:: ওতটা পুতুপুতু নাই আমার যে পথের কান্নায় বুক ভাসাব স্বপনের জন্য ::


আমার অনুভূতি অতটা পুতুপুতু নয়। যতটা হলে পথের কান্নায় বুক ভাসানো যায়। বেশ শক্ত ঘোচের মানুষ আমি থেতলে যাওয়া মানুষের সামনে বসে তারই স্বজনকে প্রশ্ন করতে পারি, মাথায় যখন গুলি লাগে তখন উনার হাতে একটা পিস্তল ছিল, সেটার মালিক কে জানেন? ক্রসফায়ারে মরা মোশারফের মাকে বলি, আছে আপনার ছেলে হাসপাতালে... আচ্ছা ওর কোন ছবি আছে আপনার কাছে। ত্রস্ত হাতে মোশারফের বোন পাসপোর্ট সাইজের ছবিটা বের করে দিলে আমি খুব দ্রুত চলে আসতে পারি। যদিও আসার আগে বলে আসি, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে যান। ওসমানীর ইমার্জেন্সিতে...

একসময়, কোন এক সময় নাটকের ঘরে আমিও ছিলাম। আমিও ছিলাম নতুন কবিদের ভিড়ে দাড়ানো এক পথিক। সেসব আর আমাকে এখন অতটা টানেনা। যতটা টানে বাদশাহ ফখরুদ্দিন। আমি আর সে পাড়াতে যাইনা। বালিকাগুলোকে বেশ্যা বলিনা যদিও নটী বলতে দোষ কী? আমি আর কবিতার পথে হাটিনা। অতটা দম আমার নেই যতটা দম থাকলে আবুল হাসান হওয়া যায়।

আমিও হয়ত ছিলাম স্বপনের পরিচিত তালিকার কোন এক মানুষ। মাঝে মাঝে খবর পাঠালে কিংবা কবিসুলভ বৃষ্টিতে ভিজে মাথা ধরালে আদা দিয়ে মগ ভর্তি চা আমাকেও দিয়েছে মমতায়, স্বপন মাহালি। স্বপন মাহালি কী ছিল আমাদেরই একজন। জানিনা। এসব আর খোঁজ রাখিনা। আমাদের পাইলট (নাটকের মাল টানতেন ঠেলায়, তাই পাইলট) বলে, আমি নাকি মুন্সি হয়ে গেছি। আমি শুধু দাত কেলাই আর বলি, বয়স হইছে, বেদাতি কাম ছাড় মিয়া। কিয়ের নাটক আর কিয়ের কী। তারচেয়ে আমার লগে আস। দাদারে বইলা চাইনিজে ঢুকায়া দেই। রোজ বিরিয়ানী খাইতে পারবা... পাইলট আমারে পাত্তা না দিয়া আমার বৌয়ের লগে খাতির জমায়!!!

আমারও ছিল এক বৈরাগীমন! সেই টানে এখনও মাঝে মাঝে ছাড়ি ঘর। এখনও আমারে ডাকে কোনকালে ঘর ছাইড়া আউলা হয়ে যাওয়া কোন কোন মানুষ। তাই নাগরীক জীবনের অনুষঙ্গ ক্রিকেট, আর দেশপ্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠা বাংলাদেশ দলও আমায় ধরে রাখতে পারেনা। আমি উড়াল পাখি হয়ে ছুটে যাই যাদুকাটার তীরে। প্রেম জিনিসটা কঠিন বিষয়ে মন মজাই।

যাদুকাটার আশ্চর্য সুন্দর বালুচরে, হুহু বাতাসে দাড়িয়ে যখন আমি আর সংসারের কথা মনে করতে পারিনা তখনই বেজে ওঠে পকেটে। ধাতব শব্দে দুর হয়ে যায় মনের ভেতরের কুহু ডাক! চাররঙা স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বাবু ভাইয়ের চেহারা। ফোন তুলে আওয়াজ দিই, বস আমি আর নাই। আমার মৃত্য হয়েছে। তিন আর আমার গলায় গলা মেলাননা। শুধু বলেন একটা খারাপ খবর আছে। ধাতস্ত হয়ে বলি, কি ব্যাপার বস...

আমার ভেতর কেমন এক আকুলি পাকুলি করে ওঠে। ঠিক তখনই যদি দুর পাহাড়েরর মাতাল বাতাস না আসত তবে কবি শামস শামীম, যে কীনা আমার নিষ্ঠুর আমাকেই চিনে সে হয়ত অন্য কিছু আবিস্কার করে ফেলত। রাতের জলসায় শুনা সকল গান আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যায় অথবা আমিই তাদের আর ধরে রাখতে পারিনা! প্রেম জিনিসটা আমার কাছে সত্যি সত্যি কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়।

স্বপনকে দেখিনা অনেক দিন। অনেকদিন তার কোন খবর নেয়া হয়না। তবু এইটুকু জানি, সে আছে তার বনানীতে, তার মত করে সে তাড়ির নেশায় কাটায় নিজের রচিত সময়। বাবু ভাই কেনযে আমায় এই খবরটা জানাতে গেল! আমি হয়ত অনেকটা বছর স্বপন আছে তার পৃথিবীতে এই ভুল তথ্যে কাটাতে পারতাম নির্ভার সময়। বেঁচে থাকা মানুষতো আর স্মৃতি খুঁজে বেদনা জাগায়না।

Comments

Popular posts from this blog

বিহঙ্গ হয়েছে অন্ধ, বন্ধ করেছে পাখা

ম্লান আলোয় দেখা টুকরো শৈশব ০২

বিকেলের রোদে দেখা মেয়ে