদিন এরা খুজে খুজে বের করেছে তাদের তুরুপের তাসদের। মাশরাফি কতবার আউট হয়েছেন সাইদ আজমলের বলে। কতটা বল খেলেছেন তখন। এমনকি মাথায় মাথায় যুদ্ধে জিতে গেলেও রক্ষা নেই। তাই অপরাজিত সেঞ্চুরি করার পরও মোহাম্মদ হাফিজ এর আগে কতবার কতো অনায়াসে আউট করেছেন তামিমকে, সেই গল্পটা শুনতে হয় পাঠককে।
আহা উহুর মাত্রাটা কত উপরে পৌছালে জয়ি দেশের সাংবাদিক হয়েও এরা, যেকোন স্কোরকেই বড় করতে পারার পৌরানিক গল্প মনে করে হা হুতাশ করে লিখে, পাকিস্তানের সেই সুনামটা ধুয়ে মুছে দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আহারে সুনাম...
বাংলাদেশের খেলোয়াড়কে নিয়ে করা ফিচারে লাইনে লাইনে আসে তুলনা। সেটা সেই পাকিস্তান নিয়েই। ভাষাটা এমন, যেনো যতযাই হোক এর মতো নয় এরমতো নয়। তাহলেকি এরা তুলনা প্রতিতুলনা ছাড়া কিছু লিখতে পারে না? উহু, পারে। সেটার জন্য আফ্রিদী হতে হবে। তখন দেখবেন ওয়ানডেতে এই মহান ক্রিকেটার না থাকায় ওয়ানডে ক্রিকেটটা আর খেলাই থাকেনি! দেখবেন ওয়ানডে নিয়ে করা প্রতিবেদনে ধান ভানতে শীবের গীতের মতো টিটুয়েন্টির গল্প আসবে, আশাবাদ আসবে ২০১৬ এর টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে। কারণ ওটাতে যে আফ্রিদী খেলবেন, যেটাতে আবার তারা চ্যাম্পিয়নও হবে! হু প্রথম আলো সেই স্বপ্নই দেখে, দেখায়।
আগেই বলেছি পাকিলেহনের এই উৎসবের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন খেলার পাতার সম্পাদক উৎপল শুভ্র। তার প্রতিটি লেখায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। পাকিস্তানের সাথে টিটুয়েন্টি ম্যাচ জেতার পর এই শুভ্র যে লেখাটা লিখলেন, এর প্রতিটা লাইন পাকিবন্ধনায় ঋদ্ধ। লাইন ধরে ধরে কোট করতে গেলে পুরোটাই তুলে দিতে হবে। এই লেখাটা পড়ার পর আপনার মনে হতে বাধ্য যে, বাংলাদেশ ভুল করে জিতে গেছে। একেবারে অনুচিত, হিসাবের বাইরে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। স্কিল টিল কিচ্ছু না, শুধু মনের জোর দিয়ে বাংলাদেশ জিতে গেছে। আর বলবেইনা কেনো? এতো জোর দিয়ে যখন তারা আগেভাগে বলে দেয় ‘আগামিকাল ভিন্নকিছু ঘটবেই’ আর তারপর যখন সেরক কিছু ঘটে না তখনতো এরকম কিছুই বলতে হবে। এই লোকটা কতবেশি পাকিস্তান প্রেমি তার এই লেখার একটা অংশ পড়লেই বুঝতে পারবেন... একটা অংশ বলছি কি? পুরাটাইতো সেরকম। একটা যায়গায় দেখা যায় এক কিশোর তাকে ফোন করেছেন খেলার বিষয়ে। সেখানে উৎপল শুভ্র বলছেন, বাংলাদেশ জিতবে এটা আশা করা যায় না, কারণ এই দলটা টিটুয়েন্টি খেলতেই পারে না! উৎপল শুভ্র লিখেন, "এই ম্যাচের আগের দিন দুপুরে একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর অনেক কথাই মনে গেঁথে আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এটি: আমরা পারব—ভেতরে এই বিশ্বাস থাকাটা খুব জরুরি। কথাটাকে শুধু ওয়ানডের জন্যই প্রাসঙ্গিক মনে করেছিলাম। মাশরাফির সঙ্গে কাটানো ঘণ্টা দেড়েক সময়ে সাক্ষাৎকারের বাইরেও কত কিছু নিয়ে কথা হয়েছে..."
হ্যা, পাকিস্থানপন্থী দৈনিক প্রথম আলোর ক্রিড়া সম্পাদক নির্লজ্জ পাকিলেহক উৎপল শুভ্র খেলার আগেরদিন প্রায় দেড় ঘন্টা আমাদের ক্যাপ্টেনের সাথে ছিলো। ছাপানো সাক্ষাৎকারের বাইরেও আরো অন্য অনেক কিছু নিয়ে সে কথা বলেছে। এই লোকটা চমৎকার লিখে। সম্ভবত সে কথাও বলে ভালো। সাথে আছে প্রথম আলোর মার্কেট ভ্যালু। তাই তার সাথে সব খেলোয়াড়েরই আলগা খাতির।
তো এরকম একটা মানুষ, যে বাংলাদেশ একটা দলকে হোয়াইট ওয়াশ করার পরও সেই দলটাকে নিয়েই বুদ হয়ে পড়ে থাকে। টিটুয়েন্টিতে বাংলাদেশ পারবেনা বলে শতভাগ নিশ্চিত লোকটা সারা দিনমান আফ্রিদি আফ্রিদি ম্যাৎকারে, লালায় নিজের লেখাগুলো পিচ্ছিল করে রাখে। আর শেষ মুহূর্তকাল পর্যন্ত আশা করে পাকিস্তানই জিতবে, এই যেমন ১৪১ করার পরও সে আশা করে বাংলাদেশকে ১০০ পেরুতে দেবে না তার পেয়ারা পাকিস্তান। তারে এভাবে বাংলাদেশ অধীনায়কের সাথে অবাধে কথা বলা নিষেধ করাকি উচিৎ না? এর মাধ্যমে দলের ভেতর ঋনাত্বক ভাবনা প্রবেশ করার শতভাগ সম্ভাবনা নিয়ে কেউ ভাববে না ক্রিকেট বোর্ডে? চোর-দুর্নীতিগ্রস্থ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সাথে দহরম মহরম থাকা প্রভাবশালী এই সাংবাদিকের মাধ্যমে এমনকি পাকি জুয়াড়ির অনুপ্রবেশওতো হতে পারে!
দেশের স্বার্থে, ক্রিকেটের স্বার্থে, উৎপল শুভ্র নামের পাকিস্তানপন্থী সাংবাদিকটিকে বাংলাদেশ দল থেকে দুরে রাখার দাবী জানাচ্ছি।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা