আমার বাবাই


সকাল আটটায় তুলি ডাক দেয়। চোখ টেনে মেলে দেখি সোঁনাজান মাথাটা মায়ের বুকে চেপে পা'টা তুলে দিয়েছেন বাপের উপর। আদর করতে ইচ্ছে করে। ঘুম মুখে এগিয়ে যাই। ফিরিয়ে দেয় তুলি। ইশারায় বলে ফিডারটা দাও... এটাই নিয়ম। রাজপুত্রকে ঘুমের ঘোরে না খাওয়ালে আর খাওয়ানো যাবেনা।

পা টিপে টিপে ডাইনিং রুমে যাই। কষ্ট করতে হয়না। আম্মা জেগে উঠেছেন আগেই। ... দাদু ভাইয়ের জন্য দুধ বানিয়ে দেন। কোনমতে মুখে পুরেদিই... তিনি টানেন ঘুমের ঘোরে। আমি আবারও তন্দ্রাচ্ছন্ন হই!

নয়টা তিরিশে আবারও ডাক পড়ে। ধুন্দুমারের শুরু। তাড়াহুড়োয় কাটে ১৫ মিনিট। পুত্র জেগে উঠেছেন ততনে। তিনি পরম মমতায় আচড়ে পাচড়ে মুখের দু এক যায়গায় জানান দিয়ে দেন। আমি শুধু আহাদিত হই আর বৌকে দেই তাড়া!

সোনাজান ইনিয়ে বিনিয়ে কত গল্প করতে চায়... আমার সময় নাই! বলি, বাবাসোনা দাদু তোমায় ডাকে। কিংবা দাদাভাইকে ডেকে বলি, ওরে একটু সামলাওতো। কেমন অভিমান নিয়ে সরে যায় সে। টোনা-টুনি বেরিয়ে পড়ি চুরি করে, ফাঁকি দেই বাবাইটারে...

ব্যাস্ত রাস্তায় ছুটে দুই চাকা... বৌকে নামিয়ে দিয়ে চল নিজের গন্তব্যে। শুরু হল যন্ত্রের জীবন।

নিউজপ্রিন্ট... কম্পিউটার... প্রেস... এ্যাসাইনমেন্ট... ফোন... প্রশংসা... হুমকি... মিটিং... মগ ভর্তি চা... প্রফেশনাল বজরং... খুনসুটি... সময় পেলে বৌকে ফোন... বাসায় লাইন লাগালে মায়ের বকুনি, আমাকে না দাও নিজের ছেলের জন্যতো কিছুটা সময় দিতে পারো! মাঝে মাঝে ছেলের হাতেই রিসিভার... আধো আধো বুলিতে... বাবা... আওওও... ভেতরে কেবল মুচড় লাগে। ফোন রেখে দিই। বৌকে ফোন দিই... যাবে? মন খারাপ করে বলবে, মিটিং করতে হবে, কিংবা ভিজিটর আসছে, নয়ত-রিসিপশনেই বলে দিল- ম্যাডামতো বোর্ডরুমে...

কোন কোন দিন হয়ত বৌই বল্ল চল বাসায় যাই... আমি তখন শহর থেকে ২০ কিলো দুরে নয়ত মাননীয় এসেছেন! তেনার গলাবাজী শুনছি!তবুও মাঝে মাঝে সময় করুনা করে... আমরা ছুটে যাই! সেকি উৎসব সেইসব দিনে!

ফিরতে ফিরতে সন্ধা। বৌ ফিরে স্থায়িভাবে, আমাকে আবারও ছুটতে হয়। প্রায়ই সন্ধায় বাবাই ঘুমাতে যায়। এমনটা হলে আর মিস্টি কথা কিংবা মুখের আশ্চর্য পবিত্র ঘ্রান নিতে পারিনা। মন খারাপ করে বেরিয়ে আসি। আর যদি ও জেগে থাকে... উফ... বর্নণা নাই...

তবে বেরুবার সময় জ্বালা... বলবে, বাবা যাইওনা, থাক আমার কাছে... ও মাগো কত আদর ঝরেগো... আমি কানে তুলো দিয়ে বেরিয়ে আসি।ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত।

--------------------------------------------------

আর পারছিনা লিখতে, মন খারাপ লাগছে, খুব বাজে মনে হচ্ছে নিজেকে।


লেখা হয়েছিল : ৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৭। সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

মিহিদানা