বউ বাটা বলসাবান: বিস্মৃত বয়ান


বেশি বেশি ভাব বলে একটা কথা আছে। আমরা প্রায়ই এই কথাটা বলি, পাব্লিকের বেহুদা আচরনকে বুঝাতে। এই মূহুর্তে আমি সেরকম একটা বেহুদা আচরণ অর্থাত্ বেশি বেশি ভাবের কাজ করব।

কাজটা আসলে করার কোন কু-ইচ্ছা কখনই আমার ছিলনা। কিন্তু শিমুলিয় অনুরোধে এটা করতে বসলাম। তাছাড়া বেকার দ্যা গ্রেট হিসাবে একটা কাজ অন্তত পাওয়া গেল।

বিষয় হল
বউ বাটা বলসাবান নামের অতি ক্ষুদ্র গল্পের জন্ম কাহিনী।

সবকিছুর একটা সময় আছে। যার জীবনই পাকাপোক্ত হলনা তার আবার জীবনী কি? বউ বাটা বলসাবান কতটুকু গল্প হয়ে উঠতে পেরেছে এই প্রশ্নটারই কোন উত্তর আমার জানা হয়নি আর তার কীনা জন্ম কাহিনী! তবু লিখি। এইসব অবাধ লেখার স্বাধীনতা আছে বলেইতো ব্লগ।

হিসাব করলে দশ বছর হয়ে গেছে। এই মূহুর্তে ছাপানো কপিটা হাতের কাছে নেই। থাকলে সেই তারিখটা দেখে নিশ্চিত সময় বলতে পারতাম। সেইসময় সবে আমরা লেখা গুলে খাবার বয়েসে পৌছেছি। নিজেরাই লিখি, নিজেরাই খাই টাইপ অবস্থা। সিলেটে বেশ বড় একটা গ্রুপ আমাদের। আকাম কুকাম অনেক কিছুই করি আমরা। এর ফাঁকে কেউ নাটক করে, কেউ আবৃত্তি করে। আর সব বাঙালির কমন বদদোষ হিসাবে আমরা সাহিত্য চর্চ্চাও করি।

গৌরীশ দারুন প্রবন্ধ লিখত। তার পড়ার বিষয় ছিল, রাজা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ। অর্নার কাজকারবার ছিল বৈদেশী সাহিত্যে। রাজু লিখত স্যাটায়ার। রানা সিরিয়াস গল্প। আমি লিখার চেস্টা করতাম কবিতা। আমাদের গ্রুপের সিনিয়ার ছিলেন আরিফ জেবতিক, হাসান মোরশেদ, রিপন চৌধুরী, উজ্জল রায় এরা। এদের উপরে লীলেন ভাই, জফির সেতু, মোশতাক আহমাদ দীন, শামীম শাহান।

আমি যে কারো অনুবাদ করা কিছু পড়ে একদম আরাম পাইনা। কারণ অর্নার মত এত চমৎকার অনুবাদ আর কেউ করেনা। রানা মেহের যেদিন তার গল্প এই ব্লগে পোস্ট করবে সেদিন বুঝবেন আলবাব কোন শ্রেণীভুক্ত কলমচি। জেবতিক রাজীবের স্যাটায়ার হত অসাধারণ। মান্নাদা কবিতা। হাসান মোরশেদ, আরিফ জেবতিক কিংবা মাহবুব লীলেন ভাইদের ব্যাপারে কিছুকি আমারে বলতে হবে? মনে হয়না। এই এদের মাঝে সবচে অনুজ্জল কেউ থাকলে সে আমি। মূলত ফিলার রাইটার হিসাবে আমার উৎপত্তি। ম্যাগাজিনের শেষ পৃষ্ঠাটা যখন দেখা যায় খালি থেকে যাচ্ছে সেখানেই অপুর যায়গা হয়। তবে একটা গোয়াড় টাইপের কথা বলে এই অধ্যায় শেষ করা যায়, আমার বন্ধুরা সবাই লেখা শুরু করলে, অন্য কারো কিছু না পড়লেও চলবে আমার। আসলে অন্য লেখা পড়ার সমই পাবনা আমি।

আহারে বউ বাটার কথা বলতে এসে এসব কি বলছি?

সহবাস বের হল। খুব বড় সাহিত্য আন্দোলন হবে, বিপ্লব হবে এমন কোন উচ্চাশা থেকে কাজটা করা হয়নি। আসলে নিজেদের লেখার একটা উদার জমি তৈরির জন্যই সহবাস এর জন্ম। দ্বিতীয় সংখ্যা থেকে আমি কাজ শুরু করি। সেসময় বেশ কটা গল্প লিখে ফেলি। সবগুলোই এমন মাইক্রোস্কোপিক আকারের। যেগুলো ছাপা হয়েছে সেগুলো আছে এখনও। বাকিগুলো হারিয়ে গেছে।

গল্প লিখার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ পরিকল্পনা করে কখনই এগুইনি। লিখতে বসেছি, লেখা হয়ে গেছে এই টাইপ। সিরিয়াস হয়ে, নাক মুখ খিচিয়ে মাথার চুল ছিড়ে চিন্তা করতে করতে কোনকিছুই কোনদিন আমি লিখিনি। যে শব্দটা আমি চিনি, নিত্যদিন ব্যবহার করি সেই শব্দটা বসিয়ে নিজের কথাই মূলত বলি আমি।

বিভিন্ন মিতভাষণ আর বউ বাটা বলসাবান দু দিনের ব্যধানে লিখা। লিখেছিলাম তিনটা। বিভিন্ন মিতভাষণ আর অন্য আরেকটা নিয়ে আমি হাসান মোরশেদ আর আসিফ মনি বসেছিলাম ইউনাইটেড ক্লিনিকের বারান্দায়। মোরশেদের বাবা অসুস্থ ছিলেন তখন। আমাদের আরেক বন্ধুজন আসিফ মনি আর মোরশেদ মিতভাষণটা মেনে নিলেও অন্যটায় একটু কাজ করতে বল্লেন। ঠিক হল দুটোই সহবাস এ দেয়া হবে। কিন্তু বাসায় ফেরার সময় সেই গল্পটা হারিয়ে যায়। মোটর সাইকেল চালাতে চালাতে ঠিক করা নবম পাঠের বছর নামটা ছাড়া আর কিছুই মনে নাই এখন। বিভিন্ন মিতভাষন ছাপা হয় সহবাস এ।

গিয়াস ভাই এর সাথে কথা হয় একদিন। লেখালেখির খবর নিয়ে হালকা একটা ঝাড়ি দেন তিনি। একি সময়ে লিখা বউ বাটা জেট পাঠালাম তার কাছে। এরপর ভুলে গেলাম। বন্ধুসভা তখন নিয়মিত পড়া হত। আড্ডার নিয়মিত সদস্য। একদিন গল্পটার কথা মনে হল। বন্ধুসভার গোষ্টি উদ্ধার করলাম। আল্লাই জানে সেই গরম খবর পেলেন কীনা গিয়াস ভাই! পরের বুধবার বন্ধুসভায় ছাপা হল গল্পটা। তবে একটা শব্দ বদলে। আমি লিখেছিলাম জেট পাউডার, গিয়াসভাই সেটারে বলসাবান করে দিয়েছেন। পরে বল্লেন অনুপ্রাস প্রিয়তায় এই নাম বদল। খারাপ লাগেনি আমার। ভালই লাগলো।

এরপর নিরবতা। অনেকদিন পর। কয়েকমাস হবে হয়ত। ঢাকায় গেছি নির্বাসনে। গিয়াস ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম। সুমন্ত আসলাম আমারে বলে 'কনগ্রাচুলেশন'। বুঝলামনা কেন বলে। গিয়াস ভাই জিজ্ঞেস করেন কিরে তুই পত্রিকা দেখিসনি? না বলতেই হাতে থাকা কাঠ ফাইলটা এগিয়ে দেন। আমি ভ্যাবলা হয়ে যাই...

এবং পুস্তক
এরপর কত বছর গেল। সব ভুলে গেছি। গৃহপালিত টাইপ একটা ভাব এসে গেছে। অন্য আরও অনেক চিন্তা মাথায়। সন্তান এবং সন্তানবতীদের নিয়ে নিত্য সংসার।

গতবার আরিফ ভাই একটা ইউ আর এল দিলেন। বল্লেন, সারাদিনতো নেটেই থাকিস। একবার ঢুকে দেখিস। বেশ ভালই লাগল। একটা বদ অভ্যাস আছে আমার। নেটে নিজের নাম সার্চ দেয়া!!! এখানেও দিলাম। আর অবাক হয়ে দেখলাম হাসান মোরশেদ তার একটা লেখায় বউ বাটা বলসাবান এর কথা লিখেছেন। হৃদয় খোঁড়ে যে সবসময় বেদনা জাগে তা নয়। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাসের মত আরামদায়ক কিছুও মিলে যায়...

আবারও পাগলামিতে পায়। আবারও উচাটন। কিবোর্ডে বসলে রাগ করে পালিয়ে যাওয়া শব্দগুলো হঠাৎ হঠাৎ ধরা দেয় ইদানিং। তাই একুশের বই মেলায় জন্ম নেয় বউ বাটা বলসাবান নামের ক্ষুদ্র এক গ্রন্থ।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

বিকেলের রোদে দেখা মেয়ে